ঝাঁ চকচকে, আরামদায়ক রেলের এলএইচবি কোচ কেন যাত্রী নিরাপত্তার দিক থেকেও সেরা?
রেলের কোচেও এসেছে উন্নত প্রযুক্তি, সংগৃহীত ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতীয় রেল দৈনন্দিন কয়েক কোটি মানুষকে পরিষেবা দিয়ে আসছে। আর এই পরিষেবা যাতে সুখকর হয়, আরামদায়ক হয়, সে কথা মাথায় রেখে রেল প্রতিনিয়ত তাদের পরিষেবা উন্নত থেকে উন্নততর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে ভারতের রেল (Indian Railways) পরিষেবা অনেকটাই উন্নতমানের। কয়েক হাজার কিমি যাত্রা করলেও মানুষের শরীরে তার কোনও ছাপ পড়ে না। আর এই সবকিছু নির্ভর করে একটি ট্রেনের কোচ কী ধরনের, তার ওপর। আগে ভারতীয় রেলে নীল রঙের আইসিএফ কোচের দেখা মিলত, এখনও অনেক ট্রেনেই এই আইসিএফ (ICF) কোচ দেখা যায়। কিন্তু বর্তমানে মানুষের কাছে সব থেকে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এলএইচবি(LHB) কোচ, ঝাঁ চকচকে, রং বেরংয়ের কোচ, যেগুলিতে মানুষ সাধারণত চাপতে খুবই ভালোবাসে। বর্তমানে রাজধানী সহ বহু দূরপাল্লার ট্রেনে এই এলএইচবি (LHB) কোচের দেখা মেলে। শুধু সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, ঝাঁ চকচকে বলে নয়, এই কোচের আছে অনেক গুরুত্ব যা ট্রেনকে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে। তাই যাত্রী নিরাপত্তার দিক থেকে এই কোচগুলি শীর্ষে। এই প্রতিবেদনে আমরা জানব সেইসব বিশেষত্বের কথা।
কেন আলাদা এই এলএইচবি (LHB) কোচ?
এলএইচবি-র পুরো নাম লিঙ্ক হফম্যান বুশ। এই কোচ জার্মানির কোম্পানি লিঙ্ক-হফমান-বুশ এর দ্বারা উৎপাদন করা হয়, যা বর্তমানে ভারতে কপুরথলাতে তৈরি হওয়া শুরু হয়েছে। ভারত সরকারের তরফ থেকে ২০০০ সালে প্রথম ভারতে এই কোচ নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রথমে সাধারণত রাজধানীর সমগোত্রীয় ট্রেনে এর ব্যবহার শুরু হয়। এই কোচের ট্রেনগুলি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে খুব কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এই কোচের (Indian Railways) ব্যবহার শুরু হয়। এই এলএইচবি কোচের কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন এই কোচ অ্যান্টি রোল, অ্যান্টি কোলাপ্স এবং অ্যান্টি টেলিস্কোপিক। এই কোচগুলি সাধারণত মাইল্ড স্টাইল দিয়ে তৈরি হওয়ায় এগুলি আইসিএফ (ICF) কোচের তুলনায় অনেকটাই হালকা। কারণ পুরানো কোচগুলিতে স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করা হয়। এই ট্রেনে যাত্রা খুবই আরামদায়ক হয়। এই কামরাগুলিতে চাকায় লাগানো আছে উন্নতমানের ডিস্ক ব্রেক, যা দ্রুততম ট্রেনকে সহজেই ব্রেক করে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। আইসিএফের তুলনায় দ্রুত গতিতে ছুটতে সক্ষম এই কোচের ট্রেনগুলি বর্তমানে ১৬০কিমি প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত গতিতে ছুটতে পারে। অপরদিকে ICF কোচের ট্রেনগুলি ঘণ্টায় ১১০ কিমির বেশি দৌড়াতে পারে না। আইসিএফ কোচে বসে থাকলে ট্রেন চলার সময় অনেক বেশি ঝাঁকুনি অনুভব হত। কিন্তু এই উন্নত কোচগুলিতে সেই ঝাঁকুনির পরিমাণ অনেক কম।
পূর্বের অনেক রেল দুর্ঘটনার সময় আমরা লক্ষ্য করেছি একটি কোচের ওপর আরেকটি কোচের উঠে পড়া, ফলে অনেক মানুষ আহত এবং নিহত হন এবং দুর্ঘটনা এক ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। কিন্তু বিশেষ এলএইচবি কোচে এই সমস্যা হয় না। এই কোচের ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়লে তা আড়াআড়ি ভাবে লাইনচ্যুত হয়ে যায়। ফলে যাত্রীদের প্রাণহানির ঘটনা অনেকটাই কম হয়। বর্তমানে রেল মন্ত্রকের (Indian Railways) তরফ থেকে জানা গিয়েছে, যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ভবিষ্যতে আইসিএফ কোচগুলির পরিবর্তে সমস্ত ট্রেনকেই এলএইচবি (LHB) কোচে রূপান্তরিত করা হবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।