ক্রাইম সিরিজ দেখেই খুনের পরিকল্পনা।
দিল্লিতে লিভ-ইন-পার্টনারকে খুনের ঘটনায় ধৃত।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ফ্রিজে বান্ধবীর টুকরো দেহ। সেই ঘরেই নতুন বান্ধবীর সঙ্গে প্রেমালাপ চালাত আফতাব পুনাওয়লা। একই সঙ্গে খুন করার পর সেই বান্ধবীকে জীবিত রাখতে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে চলত বাক্যালাপ। ব্যবহার করা হত শ্রদ্ধার ক্রেডিট কার্ডও। মঙ্গলবারই, দিল্লি পুলিশ এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা জানায়। লিভ ইনে থাকা হিন্দু বান্ধবীর দেহ ৩৫ টুকরো করে জঙ্গলে ফেলে দেয় এক মুসলিম যুবক। লাভ জিহাদ, সাইকো-কিলিং কোনও তকমাই যেন এই নৃশংসতার পিছনে খাটে না।
পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় আফতাব জানিয়েছে শ্রদ্ধাকে খুনের পর তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে লগইন করেছিল সে। শ্রদ্ধা যে এখনও জীবিত তা প্রমাণ করার জন্য সঙ্গীর অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁর বন্ধুদের ইনস্টাগ্রামে মেসেজ করত নিয়মিত। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান পরিকল্পনা ছাড়া এই নৃশংস খুন কোনওভাবেই সম্ভব নয়। জানা গিয়েছে, শ্রদ্ধাকে খুন করার পর তাঁর ক্রেডিট কার্ড বিলের টাকাও দিয়েছিল আফতাব। বিল না মেটানোয় কোনও ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী সংস্থা যাতে শ্রদ্ধার মুম্বইয়ের ঠিকানায় যোগাযোগ না করে, তা নিশ্চিত করতেই এই কাজ করেছিল আফতাব।
২০১৯ সালে ডেটিং অ্যাপের সাহায্যে শ্রদ্ধার সঙ্গে আলাপ হয় আফতাবের। সেখান থেকেই সম্পর্ক। শ্রদ্ধা ও আফতাব দুজনেই মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার ভাসাইয়ের বাসিন্দা। ছেলে ভিন্ন ধর্মের তাই সম্পর্কের স্বীকৃতি দেয়নি শ্রদ্ধার পরিবার। বাড়ি ছেড়ে প্রেমিকের হাত ধরে বেড়িয়ে আসে শ্রদ্ধা। পরিণতি তখনও ছিল অজানা। দুবছর কেটে যায় একসঙ্গে। বিয়ের জন্য শ্রদ্ধা চাপ দেয় আফতাবকে। তখন থেকেই তিক্ততার শুরু। অবিশ্বাস এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে একে অপরকে ফোন করে হোয়াটস্যাপে জিপিএস লোকেশন ও আশেপাশের ছবি চেয়ে পাঠাত আফতাব-শ্রদ্ধা। সম্পর্ক বিষিয়ে যাচ্ছে দেখে ভাল সময় কাটাতে ও ভুল বোঝবুঝি মিটিয়ে নিতে এপ্রিল মাসে হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে বেড়াতেও গিয়েছিল তারা। সেখান থেকে ফিরে এসে দিল্লিতে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে ওই যুগল। সেই ফ্ল্যাটেই খুন হয় শ্রদ্ধা। হয়ত বা হিমাচলেই হাড়হিম করা খুনের পরিকল্পনা করে আফতাব। পুলিশের অনুমান ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা ছাড়া এরকমভাবে খুন করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে হিন্দু লিভ-ইন পার্টনারকে খুন করে দেহ ৩৫ টুকরো করল মুসলিম যুবক
শ্রদ্ধাকে খুন করে তাঁর দেহাবশেষ রেফ্রিজেটরে রেখে সংরক্ষণের পাশাপাশি অন্য আরেক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল আফতাব। শুধু তাই নয় যে বাড়ির রেফ্রিজেটরে শ্রদ্ধার দেহের অংশ সংরক্ষিত ছিল, নিজের প্রেমিকাকে সেই বাড়িতে এনেও তাঁর সঙ্গে সময় কাটিয়েছে আফতাব। পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইলে ডেটিং অ্যাপ ইনস্টল করে তাঁর মাধ্যমে নতুন এক মহিলার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল আফতাবের। এই অ্যাপের মধ্য দিয়েই শ্রদ্ধার সঙ্গেও সম্পর্ক হয় আফতাবের।
দক্ষিণ দিল্লির অতিরিক্ত ডিসিপি অঙ্কিত চৌহান জানিয়েছেন, গত তিন বছর আগে এক সঙ্গে থাকতে শুরু করেন আফতাব এবং শ্রদ্ধা। এর পরেই মুম্বই ছেড়ে দিল্লি চলে আসেন। এর পরেই বিয়ের জন্য আফতাবকে চাপ দিতে শুরু করেন শ্রদ্ধা। সেই নিয়ে রোজই চলত ঝামেলা। চৌহানের কথায়, ‘‘১৮ মে দু’জনের ঝামেলা চরমে ওঠে। রাগের বশে শ্রদ্ধার গলা টিপে খুন করেন আফতাব। এর পর মেয়েটির দেহ টুকরো টুকরো করে ছাতারপুর জঙ্গল এলাকায় ফেলে আসেন।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রদ্ধার দেহের ৩৫টি টুকরো করেছিলেন আফতাব। এর পর একটি ফ্রিজ কিনে আনেন তিনি। সেখানেই ভরে রাখেন দেহের টুকরো। পরের ১৮ দিন ধরে রাতের অন্ধকারে দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে দেহের টুকরো ফেলে আসতেন আফতাব বলে অভিযোগ। শ্রদ্ধার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার গ্রেফতার হন আফতাব। তাঁকে ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। ধৃতকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, অপরাধ নিয়ে সিরিজ ‘ডেক্সটার’ দেখতেন তিনি। আমেরিকার এই জনপ্রিয় সিরিজ ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত চলেছিল। সিরিজের নায়ক ডেক্সটার মর্গান পুলিশের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ছিলেন। অবসর সময়ে খুন করে বেড়াতেন। ওই সিরিজ দেখেই ছক কষেছিলেন আফতাব।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।