Haryana Violence: নুহ্-তে হিন্দু পুণ্যার্থীকে গুলি করার পর গলার নলি কেটে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা হামলাকারীদের...
জ্বলছে একের পর এক গাড়ি। সোমবার হরিয়ানার নুহ্-তে। (ছবি-নিজস্ব)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সোমবার ঘটে যাওয়া বীভৎসতার পর ৪৮-ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। কিন্তু সেদিনের কথা মনে পড়লেই এখনও শিউরে উঠছেন অনেকে। চোখে-মুখে মৃত্যুর আতঙ্ক। প্রাণে বেঁচে গেলেও, এখনও ত্রস্ত রয়েছেন হরিয়ানার মেওয়াটের নুহ্-তে (Nuh Violence) হিন্দু শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া পুণ্যার্থীরা।
মহাভারত-সময়কালের মন্দির!
প্রতি বছরের মত এবছরও শ্রাবণ মাসের সোমবার উপলক্ষে মুসলিম-অধ্যুষিত হরিয়ানার (Haryana Violence) মেওয়াটে একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল। ‘ব্রিজ মণ্ডল জলাভিষেক যাত্রা’-য় কয়েক হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল নুহ্-তে অবস্থিত নলহাড়ে পঞ্চ শিবমন্দিরে গিয়ে পুজো দেওয়া। কথিত আছে, এই মন্দির নাকি মহাভারত-সময়কালের। সেই মন্দিরের পথেই এগোচ্ছিল শোভাযাত্রা। গুরুগ্রাম আলওয়ার হাইওয়েতে শোভাযাত্রা আটকে দেয় এক দল বিক্ষুব্ধ জনতা।
তালিবানি স্টাইলে হত্যা হিন্দু পুণ্যার্থীকে!
এর পরই শোভাযাত্রা লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয় (Nuh Violence)। পুণ্যার্থীদের লক্ষ্য করে ছোড়া হয় গুলি। ধেয়ে আসে অ্যাসিডের বোতল। জানা যাচ্ছে, অনেক মহিলা পুণ্যার্থীর সম্মানহানিও করা হয়। যাত্রায় অংশ নেওয়া প্রায় ৩০টি সরকারি ও বেসরকারি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষ মন্দিরে আশ্রয় নেন। সেখানেও হামলা চালানো হয়। সেদিনের হামলায় ৬ জন মারা গিয়েছেন। এর মধ্যে দুই হোমগার্ড ও এক নাগরিক গুলিতে মারা যান। আহতের সংখ্যা প্রায় ৬০। নিহতদের মধ্যে একজনের নাম অভিষেক রাজপুত। তিনি ছিলেন ওই দিনের হামলাকারী মুসলিমদের প্রথম শিকার। প্রথমে অভিষেককে গুলি করা হয়। গুলি লাগে তাঁর পেটে। কিন্তু, তাতেই ক্ষান্ত হয়নি হামলাকারীরা। তালিবানদের মতো নলি কেটে বড় পাথর দিয়ে তাঁর মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। সেখানেই মারা যান পেশায় মেকানিক অভিষেক।
আরও পড়ুন: ফের উত্তেজনা হরিয়ানায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ গুরুগ্রামের সাংসদের
ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন আক্রান্তরা
পরে, আক্রান্ত পুণ্যার্থীদের উদ্ধার করে নুহ্ (Nuh Violence) পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই নিজেদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শোনান আক্রান্তরা। সেদিন কী ঘটেছিল, তা বর্ণনা করতে গিয়ে এক পুণ্যার্থী বলেন, জলাভিষেক করে ফেরা প্রথম বাসটিকে মন্দির থেকে এক কিলোমিটার দূরে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তার পর পরই আরও ১৪-১৫টা গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তিনি যোগ করেন, খবর পেয়ে যখন তাঁদের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়, তখন তাঁদের গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ওই আক্রান্ত স্পষ্ট দাবি করেন, একেবারে এক-৪৭ থেকে গুলি করা হয় পুণ্যার্থীদের লক্ষ্য করে। তিনি বলেন, ‘‘মন্দিরটি তিন দিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা। হামলাকারীরা ওই পাহাড় থেকে তিনদিক দিয়ে আমাদের গুলি করছিল।’’
৬ মাস আগে থেকেই এই হামলার পরিকল্পনা?
