Integral Humanism: মৌলিক অধিকার নিয়ে কী বলতেন? একাত্ম মানববাদের প্রণেতা দীনদয়াল উপাধ্যায়
একাত্ম মানববাদের প্রণেতা দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ ( ফাইল ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আজ পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের (Deendayal Upadhayay) জন্মদিন। একাধারে তিনি ছিলেন সুলেখক, দার্শনিক অন্যদিকে রাজনীতিবিদ। একাত্ম মানববাদের প্রণেতা পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্ম ১৯১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। একাত্ম মানববাদের মাধ্যমে তিনি একটি বিকল্প রাজনীতির সন্ধান দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর রচিত একাত্ম মানববাদের মাধ্যমেই তিনি ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের মধ্যে মেলবন্ধন স্থাপন করতে পেরেছিলেন। পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় বলতেন, ‘‘ভারতবর্ষে জাতীয়তাবোধের ভিত্তি হল ভারত মাতা, যদি মাতা শব্দটা সরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে শুধু ভারত, মাটির টুকরো হয়েই পড়ে থাকবে।’’
পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের (Deendayal Upadhayay) মতে, ‘‘প্রতিটি মানুষের সম্পূর্ণ গঠন হয় চারটি উপাদানের ভিত্তিতে এগুলি হল শরীর, মন, বুদ্ধি এবং আত্মা। এই চারটি উপাদানের সঙ্গে ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ এই চারটি বিষয় সম্পর্কিত। ধর্ম হল ভিত্তি এবং মোক্ষ হল সর্বোচ্চ প্রাপ্তি।’’ প্রসঙ্গত, অন্যান্য মতাদর্শ যেখানে শুধুমাত্র মন এবং শরীরের বিভিন্ন চাহিদা পূরণের কথা বলে সেখানে একাত্মমানববাদে ধর্ম এবং মোক্ষেরও ধারণা দিয়েছেন তিনি।
দীনদয়াল উপাধ্যায় (Deendayal Upadhayay) একাত্ম মানববাদের মাধ্যমে সমাজব্যবস্থায় সকলের সমান অধিকার এবং সমান সুযোগ-সুবিধার কথা বলেছেন। সামাজিক বিচার, শিক্ষা এসব কিছুকেই তিনি মৌলিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, ‘‘একটি সমাজের ও একটি দেশের অগ্রগতি তখনই সম্ভব যখন প্রত্যেকটি নাগরিক সুস্থ থাকেন।’’ প্রসঙ্গত ভারতীয় সংবিধানের পঞ্চম অধ্যায়ের ১৪ থেকে ৩৫ নম্বর ধারা পর্যন্ত মৌলিক অধিকারের কথা বলা রয়েছে। এর মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার- এই সমস্ত কিছুই। দীনদয়াল উপাধ্যায়ের মতে, ‘‘জীবনের অধিকার ততক্ষণ পর্যন্ত অসম্পূর্ণ থেকে যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত না সুস্থ জীবন যাপনের সুযোগ পাওয়া যায়।’’
পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় (Deendayal Upadhayay) শৈশবকালেই পিতৃমাতৃহীন হন। তাঁর পৈতৃক ভিটে উত্তরপ্রদেশের মথুরাতে হলেও স্কুলজীবনের বড় অংশ অতিবাহিত হয়েছিল রাজস্থানে। জাতীয়তাবাদী এই দেশনেতা অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন নিজের ছাত্রজীবনে। রাজস্থানের সিকার জেলা থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন এবং প্রথমস্থান অধিকার করেন। তৎকালীন সিকারের মহারাজা কল্যাণ সিংয়ের কাছ থেকে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন। সনাতন ধর্ম কলেজে স্নাতক স্তরে পড়াকালীন তাঁর বন্ধু বলবন্ত মহাশব্দের হাত ধরে ১৯৩৭ সালে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪২ সালে দেশ ও সমাজের কাজকে নিজের জীবনব্রত করার লক্ষ্যে সঙ্ঘের প্রচারক হন। ১৯৫১ সালে ভারতীয় জনসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার পরে তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি হন।
ধর্ম সম্পর্কে তিনি বলতেন, ‘‘পাশ্চাত্যের রিলিজিয়ন এবং ভারতের ধর্ম এক নয়।’’ অর্থাৎ ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে ধর্ম হল ধর্ম, তার আলাদা কোনও নাম নেই, যেমন- ছাত্র ধর্ম, ক্ষত্রিয় ধর্ম, পিতৃ ধর্ম, মাতৃ ধর্ম এসব কিছুই ধর্মের মধ্যে পড়ে। তিনি আরও বলতেন, ‘‘ধর্ম হচ্ছে ব্যাপক এবং বিস্তৃত। সমাজকে সংগঠিত করতে ধর্ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’ নীতিনিষ্ঠ এবং মূল্যবোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস রাখতেন পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়। তিনি মনে করতেন, সুযোগ সন্ধানী এবং সুবিধার রাজনীতি, দিনের পর দিন চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের রাজনীতির ওপরেই বিশ্বাসটা উঠে যায়। ১৯৬৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন তিনি।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।