লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা, নজরদারি চালাতে ড্রোনের জুড়ি নেই, আধুনিক বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সামগ্রী ড্রোন
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মনুষ্যবিহীন আকাশযান হল ড্রোন। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধে ড্রোন প্রযুক্তি (Drone Technology) ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, নজরদারি চালানোর কাজে এর জুড়ি নেই। সাম্প্রতিক সময়ে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলিতে আক্রমণ শানাতে হুথি জঙ্গিগোষ্ঠী ব্যবহার করে ড্রোন। ড্রোন হামলা, তাই আজ অতি পরিচিত শব্দ হয়ে উঠেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা গিয়েছে। অন্যদিকে, তুর্কি সেনা আরবের বিরুদ্ধেও সফলভাবে ড্রোন ব্যবহার করেছে। অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও নিরাপত্তার কাজে ড্রোন ব্যবহার করা হয়। দেশে মোদি জমানায় বাড়ছে ড্রোনের উৎপাদনও। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যেই কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ড্রোন উৎপাদন করতে সক্ষম হবে আমাদের দেশ। আজকে আমাদের এই প্রতিবেদনে ড্রোনের উৎপত্তি, তার সামরিক প্রয়োগ, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ড্রোনের ব্যবহার এই সমস্ত কিছু নিয়েই আলোচনা করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিগত ২০ বছরেই ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগেই বলা হয়েছে, ড্রোন হল মনুষ্যবিহীন আকাশ যান (Drone Technology)। যেটি কোনও মানুষকে অপারেট করতে হয় না। প্রযুক্তি ও সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে তা উড়তে পারে। বহু দূর থেকে পরিচালিত হতে পারে। আবার যে কোনও প্রাণঘাতী বিস্ফোরক ও ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতেও সক্ষম হল ড্রোন। নানা ক্ষেত্রে ড্রোনের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় যথা— কৃষি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, খনিতে কাজ, আবহাওয়া, জমি জরিপ, নির্মাণ, এই সমস্ত ক্ষেত্রেই ড্রোনের উল্লেখযোগ্য অসামরিক ব্যবহার রয়েছে। তাই একথা বলাই যায় ড্রোনের ব্যবহার দুই ধরনের সামরিক ও অসামরিক। সশস্ত্র ড্রোন ও নিরস্ত্র ড্রোন। সাধারণভাবে নিরস্ত্র ড্রোনগুলি নজরদারি চালানোর কাজে ব্যবহার করা হয় অন্যদিকে সশস্ত্র ড্রোন প্রাণঘাতী হামলাও চালাতে সক্ষম।
বিংশ শতাব্দীর একেবারে শুরুর দিকে সামরিক কাজে প্রথম ড্রোনের ব্যাপকভাবে বিকাশ শুরু হয়। তবে প্রযুক্তির কারণে সে সময় ড্রোনের ব্যবহারে ব্যাপক বাধা আসে তবুও বিভিন্ন কাজে ড্রোনের জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। ইয়েমেন, পাকিস্তান, সোমালিয়ার মত বেশ কতগুলি দেশ যুদ্ধক্ষেত্রের (Drone Technology) বাইরেও শুধুমাত্র গোপন অভিযানে চালাতে সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহার করেছিল। ২০১৯ সালে ড্রোন নিয়ে একটি গবেষণা হয় এবং এটি করে নিউইয়র্কের বার্ড কলেজ। 'সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ দ্য ড্রোন'-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ১০০টিরও বেশি দেশ সামরিক কাজে ড্রোন ব্যবহার করে এবং সারা বিশ্বে বিভিন্ন সামরিক কাজে বর্তমানে ৩০,০০০-এরও বেশি উন্নত মানের ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে সামরিক কাজে ১৭১ ধরনের ড্রোন ব্যবহার করা হয়। ৫৮টি দেশে রয়েছে ২৬৮টি ড্রোন তৈরির ইউনিট। অর্থাৎ, এখান থেকে ড্রোন উৎপাদন হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ড্রোনের মডেলও বদলেছে, বেড়েছে তার ক্ষমতা এবং আকার। অনেক বেশি উচ্চতায় আজ তা উড়তে সক্ষম। গবেষকরা বলছেন, ড্রোনের ব্যবহার কমছেই না, বরং পৃথিবীব্যাপী ক্রমশ তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম ড্রোন উৎপাদনকারী ও বিক্রেতা দেশ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইজরায়েল এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে চিন। এর পাশাপাশি, তুরস্ক ও ইরানের মতো দেশগুলিও ড্রোন উৎপাদনে পিছিয়ে নেই। গবেষণা তে দেখা যাচ্ছে যে ভারত এবং ব্রিটেন সারা পৃথিবীর মধ্যে ড্রোনের সবথেকে বড় আমদানিকারক দেশ।
