জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে তৈরি হওয়া আলোড়নের আবহেই প্রকাশ্যে এল একটি ইতিহাস বই...
জ্ঞানবাপী মসজিদ। ফাইল ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মন্দির ধ্বংস করেই মসজিদ গড়ে উঠেছিল! সাকি মুস্তাইদ খানের লেখা ঔরঙ্গজেবের (Aurangzeb) শাসনের বিবরণ সম্বলিত একটি বই সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। তাতেই দেখা যাচ্ছে, স্বয়ং মুঘল সম্রাটের নির্দেশেই ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছিল কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের (kashi Vishwanath temple) একাংশ। বইটিতে দাবি করা হয়েছে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য বিধর্মীদের স্কুল ও মন্দির ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন ঔরঙ্গজেব নিজেই।
জ্ঞানবাপী মসজিদের ভিডিও সমীক্ষার রিপোর্ট চলতি সপ্তাহেই বারাণসী আদালতে জমা করেছেন আদালত-নিযুক্ত বিশেষ সহকারী কমিশনার। মসজিদের বাইরের দেওয়ালে অবস্থিত হিন্দু দেবদেবীর মূর্তির পুজো করার অনুমতি চেয়ে দায়রা আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন পাঁচ স্থানীয় মহিলা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে ভিডিও সমীক্ষার নির্দেশ দেয় আদালত।
এই প্রেক্ষিতে, কয়েকটি হিন্দু সংগঠনের তরফে দাবি করা হয় যে, কাশী বিশ্বনাথের মন্দিরের (Kashi Viswanath Temple) একাংশ ভেঙেই জ্ঞানবাপী মসজিদ (Gyanvapi mosque) গড়ে তোলা হয়েছে। ঠিক যেমন মসজিদের দেওয়ালে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তেমনভাবেই ভিডিও সমীক্ষায় মসজিদের ওজুখানার জলাশয়ে শিবলিঙ্গ মিলেছে বলে দাবি উঠেছে। সোহন লাল আর্য নামে এক হিন্দু শিবলিঙ্গ মেলার দাবি জানাতেই ওজুখানার জলাশয়ে কড়া পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে আদালতের নির্দেশে। যদিও মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাবি, জলাশয়ে রয়েছে পুরানো একটি ফোয়ারা।
বৃহস্পতিবার মসজিদ চত্বরে শেষনাগের ফনাওলা পাথরের ভাস্কর্যও মিলেছে বলে দাবি করেন আইনজীবী অজয় কুমার মিশ্রে। এই অজয় কুমার ছিলেন অ্যাডভোকেট কমিশনার। তথ্য প্রকাশ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে।
আরও পড়ুন : শিবলিঙ্গের পর এবার শেষনাগের দেখা মিলল জ্ঞানবাপী মসজিদে!
এমন আবহেই প্রকাশ্যে এল একটি ইতিহাস বই। ফরাসি ভাষায় লেখা "মসীর-ই-আলমগিরি" বইটির লেখক সাকি মুস্তাইদ খান। ব্রিটিশ আমলে বইটির অনুবাদ করেছিলেন ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার। এই বইতেই মন্দির ধ্বংসের স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে।
বইটি লেখা হয়েছিল দুটি অংশে। একটি অংশ ঔরঙ্গজেব জীবিত থাকাকালীন। আর বাকি অংশটি লেখা হয়েছিল সম্রাটের মৃত্যুর পর। বইয়ে দাবি করা হয়েছে, ১৬৬৯ সালের ৪ এপ্রিল সম্রাট বেনারসে (বর্তমানে বারাণসী) গিয়ে “অবিশ্বাসীদের” শিক্ষা সম্পর্কে জানতে পারেন। তার পরেই মন্দির ধ্বংসের নির্দেশ দেওয়া হয়।
বইটির একাংশ তর্জমা করলে দাঁড়ায়, “বিশ্বাসের পালনকর্তা জানতে পারলেন যে, তেট্টা, মুলতান প্রদেশে এবং বিশেষ করে বেনারসে ব্রাহ্মণ অবিশ্বাসীরা তাদের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে তাদের মিথ্যা বই পড়াতেন এবং হিন্দু-মুসলিম উভয়ের ভক্ত ও ছাত্ররা দূরদুরান্ত থেকে এখানে আসতেন। বিপথগামী পুরুষরা এই জঘন্য শিক্ষা অর্জনের জন্য আসতেন।”
বইয়ে আরও লেখা হয়েছে, “ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য উন্মুখ সম্রাট সমস্ত প্রদেশের গভর্নরকে আদেশ দেন বিধর্মীদের স্কুল ও মন্দির ভেঙে ফেলার এবং একইসঙ্গে এই অবিশ্বাসীদের ধর্মের শিক্ষা ও বিশ্বাসকে অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে নিঃশেষ করার জন্য।”
আরও পড়ুন : ষোড়শ শতকের জ্ঞানবাপী মসজিদ ঘিরে চলা ৩১ বছরের বিতর্ক