RBI: এই সিদ্ধান্তের ফলে মুদ্রাস্ফীতি কমবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা...
২০০০ টাকার নোট প্রত্যাহারে কী প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে?
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মার্কিন প্রশাসনের সরকারি ওয়েবসাইটে সেদেশের মুদ্রা, অর্থাৎ মার্কিন ডলার নিয়ে একটি পৃথক পেজ রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে সাতটি ভিন্ন মূল্যের নোট পাওয়া যায়, সর্বোচ্চ ১০০ ডলার। আরও বলা হয়েছে, ১০ হাজার মার্কিন ডলারের নোট বর্তমানে লেনদেনের ক্ষেত্রে বৈধ থাকলেও, দীর্ঘদিন আগে তা ছাপা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও, বর্তমানে কেউ তা ব্যবহার করেন না।
গত ১৯ মে, ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একটি নির্দেশিকার মাধ্যমে ২০০০ টাকার নোট (2000 Bank Notes) প্রত্যাহার করার ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জনসাধারণের উদ্দেশে জানিয়ে দেয়, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২০০০ টাকার নোট ব্যাঙ্কে গিয়ে বদলে নিতে। যদিও, স্পষ্টভাবে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক এও জানিয়েছে, সময়সীমার পরেও বৈধ থাকবে ২০০০ টাকার নোট। অর্থাৎ, সেপ্টেম্বরের পরেও ২০০০ টাকার নোটে লেনদেন করা হলে, তা সমান প্রযোজ্য হবে। শুক্রবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই ঘোষণার পর থেকেই অনেকে এই নির্দেশিকার সঙ্গে ২০১৮ সালের নোটবন্দির তুলনা টেনে আনছেন। যা, একেবারেই ভুল। কারণ, নোটবন্দির সময় পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার বৈধতাও প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু, ২০০০ টাকার ক্ষেত্রে তা হয়নি। প্রকাশিত নির্দেশিকায় একাধিকবার উল্লেখ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, এখনই ২০০০ টাকার নোটের বৈধতা খারিজ করা হচ্ছে না।
নির্দেশিকার অর্থ, জনমানসকে সচেতন করা বা অনুরোধ করা, যাতে তারা ২০০০ টাকার নোট (2000 Bank Notes) দিয়ে লেনদেন করা থেকে বিরত থাকেন। একইসঙ্গে জনসাধারণকে পরামর্শ, তারা যেন ব্যাঙ্কে গিয়ে ২০০০ টাকার নোট জমা দিয়ে তার বদলে সম অর্থের অন্য মূল্যের নোট নিয়ে নেন। শীর্ষ ব্যাঙ্ক আরও জানিয়েছে, তারা ‘ক্লিন নোট পলিসি’ বা পরিষ্কার নোট নীতি অবলম্বন করেছেন। ‘ক্লিন নোট পলিসি’ অনুযায়ী, একটি নোটের পরিচ্ছন্নতার মেয়াদ চার থেকে পাঁচ বছর। ২০১৮-১৯ সালের পর থেকেই ২০০০ টাকার নোট ছাপা বন্ধ করে দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। যার অর্থ, বাজারে চালু নোটগুলো ৪-৫ বছরের পুরনো। অর্থাৎ, নোটগুলো তাদের কার্য মেয়াদের শেষ সীমায় উপস্থিত হয়েছে। সাধারণত ‘সয়েলড নোট’ বা অপরিষ্কার বা মলিন নোট হলে, তা আরবিআই ফেরত নিয়ে নেয়। বদলে একই মূল্যের নতুন নোট বাজারে ছেড়ে দেয়। তবে, এক্ষেত্রে তফাত একটাই। ২০০০ টাকা আরবিআইয়ের কাছে গেলে, তার বদলে নতুন ২০০০ টাকার নোট ছাড়া হবে না। এটাই প্রত্যাহার।
ব্যাঙ্ক নোট (2000 Bank Notes) ও মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে একটা সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বাজারে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি নগদ চালু হলে, তার জেরে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ে। মুদ্রাস্ফীতির একটা বড় কারণ হল, বেশি পরিমাণে নগদ মজুত। একটা সময় ছিল, যখন ভারতে বিপুল জাল নোট ছড়িয়ে পড়েছিল। একটা সময় ছিল, যখন ভারতে বেশি মূল্যের নোটের জালনোট ছড়িয়ে দিতে পাকিস্তানের অশুভ পরিকল্পনা সফল হয়েছিল। যার জেরে ভারতে হু-হু করে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গিয়েছিল। কারণ, নোট আসল না নকল — সাধারণ মানুষের পক্ষে পরখ বা যাচাই করার ক্ষমতা সীমিত। ফলত, আরবিআইয়ের হিসেবের বাইরে বাজারে প্রচুর নোট ছড়িয়ে গিয়েছিল। তাতে, সকলের হাতে প্রয়োজনের তুলনায় টাকা বেশি চলে এসেছিল। এর ফলে, জনমানসে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা অযাচিতভাবে বৃদ্ধি পায়। টাকার মূল্য হ্রাস পায়। ভেঙে পড়ে অর্থনীতি। বর্তমান সরকার শক্ত হাতে জালনোট সমস্যার মোকাবিলা করেছে ও করে চলেছে। শত্রুরা এখনও দেশে জালনোট ঢোকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, বর্তমান শাসক দলের কঠোর নীতি ও দিশার জেরে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না।
মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সময়ে-সময়ে ব্যাঙ্ক রেট বৃদ্ধির পথে হাঁটতে হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। এর ফলে, ব্যাঙ্ক-ঋণ আরও মহার্ঘ হয়ে পড়ে। কারণ, সুদ বেশি দিতে হয়। ফলত, মানুষের চাহিদা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসে। যদিও, এর আরেকটা ক্ষতির দিকও রয়েছে। সুদের হার বাড়লে, ক্ষতি হয় ব্যবসাতেও। আর ব্যবসা মন্দা গেলে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলে অর্থনীতির ওপর। আর অর্থনীতির চাকা ধীর গতিতে গড়ালে, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ধাক্কা খায়। এখন ব্যাঙ্ক রেটের হার বৃদ্ধি না করেও কি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব? বিশেষজ্ঞরা বলছেন সম্ভব। সেক্ষেত্রে, বাজার থেকে অতিরিক্ত নগদ প্রত্যাহার করলে তা আখেরে ফল দিতে পারে। তাঁদের মতে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ২০০০ টাকার নোট (2000 Bank Notes) প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এই প্রয়াসের লক্ষ্যে হতে পারে।