গোটা দেশে যখন পূর্ণ স্বরাজের দাবি প্রবল হয়ে ওঠে, তখন ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটিশ সরকার।
ভারতের স্বাধীনতা দিবস
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির পর এবার ১৫ অগাস্ট (15th August) ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে ভারত। দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে 'আজাদি কা অমৃত মহোৎসব' (Azadi ka Amrit Mohatsav) কর্মসূচির ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
সালটা ছিল ১৯২৯। তখন কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন জওহরলাল নেহরু (Jawaharlal Nehru)। সেই সময় ‘পূর্ণ স্বরাজ’(Purna Swaraj)- এর ডাক দেন তিনি। শুরুতে ২৬ জানুয়ারি দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। ১৯৩০ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত ২৬ জানুয়ারিকেই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করত কংগ্রেস। বর্তমানে এই দিনটিকে সাধারণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করে গোটা দেশ। ১৯৫০ সালে এই দিনেই স্বাধীন ভারতের প্রথম সংবিধান কার্যকর হয়।
আরও পড়ুন: 'হর ঘর তেরঙ্গা', কী ভাবে পোস্ট অফিস থেকে অনলাইনে অর্ডার করবেন দেশের পতাকা?
গোটা দেশে যখন পূর্ণ স্বরাজের দাবি প্রবল হয়ে ওঠে, তখন ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটিশ সরকার। ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ১৯৪৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। কিন্তু, গোটা দেশে যেভাবে বিক্ষোভের পরিমাণ বাড়ছিল, তাতে মাউন্টব্যাটেন বুঝতে পেরেছিলেন, ১৯৪৮ পর্যন্ত আর অপেক্ষা করা যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব, ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাজা গোপালাচারী ঐতিহাসিক মন্তব্য করেন। তিনি বলেছিলেন, "ব্রিটিশরা যদি ১৯৪৮ সালের ৩০ জুনের অপেক্ষা করত, তাহলে হস্তান্তরের জন্য ব্রিটিশের হাতে কোনও ক্ষমতাই অবশিষ্ট থাকত না।" ভাবগতিক বুঝে মাউন্টব্যাটনে স্বাধীনতা এগিয়ে আনেন ১৯৪৭ সালের অগাস্টে।
আরও পড়ুন: 'হর ঘর তেরঙ্গা' অভিযানে শামিল হবেন কীভাবে? সার্টিফিকেট কী করে ডাউনলোড করবেন? জেনে নিন
ব্রিটিশ ভারতের সর্বশেষ শাসক লর্ড মাউন্টব্যাটেন দাবি করেছিলেন, তিনি দাঙ্গা বা রক্তপাত চাননি। তাই ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এগিয়ে আনেন। কিন্তু তার পরেও ভারত ভাগের সময় ব্যাপক রক্তপাতের সাক্ষী হয় গোটা দেশ। এর পরে মাউন্টব্যাটেন লিখেছিলেন, “যেখানেই সাম্রাজ্যের ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে, সেখানেই রক্তপাত হয়েছে। এ দাম দিতেই হবে।”
কেন ১৫ অগাস্ট দিনটিকেই বেছে নিলেন, সেই জবাবে মাউন্ট ব্যাটেন বলেছিলেন, দিনটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের দ্বিতীয় বার্ষিকী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাপান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল এবং মাউন্টব্যাটেন সে সময় মিত্রবাহিনীর সেনাপতি ছিলেন। তাই যখন সবাই ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন তাঁর কাছে জানতে চান, তখন ওই দিনটির কথাই হঠাত বলে ফেলেন মাউন্ট ব্যাটেন।
একইসঙ্গে স্বাধীন হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। তবে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ১৪ অগাস্ট হলেও ভারতে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় ১৫ অগাস্ট। অথচ স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী একই দিনে দুই দেশ স্বাধীন হওয়ার কথা ছিল।
ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস আলাদা কেন?
আইন অনুযায়ী অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশ রাজ শেষ হয় একদিনেই, তা ১৫ অগাস্ট। ভারতের স্বাধীনতা বিলেও দুই দেশকেই ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা ছিল। পাকিস্তান শুরুতে ১৫ অগাস্টকেই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে মেনে নিয়েছিল। পাকিস্তানের প্রথম ভাষণে জিন্না বলেছিলেন, “১৫ অগাস্ট স্বাধীন, সার্বভৌম পাকিস্তানের জন্মদিন”। কিন্তু ১৯৪৮ সাল থেকে পাকিস্তান ১৪ আগস্টকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করতে শুরু করে। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট রাতটি ছিল রমজান মাসের ২৭ তারিখ। সালটি ছিল ১৩৬৬ হিজরি। রমজানের ২৭ তম রাতটিকে মুসলমানরা পবিত্র রজনী হিসেবে মনে করে। অনেকেই মনে করেন, এই বিষয় দুটিকে জুড়তেই স্বাধীনতা দিবস বদলে দেয় পাকিস্তান।