১৯ ফেব্রুয়ারি ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক মাধবরাও সদাশিব গোলওয়ালকারের জন্মদিন...
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ১৯ ফেব্রুয়ারি ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক মাধবরাও সদাশিব গোলওয়ালকারের জন্মদিন। তাঁর আমলেই সঙ্ঘ পরিবারের পত্তন হয়। দেশজুড়ে বিস্তার পায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। আজ সারা পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন হল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS)। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের কাজ ভারতবর্ষের প্রতিটি প্রান্তে চলছে। সঙ্ঘের কাজের জন্য রয়েছে বিভিন্ন শাখা সংগঠন। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বত্রই বিস্তার লাভ করেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। আরএসএস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিজয়া দশমী তিথিতে। ১৯২৫ সালের দশেরার দিন মহারাষ্ট্রে ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার প্রতিষ্ঠা করেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS)। প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে বিজয়া দশমীর দিনটিকে বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ হল যে সেইদিন শুভ শক্তি, অশুভ শক্তির উপরে জয় লাভ করেছিল, এমনটাই বিশ্বাস রয়েছে। সেদিন ভগবান রামচন্দ্র, রাবণকে বধ করেছিলেন বলে মানা হয়। ১৯২৫ সাল থেকেই তাই রীতি রয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সর-সঙ্ঘচালক বিজয় দশমীর দিন স্বয়ংসেবকদের উদ্দেশে বার্তা দেন। গত বছরেও ডঃ মোহন ভাগবতের মুখ থেকে শোনা গিয়েছে বক্তব্য।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS) স্থাপিত হয় মাত্র ১৫ থেকে ২০ জন যুবক এবং কিশোরকে নিয়ে। প্রতিষ্ঠার দিনে হাজির ছিলেন ভাউজি কাওড়ে, আন্না সোহনি, বিশ্বনাথ রাও কেলকর, বালাজি হুড্ডর, বাপু রাও ভেদিরা। এঁরাই ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রথম দিকের একনিষ্ঠ কর্মী, যাঁরা সারা ভারত জুড়ে সংগঠন বিস্তারে ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৯২৫ সালে বিজয় দশমীর দিনে সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার বলেছিলেন যে, আমরা আজকে সঙ্ঘের কাজ শুরু করলাম। ওই দিনে সঙ্ঘের ভবিষ্যতের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি। নিজের বক্তব্যে হেডগেওয়ার বলেন, ‘‘আমাদেরকে শারীরিকভাবে সক্ষম হতে হবে বৌদ্ধিক ভাবে বিকশিত হতে হবে প্রতিটা ক্ষেত্রে যাতে আমরা আমাদের লক্ষ্যকে পেতে পারি।’’
গবেষকদের মতে, প্রথম দিকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (RSS) সেভাবে কোনও লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল না। শুধু শারীরিক এবং মানসিকভাবে যুবকদেরকে শক্তিশালী করা এবং তাদেরকে দেশের কাজে নিয়োগ করাই ছিল সঙ্ঘের কাজ। সঙ্ঘের প্রথম শাখা শুরু হয় ১৯২৬ সালের ২৮ মে থেকে। পরবর্তীকালে তা নিয়মিত চলতে থাকে। জানা যায় নাগপুরের মোহিতওয়াড়ার মাঠে শুরু হয় আরএসএস এর শাখা। বর্তমানে সেখানেই রয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের মুখ্য কার্যালয়। প্রথমদিকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের কমান্ড বা নির্দেশ সংস্কৃততে দেওয়া হত। কিছু কমান্ড ইংরেজিতেও দেওয়া হত। কিন্তু পরবর্তীকালে সেগুলিকে স্থানীয় বিভিন্ন ভাষা এবং সংস্কৃততেই দেওয়া হয়ে থাকে। সঙ্ঘের শাখাতে গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করা হয় যা 'গৈরিক ধ্বজ' নামে পরিচিত। গৈরিক ধ্বজকে প্রণাম করেই চলে শাখার কাজ।
প্রথমদিকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (RSS) শাখাগুলিতে মারাঠি এবং হিন্দি শ্লোক গাওয়া হত। পরবর্তীকালে সংস্কৃততে চলতে থাকে প্রার্থনা। প্রতিটি প্রার্থনাই যুব সমাজের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগানোর উদ্দেশে রচনা করা হত। সঙ্ঘের প্রথম প্রার্থনা অনুবাদ করলে দেখা যায় যে সেখানে বলা হচ্ছে— আমরা প্রণাম জানাই সেই জন্মভূমিকে যেখানে আমরা জন্মগ্রহণ করেছি। এটা জানা যায় যে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ তার প্রথম নামকরণ পায় প্রতিষ্ঠার ৬ মাস পরে। ১৯২৬ সালের ১৭ এপ্রিল ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার একটি বৈঠক করেন তাঁর নিজের বাড়িতে। যেখানে ২৬ জন স্বয়ংসেবক অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানেই বিস্তৃত আলোচনা হয় সংগঠনের নামকরণ নিয়ে এবং প্রত্যেকেই ভাববিনিময় করেন এবিষয়ে। উপস্থিত ২৬ জন কেউই এই আন্দাজ করতে পারেননি যে তাঁরা আগামীদিনের সব থেকে বড় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নামকরণ করতে চলেছেন। সেই দিন অনেক নামই উঠে এসেছিল যেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS), জরিপটকা মণ্ডল, ভেদ্রতোদ্ধরক মণ্ডল।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।