EAC-PM Study: গত ৬৫ বছরে ভারতে তরতরিয়ে বেড়েছে সংখ্যালঘুরা, কেন জানেন?...
প্রতীকী ছবি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সংখ্যা (India Hindu Population) দ্রুত কমছে। আর যারা সংখ্যালঘু তাদের বংশলতিকা বাড়ছে বর্ষার লবঙ্গলতিকার মতো। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়ই উঠে এসেছে ভারতের জনসংখ্যার এই ছবি। প্রধানমন্ত্রীর ইকনোমিক অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলের (EAC-PM Study) প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, ১৯৫০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ভারতে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সংখ্যা কমেছে ৭.৮ শতাংশ। অথচ এই সময়সীমায় ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলিতে সংখ্যাগুরু (পড়ুন মুসলমান) জনসংখ্যা বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
কেবল প্রতিবেশী দেশগুলিতে নয়, ভারতেও যেখানে হিন্দুদের সংখ্যা কমছে, সেখানেও সংখ্যালঘু মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং শিখ সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বাড়ছে। আর উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে জৈন ও পার্শিদের সংখ্যা। ১৯৫০ থেকে ২০১৫ এই পঁয়ষট্টি বছরে (India Hindu Population) ভারতে মুসলমান জনসংখ্যার হার বেড়েছে ৪৩.১৫ শতাংশ। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বেড়েছে ৫.৩৮ শতাংশ। জনসংখ্যা বেড়েছে শিখ এবং বৌদ্ধদেরও। শিখদের জনসংখ্যা বেড়েছে ৬.৫৮ শতাংশ। বৌদ্ধদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সামান্য।
সংখ্যালঘুদের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তার চেয়ে তুলনায় ঢের কমছে সংখ্যাগুরু হিন্দু জনসংখ্যা (India Hindu Population)। ১৯৫০ সাল থেকে ২০১৫ এই পর্বে ভারতে হিন্দু জনসংখ্যার ভাগ ৮৪ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৭৮ শতাংশ। এই সময় মুসলমানদের ভাগ ৯.৮৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪.০৯ শতাংশ। ভারতে হিন্দুদের জনসংখ্যা যে হারে কমছে, সেদিক থেকে ভারতের স্থান হয়েছে পড়শি দেশ মায়ানমারের পরেই। এখানে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে ১০ শতাংশ। ভারতে এই হার ৭.৮ শতাংশ। হিন্দুর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ভারতের আর এক প্রতিবেশী দেশ নেপালেও। এখানেও হিন্দুরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ। তবে তাদের বৃদ্ধির হার মাত্রই ৩.৬ শতাংশ। যে রিপোর্টের ভিত্তিতে এসব বলা হচ্ছে, তা সংগ্রহ করা হয়েছে বিশ্বের ১৬৭টি দেশ থেকে। গবেষণাপত্রটির লেখকদের মতে, বিভিন্ন দিক থেকে বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ভারতে সংখ্যালঘুরা কেবল নিরাপদেই রয়েছেন তা নয়, তাঁরা ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেশে (India Hindu Population)।
সংখ্যাগুরু হওয়া সত্ত্বেও ভারতে যেখানে হিন্দুদের সংখ্যা কমছে, সেখানে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে সংখ্যাগুরু মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে তরতরিয়ে। সব চেয়ে বেশি বেড়েছে বাংলাদেশে। এদেশে মুসলমান বেড়েছে ১৮.৫ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে পাকিস্তান। সেখানে বেড়েছে ৩.৭৫ শতাংশ। এই তালিকার একেবারে শেষে রয়েছে আফগানিস্তান। সেখানে বেড়েছে মাত্রই ০.২৯ শতাংশ। গবেষণাপত্রটির লেখক শমিকা রবি, আব্রাহাম জোশ এবং অপূর্বকুমার মিশ্র। তাঁরা বলছেন, পাকিস্তানে হানিফ মুসলমানের সংখ্যা বেড়েছে ৩.৭৫ শতাংশ। এদেশে সামগ্রিকভাবে মুসলমানের সংখ্যা বেড়েছে ১০ শতাংশ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পরেও পাকিস্তানে অব্যাহত মুসলমান জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার। ভারতের পূর্ব দিকের প্রতিবেশী মায়ানমার। সেখানে জনসংখ্যার হার কমেছে ব্যাপকভাবে। ১৯৫০ থেকে ২০১৫ এই সময়সীমায় সে দেশে থেরাভাদা বৌদ্ধদের সংখ্যা কমে গিয়েছে ১০ শতাংশ। এদেশে এরাই সংখ্যাগুরু (India Hindu Population)। গবেষণায় জানা গিয়েছে, ভারত এবং মায়ানমারের পরে নেপালে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের জনসংখ্যা কমেছে ৩.৬ শতাংশ।
ভারত মহাসাগরের বুকে ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপ। এখানেও মুসলমানেরাই সংখ্যাগুরু। তবে এঁরা সফি সুন্নি সম্প্রদায়ের মুসলমান। কমেছে এঁদের হারও। সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে ১.৪৭ শতাংশ। ভারতের আরও দুই প্রতিবেশী দেশে বৌদ্ধরা সংখ্যাগুরু। এই দুই দেশের একটি হল ভুটান, অন্যটি শ্রীলঙ্কা। চলতি বছরের মে মাসে যে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে ভুটানে বৌদ্ধ জনসংখ্যার হার বেড়েছে ১৭.৬ শতাংশ। আর শ্রীলঙ্কায় এই হার ৫.২৫ শতাংশ। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে সংখ্যালঘুদের মোট জনসংখ্যার শেয়ারের পরিবর্তন থেকে ওই দেশের সংখ্যালঘুদের স্টেটাস কী, তা বোঝা যায়।
আরও পড়ুুন: পাকিস্তানের হাতে সিয়াচেন তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন সোনিয়া গান্ধী?
ওই গবেষণা থেকে আরও জানা গিয়েছে, কেবল ভারতেই (India Hindu Population) নয়, গোটা বিশ্বেই কমছে সংখ্যাগুরুদের বৃদ্ধির হার। চিন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড এবং পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের কথা অবশ্য আলাদা। এই দেশগুলিতে ভারতের চেয়ে বেশি বেড়েছেন সংখ্যালঘুরা। বিশ্বের যে ১৬৭টি দেশে ধর্মীয় জনগণনা করা হয়েছিল, সেখানে গড়ে জনসংখ্যা কমেছে ২২ শতাংশ (১৯৫০-২০১৫ এই সময় সীমায়)। লাইবেরিয়ায় কমেছে ৯৯ শতাংশ। আর নাবিমিয়ায় বেড়েছে ৮০ শতাংশ। ১২৩টি দেশে সংখ্যাগুরুদের সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
কী কারণে ভারতে বাড়ছে সংখ্যালঘুরা? গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, ভারতে সংখ্যালঘুরা যে নিরাপদেই রয়েছেন, এটা তার একটা বড় প্রমাণ। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, সংখ্যাগুরুদের জনসংখ্যা হ্রাসের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রমাণ করে দেশের নীতি রয়েছে সঠিক পথে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও রয়েছে ঠিকঠাক। তার জেরেই জনসংখ্যা বাড়ছে সংখ্যালঘুদের। ভারতের যে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের বাতাবরণ রয়েছে, তাও যে সত্য, তা প্রমাণিত এ দেশে সংখ্যালঘুদের বাড়বাড়ন্তে (India Hindu Population)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।