Vishnu Temple: হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, সম্ভলের জামা মসজিদ আদতে হল হিন্দু দেবতার কল্কির অবতরণ ভূমি…
বিষ্ণু মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ হয়েছে উত্তর প্রদেশে। সংগৃহীত চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মুঘল সম্রাট বাবরের নির্দেশেই কি সম্ভলের বিষ্ণু মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে? ১৮৭৫ সালের এএসআই (ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ) এবং বাবরনামা কি বলছে? উল্লেখ্য ভারতের প্রাচীন মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরির ঘটনা নতুন কিছু নয়। বাবরি মসজিদ থেকে জ্ঞানবাপি, মথুরার শাহি ইদগাহ্ থেকে বাংলার আদিনা মসজিদ, সবক্ষেত্রে মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণের নানা দৃষ্টান্ত উঠে এসেছে সংবাদ মাধ্যমের পাতায়। উত্তরপ্রদেশের সম্ভলের জামা মসজিদ (Jama Masjid Sambhal) হিন্দু মন্দির (Vishnu Temple) ছিল বলে মামলা দায়ের হয়। যার প্রেক্ষিতে সেখানে জরিপের নির্দেশ দেয় আদালত। রবিবার এএসআই-এর পক্ষ থেকে মসজিত জরিপের কাজ করতে গেলে স্থানীয় উগ্র মুসলিম জনতা ব্যাপকভাবে পাথর-ইট বর্ষণ করে। ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। নামানো হয় বিরাট পুলিশ বাহিনী। এখন যে মসজিদ নিয়ে বিবাদ, তার সম্পর্কে বিস্তৃত রিপোর্টে কি ধরনের তথ্য উঠে এসেছে শুনলে চমকে যাবেন।
ভগবান কল্কিকে ভগবান বিষ্ণুর দশম এবং শেষ অবতার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। হিন্দু শাস্ত্রের বিশ্বাস অনুসারে, কল্কি কলিযুগ শেষ করে সত্যযুগ শুরু করতে সম্ভলে আবির্ভূত হবেন। বিভিন্ন যুগে সম্ভলের বিভিন্ন নাম ছিল। একে সত্যযুগে সম্ভলেশ্বর, ত্রেতাযুগে মহাদগিরি, দ্বাপর যুগে পিংলা এবং কলিযুগে সম্ভল বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এই স্থানেই বিষ্ণুর মন্দির নির্মাণ হয়। পরে মুসলমান শাসনে মন্দির ভেঙে মসজিদ (Jama-Masjid-Sambhal) নির্মাণ হয়।
১৮৭৫ সালে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ জামা মসজিদের (Jama Masjid Sambhal) আসল তথ্য তুলে ধরেছিল। ‘ট্র্যাভেলস ইন দ্য সেন্ট্রাল দোয়াব অ্যান্ড গোরখপুর ১৮৭৪-৭৫ এবং ১৮৭৫-৭৬’-এর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, “মসজিদের ভিতরে ও বাইরে স্তম্ভগুলি প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের। সেগুলি প্লাস্টার দিয়ে লুকোনোর চেষ্টা করা হয়েছিল। মসজিদের স্তম্ভগুলির একটি থেকে প্লাস্টার সরানো হলে প্রাচীন লাল রঙের হিন্দু মন্দিরের নকশা বেরিয়ে আসবে। স্তম্ভের নকশা হিন্দু স্মৃতি চিহ্নবহ। মসজিদের গম্বুজ হিন্দু সম্রাট পৃথ্বীরাজ চৌহানের আমলে নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদে এমন অনেক নিদর্শন রয়েছে যাতে স্পষ্ট এটি এককালে প্রাচীন হিন্দু মন্দির ছিল।”
