প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টার কথায় উঠে এল অগ্নিযুগের বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সান্যালের কথা...
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গত ৩ এপ্রিল ছিল বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সান্যালের জন্মদিন। ঠিক এই সময়েই ফের একবার এই অগ্নিযুগের বিপ্লবী আলোচনায় উঠে এলেন তাঁর নাতির কারণে। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য তথা ঐতিহাসিক সঞ্জীব সান্যাল (Sanjeev Sanyal) স্মরণ করলেন তাঁর দাদু তথা বাংলার বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সান্যালকে। প্রসঙ্গত, শচীন্দ্রনাথ সান্যাল ১৯০৭ সালে কলকাতায় অনুশীলন সমিতিতে যোগ দেন। শচীন্দ্রনাথ সান্যাল ১৯০৯ সালে বারাণসীতে 'ইয়ং ম্যান অ্যাসোসিয়েশন' নামে এক বিপ্লবী দল গঠন করেন। তিনি ছিলেন রাসবিহারী বসুর অত্য়ন্ত ঘনিষ্ঠ। রাসবিহারী বসু তাঁকে লাট্টু নামে ডাকতেন বলে জানা যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাসবিহারী বসু সেনাবিদ্রোহের উদ্যোগ নেন। জানা যায় এই প্রচেষ্টার অন্যতম সহযোগী ছিলেন শচীন্দ্রনাথ সান্যাল। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন সঞ্জীব সান্যাল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সম্মেলন-২০২৪ অনুষ্ঠানে সঞ্জীব সান্যাল আলোচনা করেন শচীন্দ্রনাথ সান্যাল এর লেখা বই ‘Bandi Jeevan: A Life in Captivity’ এর ওপর। এ সংক্রান্ত আলোচনাটি চলতি সপ্তাহেই একটি ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা হয়। বর্তমানে ওই বইটি ইংরেজিতেও অনুবাদ করা হয়েছে।
সঞ্জীব সান্যালের (Sanjeev Sanyal) বক্তব্যে উঠে আসে ১৯১২ সালের সাড়া জাগানো বৈপ্লবিক ঘটনা লর্ড হার্ডিঞ্জের ওপর বোমা নিক্ষেপ মামলা। প্রসঙ্গত, রাসবিহারী বসুর নেওয়া এই উদ্যোগে নদীয়ার বসন্ত বিশ্বাস বোমা ছুড়ে ছিলেন বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ এর ওপরে। রাসবিহারী বসু চাকরি করতেন দেরাদুনের বন বিভাগে, সেখানে বসেই এই পরিকল্পনা রচনা করেন তিনি। বড়লাটের ওপর বোমা নিক্ষেপের ঘটনার পরে অতিসক্রিয় হয়েও ব্রিটিশ পুলিশ টিকি খুঁজে পায়নি রাসবিহারী বসুর। সঞ্জীব সান্যালের মতে, সে সময়ে ব্রিটিশ পুলিশের নজরে আসে অনুশীলন সমিতির কার্যকলাপও। তৎক্ষণাৎ শচীন্দ্রনাথ সান্যাল অনুশীলন সমিতির নাম বদল করেন। এমনটাই বলেছেন সঞ্জীব বাবু।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখার সময় সঞ্জীব সান্যাল (Sanjeev Sanyal) আরও জানিয়েছেন, বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জের ওপর বোম পড়েছিল চাঁদনি চকে। যা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের খুবই কাছে। বাংলার বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সান্যাল হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মিও তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ জারি রাখতে। তারও উল্লেখ করেছেন সঞ্জীব সান্যাল। প্রসঙ্গত, ১৯২৪ সালেই প্রতিষ্ঠা হয় হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মি। এই বাহিনী গঠনের মূলে ছিল ১৯২২ সালের চৌরিচোরার ঘটনা। প্রসঙ্গত, চৌরিচোরার ঘটনায় আন্দোলনকারীদের হাতে পুলিশ কর্মীরা নিহত হলে অসহযোগ আন্দোলনকে তুলে নেন মহাত্মা গান্ধী। এই সময় শচীন্দ্রনাথ সান্যাল অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠেন বলে জানিয়েছেন সঞ্জীব। ওই সময়ে দেশের যুবসমাজের কংগ্রেস তথা মহাত্মা গান্ধীর প্রতি অনাস্থাও পরিলক্ষিত হতে থাকে। দেশের যুব সমাজের বড় অংশ মনে করতে থাকে অসহযোগ আন্দোলনের প্রত্যাহারের কারণে ব্রিটিশরা শক্তিশালী হয়েছে। এই সময় বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তুলতে শচীন্দ্রনাথ সান্যাল নিয়োগ করতে শুরু করেন রামপ্রসাদ বিসমিল, রাজেন্দ্র লাহিড়ী, আশফাকুল্লাহ খান প্রভৃতি কলেজ ছাত্রদের। বারাণসী সংস্কৃত কলেজে পাঠরত সুখদেব, রাজগুরু, চন্দ্রশেখর আজাদদেরও নিয়োগ করেন শচীন্দ্রনাথ সান্যাল। ৯ অগাস্ট ১৯২৫ সালে কাকোরি ট্রেন অ্যাকশন যা কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলাতেও হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল বলে জানা যায়। এই আর্মির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ভগৎ সিংও।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।