জিও পলিটিক্সে তথ্য-প্রযুক্তির হাত ধরে ভারত যাতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যেতে পারে তার চেষ্টা করে যাচ্ছে বর্তমান কেন্দ্র সরকার
ছবি প্রতীকী।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রযুক্তি বিশ্বে (Information Technology) ভারত এখন নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২০ সালে আত্মনির্ভর ভারতের (Make in India)ডাক দিয়েছিলেন। দেশে এখন বিদেশি স্মার্টফোন যেমন আসে, তেমনই আবার স্বদেশি স্মার্টফোনও তৈরি হয়, আবার বিদেশি সংস্থাগুলিও এ দেশে নিজেদের ব্র্যান্ডের ফোন তৈরি করছে। শুধু ফোন নয়। নানাবিধ গ্যাজেটস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ি বা বাইকও তৈরি হচ্ছে দেশে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে মোদি সরকার, যার নাম দেওয়া হয়েছে 'গতি শক্তি'। অর্থাৎ, দ্রুততাই যেখানে হবে বিকাশের শক্তি। সরকারের নতুন এ ডিজিটাল পোর্টালে প্রকল্পের নকশা জমা দিতে পারবে বিনিয়োগকারী ও বেসরকারি কোম্পানিগুলো। আর অনুমোদন প্রক্রিয়াও হবে মসৃণভাবে। নয়াদিল্লিতে এক সাক্ষাৎকারে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লজিস্টিক্স বিষয়ক বিশেষ সচিব অমৃত লাল মিনা বলেন, 'সময় ও ব্যয় সীমার মধ্যে রেখে প্রকল্প বাস্তবায়নই আমাদের মিশন। বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো যেন পণ্য প্রস্তুতের জন্য ভারতকে বেছে নেয়– সেটাই মূল লক্ষ্য'।
জিও পলিটিক্সে তথ্য-প্রযুক্তির হাত ধরে ভারত যাতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যেতে পারে তার চেষ্টা করে যাচ্ছে বর্তমান কেন্দ্র সরকার। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, কৃত্রিম মেধাকে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পাখির চোখ করার জন্য জোরালো সওয়াল করেছিলেন। সরকারে জোর দিয়েছে ‘ড্রোন-শক্তি’র মতো প্রকল্পে, যেখানে কৃত্রিম মেধার সাহায্যে বিভিন্ন আকারের ড্রোন ব্যবহার করা হবে দৈনন্দিন ব্যবসায়িক পরিসরে। গত ৬ বছরে, ভারতে স্টার্ট-আপ সংস্থাগুলোর বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ১৫৪০০%। এর সিংহভাগেরই কেন্দ্রে রয়েছে কৃত্রিম মেধা-ভিত্তিক কোনও নতুন ব্যবসায়িক ধারণা।
আরও পড়ুন: নেতাজিই আদর্শ! তাঁর দেখানো পথেই এগিয়ে চলার বার্তা দিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত
গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ইউনেস্কো-র একটি শিক্ষা-সংক্রান্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে কৃত্রিম মেধাভিত্তিক ব্যবসার বাজার এই মুহূর্তে বছরে ২০.২% চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে, এবং ২০২৫ নাগাদ এই বাজারটির অর্থমূল্য দাঁড়াবে প্রায় ৭.৮ বিলিয়ন ডলার, বা প্রায় পঁয়ষট্টি হাজার কোটি টাকা। এই বাজারের মূল প্রসার মূলত তিনটি প্রয়োগক্ষেত্রকে ঘিরে— ভোগ্যপণ্য ও পাইকারি ব্যবসা, কৃষি, এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা। অর্থনীতি-র পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩৫ নাগাদ কৃত্রিম মেধার ব্যবসায়িক লভ্যাংশ থেকেই আসবে ভারতের লক্ষ্য যে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি, তার প্রায় ১০%। বিশ্বের পঁচিশটি দেশকে নিয়ে গঠিত সংস্থা গ্লোবাল পার্টনারশিপ অন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা জিপিএআই-এর মূল দায়িত্ব হল সাধারণ মানুষের কল্যাণার্থে কৃত্রিম মেধার দায়িত্বশীল প্রয়োগ এবং প্রসার ঘটানো। ২০২২-২৩ সালে এই সংস্থাটির পরিচালনভার নিয়েছে ভারত। সব মিলিয়ে, ভারত এখন ডিজিটাল বিপ্লবের মঞ্চ তৈরি করছে।
তথ্য প্রযুক্তির হাত ধরে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন প্রজন্মের উপর ভরসা রেখেছেন। ইনোভেশনের শক্তি অনুযায়ী এখন ইউপিআই- ভীম, ডিজিটাল পেমেন্ট, ফিনটেকের বিশ্বে ভারত নিজের জায়গা করে নিয়েছে। আজ বিশ্বে রিয়েল টাইম চল্লিশ শতাংশ ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন ভারতে হয়। দেশ এখন ফাইভ জি-পর্বে পা রেখেছে। ভারতের গ্রামে গ্রামে এখন অপটিক্যাল ফাইবারের নেটওয়ার্ক পৌঁছে যাচ্ছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন গ্রাম থেকেই বাস্তবায়িত করার উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের চার লক্ষ কমন সার্ভিস সেন্টার গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠছে। গ্রামের নবীন যুবক-যুবতীরা কমন সার্ভিস সেন্টার চালাচ্ছেন। দেশ গর্ব করতে পারে যে গ্রামীণ ক্ষেত্রে চার লক্ষ ‘ডিজিটাল এন্টারপ্রেনিউর’ তৈরি হয়েছে। গ্রামীণ ভারতও এখন ‘টেকনোলজি হাব’-এর জন্য প্রস্তুত বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।