EVM: ইভিএম কীভাবে কাজ করে জানেন?...
প্রতীকী ছবি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: লাটে উঠেছে ব্যালট। এখন ভোটগ্রহণ হয় ইভিএমে। কেবল বোতাম টিপেই পছন্দের প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের পক্ষে মতদান করা যায় (Lok Sabha Elections 2024)। প্রার্থী পছন্দ না হলে নোটা বোতামে চাপ দেন অনেকেই। এবার আসুন, জেনে নেওয়া যাক কীভাবে কাজ করে ভোট নেওয়ার এই যন্ত্র।
‘ইভিএম’ হল ‘ইলেক্ট্রনিক্স ভোটিং মেশিন’। এর তিনটি ইউনিট থাকে। প্রথমটি ভোটিং ইউনিট বা ব্যালট ইউনিট। দ্বিতীয় ইউনিটটি হল ভিভি প্যাট মেশিন বা ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেইল। আর তিন নম্বর ইউনিটটি হল কন্ট্রোল ইউনিট। এই তিনটি ইউনিটের মধ্যে ব্যালট ইউনিট ও ভিভি প্যাট বসানো থাকে ভোট কেন্দ্রের ভিতর যে অংশটি চট দিয়ে ঘেরা থাকে, সেখানে। এই ঘেরাটোপের ভিতরে ঢুকেই ভোট দেন ভোটার। কন্ট্রোল ইউনিটটি থাকে পোলিং অফিসারের কাছে (Lok Sabha Elections 2024)।
ভোটারের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করার পর পোলিং অফিসার বা প্রিসাইডিং অফিসার একটি বোতাম টিপলে ব্যালট ইউনিটটি অ্যাক্টিভেট হয়। অর্থাৎ ভোট গ্রহণের জন্য মেশিন প্রস্তুত। ভোটারকে এটা জানান দিতে একটা আলো জ্বলবে। এবার ভোটার তাঁর পছন্দের প্রার্থী ও তাঁর প্রতীকের পাশের বোতাম টিপবেন। পাশের ভিভি প্যাটের ভিতরে থাকা একটি কাগজে ওই প্রতীক ও প্রার্থীর নাম ফুটে উঠবে। এটি দেখার জন্য ভোটার সময় পাবেন মাত্র সাত সেকেন্ড। তার পর ফের ভিভি প্যাট এবং ব্যালট ইউনিট অন্ধকার হয়ে যাবে। অর্থাৎ স্লিপিং মোডে চলে যাবে মেশিন। পরের ভোটার এলে এবং পোলিং অফিসার বা প্রিসাইডিং অফিসার একটি বোতাম টিপলে আবারও সক্রিয় হবে মেশিন।
মনে রাখতে হবে, ভোটার একবার কোনও বোতামে চাপ দেওয়ার পর আর যতবারই অন্য যে কোনও বোতামই টিপুন না কেন, মেশিন আর কাজ করবে না। কারণ ব্যালট ইউনিট ও ভিভিপ্যাটের জিয়ন কাঠি রয়েছে প্রিসাইডিং অফিসারের সামনে থাকা কন্ট্রোল ইউনিটের একটি বোতামেই। তাই বুথে ঢোকার আগেই ভোটারকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে হবে তিনি কোন প্রার্থীকে ভোট দিতে চান, নাকি নোটার বোতাম টিপতে চান। ইভিএম চলে ব্যাটারিতে। তাই হঠাৎ করে পাওয়ার কাট কিংবা লোডশেডিং হলেও, ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে না। ইভিএমে যে ডেটা জমা হয়েছে, তাও নষ্ট হবে না। এই ইভিএমের সঙ্গে ব্লু-টুথ, পেন ড্রাইভ, ইউএসবি পোর্ট বা ওয়াইফাই কানেকশনও করা যাবে না ইভিএমের কোনও ইউনিটের সঙ্গেই। অর্থাৎ ভোটারের ভোট সুরক্ষিত।
মনে রাখতে হবে, ইভিএমের তিনটি ইউনিট ইন্টার-কানেক্টেড থাকে ইভিএমের নিজস্ব পোর্ট দিয়ে। ইউনিটের পিছনে থাকে অন-অফ সুইচ। পোর্টেবল মোড আর ওয়ার্কিং মোড বাটন। কন্ট্রোল ইউনিটে বোতাম টিপলে সেখানে লাল আলো জ্বলবে। ব্যালট ইউনিটে জ্বলবে সবুজ আলো। ভোট দেওয়া হয়ে গেলে একটি শব্দ শুনতে পাবেন। ভিভিপ্যাটে চোখ রাখলেই দেখবেন সেখানেও জ্বলেছে আলো। একটি এটিএম কাগজের মতো কাগজ ঝুলছে, সেখানে ছাপা হয়েছে কোথায় পড়ল আপনার ভোট। ভোটার জানতে পারলেন, যে প্রার্থীর পক্ষে মতদান করেছেন তিনি, সেখানেই ভোট পড়েছে।
নির্বাচন শুরু হয় সকাল সাতটায়। তার আগে চলে মক ভোট পর্ব। ইভিএম যে ঠিকঠাক আছে, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয় প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদেরও। সমস্ত প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের উপস্থিতিতে প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং এজেন্টরা অন্তত ৫০টি ভোটের একটি মক পোলিং করেন। প্রত্যেকে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নির্দিষ্ট সংখ্যাক ভোট দেন। নির্দল প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট না থাকলেও প্রিসাইডিং অফিসার পোলিং অফিসার নির্দল প্রার্থীকে ভোট দিয়ে দেখে নেন। সব শেষে হিসেব মিলিয়ে দেখে নেওয়া হয় মোট পোলড ভোট আর প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা মিলছে কিনা। ইভিএমে কোনও ত্রুটি থাকলে, বদলে ফেলা হয় মেশিন।
আর পড়ুন: ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটে’র 'হারানো সন্তান'রা পালন করেন হিন্দুধর্ম!
প্রশ্ন হল, এই নির্বাচনী মহাযজ্ঞের খরচ কত? একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। একটা ব্যালট ইউনিটের দাম ৭ হাজার ৯০০ টাকা, কন্ট্রোল ইউনিটের দাম ৯ হাজার ৮০০ টাকা, ভিভিপ্যাটের দাম ১৬ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে নির্বাচন হবে ৫৪৩টি লোকসভা কেন্দ্রে। ভোটার রয়েছেন ৯৭ কোটি। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, এবার লোকসভা নির্বাচন সম্পন্ন করতে খরচ হবে ১ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ একটি ভোটের মূল্য ১ হাজার ৩১ টাকা। বিপুল পরিমাণ এই খরচ বহন করেন দেশবাসীই, ট্যাক্সের মাধ্যমে। তাই ভোট (Lok Sabha Elections 2024) না দেওয়াটা কোনও কৃতিত্বের কথা নয়। বুথে গিয়ে ভোট দিন পছন্দের প্রার্থীকে। মজবুত করুন বিশ্বের বহত্তম গণতন্ত্রের ভিত।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।