বিজেপির ইস্তাহারে কী কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে জানেন?...
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাঙালির নববর্ষ। ১৪ এপ্রিল জন্মেছিলেন সংবিধান প্রণেতা তথা দেশের প্রথম আইনমন্ত্রী বি আর অম্বেডকর। এহেন শুভ দিনেই লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Elections 2024) ইস্তাহার প্রকাশ করল বিজেপি। যার পোশাকি নাম ‘সঙ্কল্পপত্র’। ‘ন্যায়পত্র’ নাম দিয়ে ইস্তাহার প্রকাশ করেছে গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি কংগ্রেসও। তবে সেখানে গালভরা প্রতিশ্রুতি থাকলেও, কীভাবে তা পূরণ হবে, তার কোনও নির্দিষ্ট দিশা নেই। আর ‘সঙ্কল্পপত্রে’ যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলি কীভাবে বাস্তবায়িত করা হবে, সেই মার্গও দর্শানো হয়েছে। বিজেপির ইস্তাহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী তথা ইস্তাহার কমিটির হোতা রাজনাথ সিংহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা।
‘সঙ্কল্পপত্রে’র প্রথমেই সুনিশ্চিত করা হয়েছে দেশবাসীর খাদ্য নিরাপত্তা। ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, “২০২০ সাল থেকে আমরা ৮০ কোটিরও বেশি নাগরিককে নিখরচায় রেশন সামগ্রী বিলি করছি। পিএম গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় আগামী পাঁচ বছরও মুফতে মিলবে রেশন সামগ্রী।” ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে দরিদ্রদের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিখরচায় চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হবে (Lok Sabha Elections 2024)। এই প্রকল্পে এবার প্রবীণ নাগরিক ও ট্রান্সজেন্ডারদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। পিএম আবাস যোজনায় বাড়ি দেওয়া হবে প্রতিটি গরিব পরিবারকে। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবেন নলবাহিত পানীয় জল। প্রকল্পের নাম ‘হর ঘর নল সে জল’।
১৫ নম্বর পৃষ্ঠায় তিন কোটি গ্রামীণ মহিলাকে ‘লাখপতি দিদি’ বানানোর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। ৫৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে নিখরচায় ইন্ড্রাস্ট্রি-ফোকাসড কোর্স করানো হবে। স্বল্প আয়ের পরিবারের লোকজন এতে উপকৃত হবেন। ১৩ পৃষ্ঠায় নয়া-মধ্যবিত্তদের রোজগার বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের স্ট্যান্ডার্ড অফ লিভিং যাতে উন্নত হয় সেই সাহায্য করা হবে। গত দশ বছরে সৃষ্টি হয়েছে এই নয়া মধ্যবিত্ত শ্রেণির।
আরও পড়ুুন: জট কাটল জয়শঙ্করের ফোনে, আটক ভারতীয় জাহাজিদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি ইরানের
রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রকে স্বচ্ছ ও সিটিজেন-ফ্রেন্ডলি করতে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি অ্যাক্ট ২০১৬-কে (Lok Sabha Elections 2024) আরও পোক্ত করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। ১৪ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, টু-টায়ার ও থ্রি-টায়ার শহরগুলিতে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম প্রসারে সাহায্য করা হবে। খোলা হবে নতুন আইআইটি, এইমস এবং আইআইএমএস। মধ্যবত্তি শ্রেণির মানুষের জীবন যাতে অনায়াস হয়, তাই ব্যবহার করা হবে প্রযুক্তির। জনওষুধি কেন্দ্রের মাধ্যমে যে ভর্তুকিযুক্ত ওষুধ সহবরাহ করা হচ্ছিল, তা চলবে। গড়া হবে নয়া মেডিক্যাল কলেজও। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ যাতে আরও বেশি করে উন্নত মানের চিকিৎসা পরিষেবা পান, সেই জন্যই এহেন উদ্যোগ পদ্ম-পার্টির।
