১৯৯১ সালের ১৫ মার্চ কুলদীপকে পাকিস্তানে চর হিসেবে পাঠায় ভারত সরকার।
কুলদীপ যাদব
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ৩২ বছর পরে নিজের বাড়ি চাঁদখেড়ায় প্রিয়জনদের কাছে ফিরলেন ভারতীয় গুপ্তচর (Indian Spy) কুলদীপ যাদব (Kuldeep Yadav)। মাঝে কেটে গিয়েছে বহু সময়। পুরো সময়টাই কেটেছে পাকিস্তানি জেলে (Pakistan Jail)। ২৭ বছরের ঝকঝকে যে তরুণ বাড়ি থেকে একদিন বেরিয়েছিল সে আজ ফিরে এল ৫৯ বছরের প্রৌঢ় হয়ে। পাঞ্জাবীর নীচের জীর্ণ শরীরই বলে দেয় এই কয়েক বছরের গল্প। হৃদরোগ, টিবি, যক্ষ্মার মতো মারণ রোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে। যে দেশের জন্যে এত কিছু সেই দেশই খোঁজ নেয়নি এত বছরে। দেশের কোনও প্রতিনিধি একটি বারের জন্যে দেখাও করতে যায়নি। এমনটাই দাবি কুলদীপ যাদবের।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে এফএটিএফের প্রতিনিধি দল, ধূসর তালিকা থেকে বের হবে কি শরিফের দেশ?
তিনি বলেন, "সরকারের পক্ষ থেকে কেউ কখনও দেখা করতে আসেনি। আমি যখন গুপ্তচর হিসেবে পাকিস্তানে গিয়েছিলাম তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ২৭ বছর। যে দেশের জন্যে সারাটা জীবন উৎসর্গ করে দিলাম, সেই দেশ আমাকে আমার যোগ্য সম্মান ফিরিয়ে দিল না। কিছুই পাইনি আমি।"
১৯৯১ সালের ১৫ মার্চ কুলদীপকে পাকিস্তানে চর হিসেবে পাঠায় ভারত সরকার। ১৯৯৪ সালের ২২ জুন ওকারা জেলা থেকে গ্রেফতার হন তিনি। সাজা শেষে ২২ অগাস্ট বাড়ি ফিরেছেন তিনি। নিজের লোকেদের কাছে। আপাতত একটাই দাবি, অর্থনৈতিক সুরক্ষা। কুলদীপ বলেন, "আমি এখন আমার ভাই দিলিপ এবং বোন রেখার ওপর নির্ভরশীল। আমার সম্বর্ধনা, অবসরকালীন ভাতা প্রাপ্য। ঠিক যেমনটা সেনা কর্মীরা পেয়ে থাকেন।"
আরও পড়ুন: বদলার ম্যাচ পাকিস্তানের! জিতে ফাইনালে যাওয়াই লক্ষ্য টিম ইন্ডিয়ার
তিনি আরও বলেন, "সম্মানের সঙ্গে বাঁচার জন্যে এই মুহূর্তে আমার একটি বাড়ি এবং কিছুটা আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন।"
কুলদীপের ভাই-বোন স্মৃতিচারণ করে বলেন, "কুলদীপ ১৯৯১ সালে একদিন হঠাৎ হারিয়ে যান। বাবা অনেক খোঁজার চেষ্টা করেন। তাঁর সন্ধানে অল্লাশি অভিযান করার আবেদন নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করারও চেষ্টা করেন। কোনও লাভ হয়নি।"
কুলদীপ বলেন, "তিন বছরের কোর্ট মার্শালের পরে আমাকে যখন জেলে স্থান্তরিত করা হয়, তখন বাড়িতে চিঠি লিখেছিলাম। সেই প্রথম বাড়ির লোক জানতে পেরেছিল, আমি বেঁচে আছি।"
দিলিপ বলেন, "আমরা একই সঙ্গে খুশিও ছিলাম, আবার দুঃখিতও ছিলাম। আমরা জানতে পারি কুলদীপ বেঁচে আছে, তবে পাকিস্তানের জেলে।"
কুলদীপ আরও বলেন, "আমি কখনও আমার মিশনের বিষয়ে আমার পরিবারকে বলিনি। দেশ সেবার উন্মাদনা ছিল আমার মধ্যে। এই জন্যে সরকারি চাকরির পরীক্ষাও দিতাম আমি। এমন সময় দেশের হয়ে কাজ করার সুযোগ পাই আমি। লুফে নিই সেই প্রস্তাব। কিন্তু শেষটা ভালো হল না।
পাকিস্তান সম্পর্কে বলতে গিয়ে কুলদীপ বলেন, "পাকিস্তানিরা অনেকেই ভারতীয়দের মতো। আমার অনেকের সঙ্গেই জেলে ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল।"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।