যে কোনও দেশে বিদ্রোহ হোক অথবা দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ, সামরিক ড্রোনের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড্রোন ব্যবহারের বৃদ্ধির দুটি দিক রয়েছে। সরবরাহের দিক এবং অন্যটি হচ্ছে চাহিদার দিক। ড্রোনের ব্যাপক চাহিদা যেমন বাড়ছে সেই রকমের রপ্তানিকারক দেশগুলি ভালো মতোই সরবরাহ করতে পারছে। কারণ ড্রোন তৈরি করা তাদের পক্ষে বেশ লাভজনক হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে উৎপাদনের ক্ষমতাও অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। কম সময়ে অনেক বেশি ড্রোন উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। সারা পৃথিবীর দিকে নজর দিলে আমরা দেখতে পাবো যে, দুটি দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ, কোনও দেশের ওপর সন্ত্রাসবাদী হামলা বা দেশের আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ— এই সমস্ত কিছুতে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে।
আমাদের নিজেদের দেশের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো যে, চিন এবং ভারতের মধ্যে যে ধরনের সীমান্ত বিবাদ চলছে, সেখানে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ড্রোন বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান থেকে জঙ্গি অনুপ্রবেশ সমেত সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার কাজ চলে। তাই সীমান্তে নিখুঁত নিশানা করতে ভারতের সেনারা ড্রোনের ব্যবহার করেই থাকে। এছাড়াও বিশেষ করে পাঞ্জাবে এবং জম্মু-কাশ্মীরে অস্ত্র গোলাবারুদ, মাদক কারবারের কাজে সন্ত্রাসবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ড্রোন ব্যবহার করে। এমন খবর প্রায় শিরোনামে আসে। আগেই বলা হয়েছে, ভারত ড্রোনের অন্যতম বড় আমদানিকারক। সাধারণভাবে ভারতে বেশিরভাগ ড্রোন আমদানি করা হয় ইজরায়েল থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৯০ সাল থেকেই ভারতে সামরিক কাজে ড্রোন গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে উঠে এসেছে। শুরুতে ডিআরডিও মানববিহীন এই যানকে পরিচালিত করত। বর্তমানে মোদি জমানায় ভারতে দেশীয় প্রযুক্তিতে ড্রোন তৈরিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দৃষ্টিভঙ্গি এক্ষেত্রে খুব পরিষ্কার। তিনি ভারতীয় সংস্থাগুলির ওপর ভরসা করেন ড্রোন উৎপাদনে। ড্রোন ইকোসিস্টেম আগামী দিনে ভারতবর্ষে আরও উন্নত হতে চলেছে এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০২১ সালের অগাস্ট মাসে 'ড্রোন রুলস' আনে মোদি সরকার। সেখানে দেশীয় সংস্থাগুলিকে ড্রোন প্রযুক্তির কাজে প্রোমোট করার কথা বলা হয়। ২০২১-এর পরবর্তী সময় থেকেই দেখা যাচ্ছে ভারতে ড্রোন নির্মাতা (Drone Technology) সংস্থাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ড্রোন নির্মাতা সংস্থাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ideaForge, Aarav Unmanned System (AUS), Asteria aerospace, IOTech, এবং Hubbal Fly. আগামীদিনে ড্রোনের দুনিয়ায় ভারত শীর্ষস্থানীয় দেশ হতে চলেছে একথা বলাই যায়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।