দেশের তরুণদের ক্ষমতায়নের দিশা দেখানো হয়েছে ১৮ নম্বর পৃষ্ঠায়। ‘স্টার্টআপ ইন্ডিয়া সিড ফান্ড স্কিম’ ও ‘স্টার্টআপ ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমে’ ফান্ডিং বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। মুদ্রা লোন লিমিটের (তরুণ ক্যাটেগরি) পরিমাণ ১০ লাখ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। জাতীয় শিক্ষা নীতির ওপরও জোর দিয়েছে বিজেপি। সঙ্কল্পপত্রের ৬০ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, শিশুদের উন্নত শিক্ষা দিতে ‘পিএম শ্রী স্কুল’, ‘একলব্য স্কুল’ এবং এই ধরনের অন্যান্য স্কুলগুলিকে বিশ্বমানের গড়ে তোলা হবে। অটোমেটিক পার্মানেন্ট অ্যাকাডেমিক অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রির মাধ্যমে ‘এক দেশ, এক স্টুডেন্ট আইডি’র ব্যবস্থা করা হবে। ৫৭ পৃষ্ঠায় আরও বেশি করে এইমস এবং মেডিক্যাল কলেজ তৈরি এবং সেগুলিতে পড়ুয়াদের জন্য আসন সংখ্যাও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
‘কিষান নিধি যোজনা’য় কৃষকদের বার্ষিক ৬ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ধানের মতো প্রধান শস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোরও। ভারতকে বিশ্বের নিউট্রিহাবে পরিণত করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। মিলেট চাষেও উৎসাহ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল বীজ সরবরাহের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। ৩১ নম্বর পৃষ্ঠায় ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বাড়াতে সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। খাদির পুনরুজ্জীবনের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। ভারতকে ‘গ্লোবাল টয় হাবে’ পরিণত করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
ভারতকে ‘গ্লোবাল লিডার’ বানানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ৩৫ নম্বর পৃষ্ঠায় (Lok Sabha Elections 2024)। বলা হয়েছে, রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারত যাতে স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে, তার চেষ্টাও করা হবে। সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের বিরুদ্ধ জারি থাকবে লড়াই। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে ইস্তাহারে। বিশ্বে যোগ এবং আয়ুর্বেদ চিকিৎসা প্রমোট করা হবে। ৪০ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় তিন নম্বরে নিয়ে যাওয়া হবে। ভারতের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। অযোধ্যার উন্নয়ন, ভারতীয় ম্যানুস্ক্রিপ্টের ডিজিটাইজেশন এবং ভারতীয় সংস্কৃতি কোষের উন্নয়নে গেরুয়া পার্টির দায়বদ্ধতার কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
The BJP's Sankalp Patra provides a comprehensive overview of the NDA Government's achievements and charts the vision for building a Viksit Bharat by 2047.https://t.co/RwlzXLoxIj
— Narendra Modi (@narendramodi) April 14, 2024
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে ইস্তাহারের ৩৮ নম্বর পাতায়। এ প্রসঙ্গে ২০১৬-র ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ এবং উনিশের ‘এয়ার স্ট্রাইকে’র কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ইমপ্লিমেন্টেশনও নিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সিএএ লাগু করতে গিয়ে বিজেপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা পূরণ করা হবে। লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে দেশে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ লাগুর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ইস্তাহারের ৫৪ পৃষ্ঠায়।
বিজেপি ফের ক্ষমতায় এলে ডিজাইন, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং কবচ ট্রেন প্রোটেকশন সিস্টেম প্রসারিত করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। ৬জি প্রযুক্তির বিকাশ, দুলাখ গ্রাম পঞ্চায়েতকে ভারত নেটের আওতায় নিয়ে আসা, হাইস্পিড ইন্টারনেট অ্যাকসেসের সুবিধা দানের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে ইস্তাহারে। ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ চালু করতে যে কমিটি গড়া হয়েছিল, তার সুপারিশ বাস্তবায়িত করার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে (Lok Sabha Elections 2024)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।