আরেকজন পুণ্যার্থী জানান, পুলিশ পৌঁছে হামলাকারীদের (Nuh Violence) লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি চালাতে শুরু করে। তবে, হামলাকারীরা প্রস্তুত হয়েই এসেছিল। এক-ঘণ্টা ধরে পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময় হয়। তিনি যোগ করেন, জলাভিষেক যাত্রায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল। ওই হামলার পর ৬-৭ হাজার মানুষ মন্দিরে আশ্রয় নেন। পুলিশ সাত ঘণ্টার চেষ্টায় তাঁদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। আরেক পুণ্যার্থীর দাবি, তিনি এক কিশোরকেও বন্দুক চালাতে দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বছর ১৪ কি ১৫র এক কিশোর আগ্নেয়াস্ত্র চালাচ্ছিল। এর থেকেই পরিষ্কার, ওরা ৬ মাস আগে থেকেই এই হামলার পরিকল্পনা করে রেখেছিল।’’
‘‘হিন্দুদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয় প্রথমে’’
হিন্দুদের ওপর হামলার (Haryana Violence) ঘটনা যে পূর্ব-পরিকল্পিত, তার ইঙ্গিত মিলেছে ওই হামলায় আহত হওয়া এক পুলিশ আধিকারিকের কথাতেও। তিনি বলেন, হিন্দুদের শোভাযাত্রা ঠিকঠাক চলছিল। তিরঙ্গা মোড়ে পৌঁছতেই পাথর হামলা শুরু হয়। তিনি যোগ করেন, হিন্দুদের শোভাযাত্রাকে আটকে সেখান দিয়ে একটি মিছিল বের করে মুসলিমরা। সেখান থেকেই হিন্দুদের লক্ষ্য করে প্রথমে পাথর ছোড়া শুরু হয়। অন্তত ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
শুধু হিন্দুদের শোভাযাত্রায় হামলা (Haryana Violence) চালানোই নয়। পুণ্যার্থীদের একটি বাস হাইজ্যাক করে নুহে্র সাইবার পুলিশ থানায় হামলা চালানো হয় সেদিনই। তেমনই একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও সেই ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেনি মাধ্যম। ওই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বাসটি সোজা থানায় গিয়ে ধাক্কা মারে। লক্ষ্য ছিল, পুলিশের কাছে অপরাধের যে যে অভিযোগ ও নথিপ্রমাণ রয়েছে, তা নষ্ট করা। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, গত কয়েক বছরে দেশের সাইবার অপরাধের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছিল নুহ্। যে কারণে ২ বছর আগে এখানে সাইবার ক্রাইম শাখা পুলিশ থানা গঠন করা হয়। গত মে মাসেই, নুহ্ থেকে একটি সাইবার ক্রাইম চক্র ধরা পড়ে পুলিশের জালে। অভিযোগ, ২৮ হাজার মানুষকে ঠকানো হয়েছিল বিভিন্ন উপায়ে। প্রায় ১০০ কোটির প্রতারণা হয়েছিল। ১৪টি গ্রামে হানা দিয়ে ৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২৫০ জন এখনও পলাতক। দায়ের করা হয়েছিল প্রায় ১৩৫০ মামলা।
‘‘মিনি পাকিস্তান মেওয়াট’’! দাবি ভিএইচপি নেতার
এর থেকেই গোয়েন্দাদের ধারণা, এই হামলা পূর্ব-পরিকল্পিত। বেশ কিছু দিন আগে থেকেই এর ছক কষা হয়েছে। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর ও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ দুজনই একমত যে, এই হামলা পূর্ব-পরিকল্পিত এবং এর নেপথ্যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে। নুহ্ হামলার ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সংগঠনের যুগ্ম কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুরেন্দ্র জৈন বলেন, ‘‘হরিয়ানার নুহ্-তে (Nuh Violence) যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। যাত্রা শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যেই বন্দুক, লাঠি ও তরোয়াল দিয়ে হামলা চালানো হয়। এক দিক দিয়ে ধেয়ে আসছিল বুলেট, অন্যদিক থেকে অ্যাসিডের বোতল। পাহাড়ে চড়ে মন্দিরেও ঢুকে পড়ে হামলাকারীরা।’’ এমনকী, মেওয়াটকে মিনি পাকিস্তান হিসেবে উল্লেখ করেন সুরেন্দ্র।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।