‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ অপরাধ কি না তা নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের...
দিল্লি হাইকোর্ট (ফাইল ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বৈবাহিক ধর্ষণ (Marital Rape) কি অপরাধ? নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারল না দিল্লি হাইকোর্ট (Delhi High Court)। এই বিষয় নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। একের পর এক মামলা উঠেছে আদালতে। তবু সুরাহা হয়নি। এবার দিল্লি হাইকোর্টও নির্দিষ্ট কোনও রায় দিতে পারল না। দ্বিধাবিভক্ত রায় দিল আদালত। এই বিষয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি রাজীব শকধের ও সি হরিশংকর আলাদা মত দিলেন। তবে আবেদনকারী সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) আবেদন করতে পারেন বলেও জানিয়েছেন দুই বিচারপতি।
‘বৈবাহিক ধর্ষণ’–ও অপরাধ। তাকে অপরাধের তকম দেওয়া হোক। এই দাবি জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে একের পর এক পিটিশন জমা পড়েছিল। ২০১৫ সালে ধর্ষণ আইনের একটি ব্যতিক্রমী ধারাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রথম পিটিশনটি জমা পড়েছিল। ওই ধারায় প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রীকে যৌন সংসর্গে বাধ্য করার বিষয়টিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, স্ত্রীর বয়স ১৮ বছরের বেশি হলে তাঁকে যৌন সংসর্গে বাধ্য করতে পারেন স্বামী। এই ধারার বিরুদ্ধেই জমা পড়েছিল পিটিশন।
সেই মামলার শুনানিতেই ভিন্ন মত পোষণ করলেন বিচারপতি রাজীব শাকধের এবং বিচারপতি হরি শঙ্কর। বিচারপতি শাকধেরের মতে এই ব্যতিক্রম আসলে সংবিধানের ১৪, ১৯, ২১ ধারার (সাম্যের অধিকার, বাক এবং ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা, জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সুরক্ষা) বিরোধিতা করে। শাকধের স্পষ্টই জানান, এই বিষয়ে তিনি সহ-বিচারপতি হরি শঙ্করের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না। অন্য বিচারপতি সি হরিশংকর (C Harishanker) জানালেন, ধর্ষণ আইনের ব্যতিক্রমী ধারাটি সংবিধানের পরিপন্থী নয় কোনওভাবেই। কারণ, স্বামী-স্ত্রীর মতপার্থক্যের কারণেই একমাত্র এই ধরনের অভিযোগ উঠে থাকে। যাকে কখনওই সেই অর্থে অপরাধ বলে গণ্য করা ঠিক নয়।
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে ধর্ষণের প্রসঙ্গ টানা যায় কিনা তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে দেশে। অনেকের মতে বিষয়টি পশ্চিমি সংস্কৃতি থেকে আমদানি করা হয়েছে। এই বিষয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট কেন্দ্রের অবস্থান জানাতে চেয়েছিল। দিল্লি হাইকোর্ট কেন্দ্রকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে বলেছিল, তার মধ্যে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ নিয়ে তাদের মত জানাতে। যদিও কেন্দ্র এখনও পর্যন্ত তাদের মত দেয়নি। এ প্রসঙ্গে আদালত জানায়, ‘যদি কেন্দ্র মনে করে অনির্দিষ্টকাল আদালত এই শুনানি স্থগিত রাখবে, তাহলে তা হবে না।’ জবাবে কেন্দ্রের হয়ে সওয়াল করা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, এই বিষয়ে সব রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। নয়তো নাগরিকদের সামাজিক জীবন ব্যাহত হতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এপ্রসঙ্গে হলফনামা দিয়ে কেন্দ্র জানিয়েছিল, ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’–কে তারা অপরাধ বলতে রাজি নয়। এতে বিপাকে পড়তে পারে ‘বিবাহ প্রতিষ্ঠান’। এই আইন আনা হলে অনেক স্ত্রীই তাকে অস্ত্র করে স্বামীকে হেনস্থা করতে পারে।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত একটি মামলায় বৈবাহিক ধর্ষণ প্রসঙ্গ ওঠে কেরল হাইকোর্টে। ওই মামলায় আদালত জানায়, বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলায় বৈবাহিক ধর্ষণ যথেষ্ট যুক্তিগ্রাহ্য কারণ। কেরল হাইকোর্টের বিচারপতিরা জানান, ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ দণ্ডণীয় অপরাধ নয় বটে তবে শরীর হোক বা আত্মপরিচয়, স্ত্রীর কোনও কিছুর উপরই কর্তৃত্ব চালাতে পারেন না একজন স্বামী। আদালত আরও বলে, স্ত্রীর শরীরকে স্বামী যদি সম্পত্তি ভাবেন এবং জোর করে সঙ্গমে লিপ্ত হন, তাহলে সেটি বৈবাহিক ধর্ষণই।