এই রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তৎকালীন কর্তা এসিএল কার্লাইল। তিনি স্পষ্ট করে আরও বলেন, “সম্ভলের প্রধান ভবনটি হল জামা মসজিদ, যা হিন্দুরা মূলত হরি মন্দির (Vishnu Temple) বলে দাবি করে। এটি একটি কেন্দ্রীয় গম্বুজ বিশিষ্ট ২০ ফুট বর্গাকার কক্ষ নিয়ে গঠিত, যার দুটি ডানা অসম দৈর্ঘ্যের। উত্তর দিকের একটি অংশ ৫০ ফুট ৬ ইঞ্চি, যখন দক্ষিণ দিকের অংশ মাত্র ৩৮ ফুট ১.৫ ইঞ্চি। উভয় অংশে তিনটি খিলানযুক্ত দরজা রয়েছে। যার সবকটিই বিভিন্ন প্রস্থের, ৭ ফুট থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত পরিবর্তিত।” উল্লেখ্য সম্প্রতি স্থানীয় আদালত মসজিদ সমীক্ষা কাজের নির্দেশ দিয়েছে। এই সমীক্ষার রিপোর্ট দেওয়া হবে আগামী ২৯ নভেম্বর।
সম্ভলের শাহি জামা মসজিদ (Jama Masjid Sambhal) সম্পর্কে হিন্দু পক্ষের দাবি হল, এই নির্মাণ আদতে হিন্দু দেবতা হরিহরের। এএসআই সমীক্ষা করে জানিয়েছে, মসজিদ আদতে মন্দির ছিল। ব্রিটিশ রাজত্বের সময় এএসআই সার্ভে করে ১৮৭৫ সালে মসজিদ থেকে পুরাতন পুঁথির সন্ধান পেয়েছে, যা হিন্দু সংস্কৃতির আরও বড় প্রমাণ। একই ভাবে মসজিদের একটি শিলালিপি থেকে জানা গিয়েছে, ৯৩৩ হিজরিতে মসজিদ নির্মাণ করেছিল মীর হিন্দু বেগ। মীর ছিল বাবরের দরবারের লোক। এক হিন্দু মন্দিরকে মসজিদে পরিণত করে এই মুসলমান সেনা।
হিন্দু পক্ষের তরফে বিবাদের আবেদনকারী হরিশঙ্কর জৈন বাবরনামার উল্লেখ করে বলেন, “এই বাবরনামা বাবর স্বয়ং লিখেছেন। ব্রিটিশ প্রাচ্যবিদ অ্যানেট বেভারিজ সেটি নিজে অনুবাদ করেছেন। পুস্তকের ৬৮৭ পৃষ্ঠায় লেখা আছে, বাবরের নির্দেশ মীর হিন্দু বেগ সম্ভলের হিন্দু মন্দিরকে জামা মসজিদে (Jama Masjid Sambhal) রূপান্তর করেছিল। প্রাপ্ত শিলালিপির সঙ্গে এই তথ্য মিলে গিয়েছে। তাতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে মীর হিন্দু বেগ ৯৩৩ হিজরিতে এই মসজিদ নির্মাণ করেছে।
সম্ভলের জেলা আদালতে একটি পিটিশন দায়ের করা হয় প্রথমে। পিটিশনে বলা হয়েছে সম্ভলে অবস্থিত জামা মসজিদটি (Jama Masjid Sambhal) শতাব্দী প্রাচীন শ্রী হরিহর মন্দিরের (Vishnu Temple) উপর নির্মিত হয়েছে। এটি কার্যত ভগবান কল্কিকে উৎসর্গ করা হয়েছিল এবং মুসলমান শাসক বাবর তা ধ্বংস করে দিয়েছিল। আবেদনকারীরা বলেছেন, স্থানটি হিন্দুদের জন্য ধর্মীয় তাৎপর্য রাখে এবং মুঘল আমলে জোর করে একটি মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এই আবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং অ্যাডভোকেট বিষ্ণু শঙ্কর জৈনের বাবা, হরি শঙ্কর জৈন, নয়ডার পার্থ যাদব এবং অন্যান্য আবেদনকারীরা মামলা দায়ের করেছেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।