Arunachal Pradesh: অরুণাচলপ্রদেশে ড্রাগনের থাবা! নয়া জঙ্গি গোষ্ঠী তৈরি করছে চিন!...
অরুণাচলপ্রদেশকে গ্রাস করতে চাইছে চিন! ফাইল ছবি।
মুখে মিষ্টতা। আর আস্তিনে লুকনো বাঘনখ! এভাবেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে চিন! অন্তত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা তেমনই। জঙ্গি গোষ্ঠী তৈরি করে জিইয়ে রাখতে চাইছে অশান্তি। এভাবেই তারা ক্রমশ কবজা করতে চাইছে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ অরুণাচলপ্রদেশকে। আজ প্রথম কিস্তি...
অরুণাচলপ্রদেশে ড্রাগনের থাবা ১
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মুখে মিষ্টতা। আর আস্তিনে লুকনো বাঘনখ! এভাবেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে চিন (India China Relation)! অন্তত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা তেমনই। দুই দেশে শীর্ষ নেতৃত্ব যখন একের পর এক বৈঠক করে ভারত-চিন সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই অরুণাচলপ্রদেশে (Arunachal Pradesh) থাবা বসাচ্ছে ড্রাগনের দেশ! এক সময় চিন তাদের দেশের মানচিত্রে ঢুকিয়ে নিয়েছিল অরুণাচল প্রদেশের বেশ কিছু গ্রামকে।
এবার উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে স্থায়ী অশান্তি জিইয়ে রাখতে নয়া উগ্রপন্থী সংগঠন সৃষ্টি করেছে বেজিং। নাম দেওয়া হয়েছে, ইউনাইটেড টানি আর্মি, সংক্ষেপে ইউটিএ। এই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান উদ্দ্যেশ্যই হল হিমালয়ের কোলের রাজ্যে বিশেষত সিয়াং নদীতে নির্মীয়মান বৃহৎ বাঁধ প্রকল্পগুলিকে বাধা দেওয়া। এই সিয়াং নদী উৎপন্ন হয়েছে চিনের অধিকৃত তিব্বত থেকে। বেজিংয়ের অভিপ্রায় শুধু ভারতের পরিকল্পিত ৫৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি পরিচ্ছন্ন শক্তি উৎপাদনের উদ্যোগ ব্যাহত করা নয়, বরং ভারতের সেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলিকেও নস্যাৎ করা যা চিনের সম্ভাব্য ‘জল যুদ্ধের’ বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য নেওয়া হচ্ছে।
প্রথমে লুকিয়ে চুরিয়ে সংগঠন গড়েছে ইউটিএ। ২০২৪ সালের বড়দিনের প্রাক্কালে বিবৃতি জারি করে নিজেদের উপস্থিতি ঘোষণা করে এই জঙ্গি সংগঠন। ওই বিবৃতিতে সিয়াং আপার মাল্টিপারপাস প্রকল্প (এসইউএমপি)-সহ বৃহৎ বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতা করা হয়েছে। এসইউএমপি প্রকল্পটি ভারতের (India China Relation) জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি চিনের যারলুং জ্যাংবো নদীতে নির্মীয়মান বৃহৎ জলবিদ্যুৎ এবং জল সংরক্ষণ প্রকল্পগুলির বিপদ রোধ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই নদী মাউন্ট কৈলাসের কাছে চিন অধিকৃত তিব্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে তিব্বতী মালভূমি জুড়ে হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে। পরে নামচা বারোয়ার কাছে একটি গভীর বাঁক নিয়ে অরুণাচলপ্রদেশে (Arunachal Pradesh) প্রবেশ করেছে। সেখানে এর নাম হয়েছে সিয়াং। সিয়াং নদী তারপর দিবাং এবং লোহিত নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে অসমে ব্রহ্মপুত্র নাম নিয়েছে। চিন যারলুং জ্যাংবো নদীতে যে বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ করছে, (বিশেষত নদীর ঘুরন্ত অংশ নামচা বারোয়ার ঘোড়ার নালের বাঁক-এ বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণের সাম্প্রতিক ঘোষণা), তা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বিঘ্নিত করবে।
চিনের এই মেগা প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শুখা মরসুমে ভারতে জল সরবরাহ বন্ধ করে খরা সৃষ্টি করতে পারে চিন। আর ঠিক উল্টোটা হবে বর্ষাকালে। বিশাল পরিমাণে জল ছেড়ে বন্যা সৃষ্টি করতে পারে ভারতে। এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে এসইউএমপি, যা চিনের (India China Relation) সঙ্গে এমন 'জল যুদ্ধ' প্রতিরোধ করবে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করার পাশাপাশি সিয়াং নদীতে নির্মীয়মান বৃহৎ বাঁধ প্রকল্পগুলিকে বাধা দিতেই চিন জন্ম দিয়েছে ইউটিএর। অরুণাচল প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মামা নাটুং বলেন, “ইউটিএ (UTA) হল ন্যাশনাল লিবারেশন কাউন্সিল অব তানিল্যান্ড (NLCT)-এর নয়া রূপ। ২০১০ সালের শেষের দিকে অরুণাচল প্রদেশ পুলিশ নিষ্ক্রিয় করেছিল এনএলসিটিকে।”
এনএলসিটি একটি (Arunachal Pradesh) ছোটো উগ্রপন্থী দল, যার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল খাপলাং-ইউং আউং গোষ্ঠীভুক্ত ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড (NSCN-KYA)-এর। তাদের অস্ত্রাগারে ছিল কিছু দেশীয় রাইফেল এবং কয়েকটি (India China Relation) পুরানো পিস্তল। ২০০৫ সালে গঠিত এনএলসিটিতে, এক ডজনের কিছু বেশি সদস্য ছিল। তানি জনগণের জন্য একটি পৃথক জাতি গড়ে তোলার যে দাবি তুলেছিল, তাকে সমর্থন করেনি স্থানীয় জনগণই। তানি জনগণ হলেন আদি, নিয়িশি, গালো, আপাতানি এবং তাগিন সম্প্রদায়ের মানুষ, যাঁরা অরুণাচল প্রদেশের কেন্দ্রীয় ও উত্তরাঞ্চলে বসবাস করেন। রাজ্যের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশই হলেন এঁরা।
আরও পড়ুন: ফের একবার ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার
এই এনএলসিটি সাধারণত ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে তোলা আদায় করত। কয়েকটি অপহরণের ক্ষেত্রেও নাম জড়িয়েছিল এদের। তবে লাগাতার পুলিশি অভিযানের জেরে ২০১০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে দুরমুশ হয়ে যায় সংগঠনের কোমর। এনএলসিটি-র চেয়ারম্যান, অ্যান্থনি ডোক এবং বেশিরভাগ সদস্য হয় গ্রেফতার হয়েছিলেন, নয়তো নিজেরাই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। জেল খেটে বেরিয়ে ডোক অরুণাচলপ্রদেশের (Arunachal Pradesh) রাজধানী ইটানগরে একটি রেস্তোরাঁ খোলেন। পুলিশ কয়েক মাস ধরে তাঁর ওপর নজরদারি করেছিল। পরে যখন দেখা গেল ডোক সাধারণ জীবনযাপন করতে শুরু করেছেন, এবং সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, তখন তাঁর ওপর নজরদারি বন্ধ করে দেয় পুলিশ (India China Relation)।
চলবে...
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।