Dangri: হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার পিছনে কী কাহিনী রয়েছে?
রেখা শর্মা
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নতুন বছরের শুরুর থেকেই রক্তাক্ত ভূস্বর্গ। ১ জানুয়ারি, বছরের প্রথম দিন রাজৌরির ডাংরি গ্রামে ৭ জন হিন্দুকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসবাদীরা। এরপর গ্রামবাসীরা সন্ত্রাসবাদীর বিরুদ্ধে লড়তে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার দাবি জানায়। ফলে আপার ডাংরি গ্রামের স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকের একটি দলকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সিআরপিএফ। তাঁদের মধ্যে ৪৭ বছরের এক মহিলা রেখা শর্মা জানিয়েছেন, ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈয়ের মত শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন তিনি। তিনি সংবাদমাধ্যমে শেয়ার করেছেন, হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার পিছনে তাঁর কী কাহিনী রয়েছে।
রেখা তাঁর বাড়ির আশেপাশের পরিস্থিতি দেখে উপত্যকায় জঙ্গি হামলা রুখতে হাতে তুলে নিয়েছেন বন্দুক। একদিকে পাকিস্তানে যেমন মহিলাদের সন্ত্রাসী হিসাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে ভারতে, মহিলাদের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাঁদের গ্রাম প্রতিরক্ষা কমিটির (ভিডিসি) সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। রেখা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ যেমন তাঁর শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, আমরা ডাংরির মহিলারাও পাকিস্তানের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।” তিনি আরও বলেন, “জঙ্গিরা আমার বাড়ি, আমার গ্রাম এবং আমার মাতৃভূমি রক্তাক্ত করেছে… আমরা এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেব।” তিনি জানিয়েছেন, ডাংরির কোন ঘটনা তাঁকে ভাবুক করে তুলেছিল ও কোন ঘটনার জন্যই জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবাদীদের আটকাতে রাজৌরিতে গ্রামবাসীরদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সিআরপিএফ
তিনি জানিয়েছেন, তাঁর প্রতিবেশী সুরজ দেবী কয়েক বছর আগে তাঁর স্বামীকে হারান, তাঁর দুই সন্তান দীপক শর্মা এবং প্রিন্স শর্মা ছিল। দুজনেই শিক্ষিত ও ভাল চাকরিও করতেন। কিন্তু দুজনেই চলতি বছর জঙ্গি হানায় নিহত হন। এরপর তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, এই মৃত্যুর বদলা তাঁকে নিতেই হবে। সদ্য সন্তানহারা মায়ের কান্না সহ্য করতে পারেননি রেখাদেবী। আর সেই থেকেই জঙ্গিদের শেষ করে দেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা নিয়েছেন ও হাতে বন্দুক তুলে নিয়েছেন রেখাদেবী।
রেখা শর্মা আসলে দিল্লির বাসিন্দা ছিলেন। এরপর ১৯৯৭ সালে বিয়ের পর ডাংরিতে আসেন। তাঁর স্বামী রণধীর কুমার শর্মা একজন ব্যবসায়ী। তাঁর বড় ছেলে স্নাতক শেষ করে ব্যবসা করছে, মেয়ে জম্মু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি করছে এবং ছোট ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। রেখার বাবা প্রয়াত কৃষ্ণ লাল দিল্লি পুলিশে কর্মরত ছিলেন।
রেখা আরও জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদী হামলায় দীপক ও প্রিন্সসহ সাতজন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার পর আবারও অস্ত্রের চাহিদা বাড়ছে। তিনি নিজে বন্দুক চালানো শিখবেই, অন্যদিকে গ্রামের অন্যান্য মহিলাদেরকেও অস্ত্র ধরতে এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রশিক্ষণ নিতে রাজি করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আপার ডাংরি গ্রামে সন্ত্রাসী হামলার পর, জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট-গভর্নর মনোজ সিনহা গ্রামবাসীদের গ্রাম প্রতিরক্ষা গার্ড নামে ডোডা-টাইপ গ্রাম প্রতিরক্ষা কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন। সূত্রের খবর অনুযায়ী, গ্রাম প্রতিরক্ষা কমিটির এসপিওদের প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা ও প্রতিটি ভিডিজি প্রতি মাসে ৪০০০ টাকা পাবে। যে ব্যক্তি ভিডিজির প্রধান হবেন তাঁকে প্রতি মাসে ৪৫০০ টাকা দেওয়া হবে।