Kamikaze Loitering Munition: ভারতের সেনা পেয়ে গেল দেশীয় ‘কামিকাজে’..! কতটা তাৎপর্যপূর্ণ?
ভারতীয় সেনার হাতে দেশীয় আত্মঘাতী ড্রোন ‘নাগাস্ত্র-১’। ছবি— ট্যুইটার/এক্স
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ‘‘ঘর মে ঘুসকে মারেঙ্গে...’’। দেশে সন্ত্রাস হামলা হলে ভারতের প্রত্যুত্তর কেমন হবে তা বোঝাতে গিয়ে সম্প্রতি নাম না করে পাকিস্তানকে ঠিক এই ভাষাতেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এবার, মোদির সেই বার্তা সফল রূপ দিতে ভারতীয় সেনার হাতে এসে গেল ‘নাগাস্ত্র’ (Nagastra-1 Suicide Drone)। ভারত নিজস্ব ক্ষমতায় কামিকাজে লয়টারিং মিউনিশন (Kamikaze Loitering Munition) তৈরি করে ফেলায় এবার সীমান্তে চাপে চিন-পাকিস্তান।
উরি-পুলওয়ামা হামলার জবাবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইক করে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে গজিয়ে ওঠা জঙ্গি শিবির ধ্বংস করেছিল ভারতীয় ফৌজ। তবে, তা করতে ভারতীয় ফৌজকে সীমান্ত পেরিয়ে যেতে হয়েছিল। কিন্তু, এবার, আর তার প্রয়োজন নেই। সৌজন্য আত্মঘাতী ড্রোন ‘নাগাস্ত্র-১’ (Nagastra-1 Suicide Drone)। সীমান্তের এপার থেকেই কন্ট্রোল করে সীমান্তের ওপারে থাকা জঙ্গি ঘাঁটি থেকে শুরু করে শত্রুর গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট ধ্বংস করতে পারবে ভারতীয় সেনা। ফলে, আর কোনও সৈনিককে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিতে হবে না।
Nagastra -1, in a 'kamikaze mode' can neutralize any hostile threat with GPS-enabled precision strike with an accuracy of 2m. The man-portable fixed-wing electric UAV of weight 9 kg has an endurance of 30 min, a man-in-loop range of 15 km and an autonomous mode range of 30 km.…
— ANI (@ANI) June 14, 2024
প্রায় সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই ‘লয়টারিং মিউনিশন’ বা আত্মঘাতী ড্রোন ভারতের পক্ষে গেমচেঞ্জার প্রমাণিত হতে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। ‘নাগাস্ত্র-১’ দেখতে একটি খেলনা বিমানের মতো। মাটি থেকে ২০০ মিটার পর্যন্ত উপরে উঠে আত্মঘাতী হামলা চালাতে সক্ষম এই মানববিহীন অতিক্ষুদ্র বিমান। ৯ কেজির এই ড্রোন বহন করতে পারে ১ কিলো বিস্ফোরক। নাগাস্ত্র একটানা ৩০ মিনিট ধরে উড়তে পারে। কোনও মানুষ একে নিয়ন্ত্রণ করলে ১৫ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়তে পারে ড্রোনটি। আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে উড়লে, ৩০ কিলোমিটার দূরেও গিয়ে হামলা চলাতে পারে নাগাস্ত্র।
সেনার তরফে জানানো হয়েছে, লক্ষ্যবস্তু স্থির না হওয়া পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুর আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে থাকে এই ড্রোনগলি। লক্ষ্যবস্তুর আশপাশে উড়তে উড়তে, সঠিক সময়ে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। ‘নাগাস্ত্র-১’ (Nagastra-1 Suicide Drone) হামলা চালায় ‘কামিকাজে’ মোডে (জাপানি শব্দ, অর্থ আত্মঘাতী (Kamikaze Loitering Munition)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন রণতরীগুলি ধ্বংস করার জন্য এই পন্থা নিয়েছিল জাপান। জাপানি বিমান বাহিনীর পাইলটরা যুদ্ধবিমান নিয়ে উড়ে যেত মার্কিন রণতরীর উপর। তারপর, বিমানটি নিয়ে ধাক্কা মারত জাহাজে। জাহাজটিও ধ্বংস হত, বিমানটিও)। ড্রোন শত্রুপক্ষের বাঙ্কার, ছাউনি, অস্ত্রাগারের উড়ে এসে পড়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম নাগাস্ত্র। এমনকি, কোনও বাড়িতে লুকিয়ে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিতেও তা আছড়ে পড়তে পারে। নাগাস্ত্রও লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর সময়, লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করার পাশাপাশি নিজেও ধ্বংস হয়। সেই কারণে, একে আত্মঘাতী-ড্রোন বলা হয়।
দিনে ও রাতে নজরদারি চালানোর জন্য, নাগাস্ত্র-১ (Nagastra-1 Suicide Drone) ড্রোনে ২৪-ঘণ্টা ব্যবহারযোগ্য বিশেষ ক্যামেরাও আছে। এতে ডুয়াল সেন্সর আছে। ২৫ কিমি দূরের ছবি পাঠাতে সক্ষম নাগাস্ত্র। এছাড়াও এতে রয়েছে জিপিএস-ভিত্তিক প্রযুক্তি। জিপিএস টার্গেট রেঞ্জ ৬০ কিমি। জিপিএস নির্দেশিত নির্দিষ্ট স্থানে হামলা চালাতে পারে। ভুলচুক হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ২ মিটার। বিদেশে ব্যবহৃত কামিকাজে ড্রোন ফায়ার অ্যান্ড ফর্গেট পদ্ধতিতে চলে। অর্থাৎ, একবার বেরিয়ে গেলে, ফেরানো যায় না। কিন্তু, নাগাস্ত্র এখানে অন্যদের থেকে আলাদা। কোনও সময়ে মনে হলে অভিযান ‘অ্যাবর্ট’ বা বাতিল করতে হবে, তখন মাঝপথে তাকে ফিরিয়ে আনা যায়। পরে ব্যবহারও করা যায়। এক্ষেত্রে, প্যারাশুটের মাধ্যমে সফট ল্যান্ডিং করানো যায়। এই বিশেষ ব্যবস্থা, বিশ্বে আর কোনও আত্মঘাতী ড্রোনে নেই।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দেশে সরঞ্জাম উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়ার জোরালো সওয়াল করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই প্রেক্ষিতেই দেশেই নকশা ও তৈরি করা হয়েছে এই সুইসাইড ড্রোন (Kamikaze Loitering Munition)। নাগপুরের সোলার ইন্ডাস্ট্রিজ ইন্ডিয়া লিমিটেডের সহযোগী সংস্থা ইকনমিক্স এক্সপ্লোসিভস লিমিটেড কোম্পানি ও জেড মোশন অটোনোমাস সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেড নাগাস্ত্র (Nagastra-1 Suicide Drone) তৈরি করেছে। মোট ৪৮০টি ড্রোন বানানোর বরাত দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। প্রথম ব্যাচে এখন চলে এল ১২০টি। ইতিমধ্যেই বিশ্বের নজরে চলে এসেছে ‘নাগাস্ত্র-১’।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।