Prayagraj: ভক্তরা পাবেন বিশুদ্ধ বাতাস, প্রয়াগরাজে ‘জাপানি মিয়াওয়াকি’ পদ্ধতিতে গড়ে উঠেছে ঘন অরণ্য
প্রয়াগরাজজুড়ে ঘন অরণ্য (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ১৩ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে মহাকুম্ভ (Mahakumbh 2025)। চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মনে করা হচ্ছে, মহাকুম্ভকে কেন্দ্র করে প্রয়াগরাজে জড়ো হতে পারেন ৪০ থেকে ৪৫ কোটি ভক্ত। মহাকুম্ভকে সাফল্যমণ্ডিত করতে প্রস্তুতি তুঙ্গে চলছে। ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার বেশ কতগুলি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেছে, যাতে এই মহাকুম্ভ পরিবেশবান্ধব হতে পারে। এর মাধ্যমে সারা পৃথিবীর কাছে এক বার্তা পৌঁছে দিতে চায় যোগী আদিত্যনাথ সরকার। বার্তাটি হল, বিশ্বের এত বড় ইভেন্টকেও পরিবেশবান্ধব রাখা যায় এবং পরিবেশের কোনও রকমের ক্ষতি না করে, সেটিকে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায়। আর এই লক্ষ্যেই জাপানি প্রযুক্তি (Mahakumbh 2025) ব্যবহার করে প্রয়াগরাজের (Prayagraj) আশেপাশে ইতিমধ্যে ঘন অরণ্য গড়ে তোলা হয়েছে। স্বল্প পরিসরে ঘন অরণ্য তৈরির পদ্ধতিকে কাজে লাগানো হয়েছে। যার পোশাকি নাম 'জাপানি মিয়াওয়াকি' পদ্ধতি। এর ফলে বিশুদ্ধ বাতাস এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ পাবেন ভক্তরা।
প্রসঙ্গত, যে স্থানে কুম্ভ হচ্ছে সেটি দেখভাল করে প্রয়াগরাজ পুরসভা। সেই কর্পোরেশন কুম্ভ মেলাকে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশ বান্ধব গড়ে তুলতে জাপানি প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছে। জানা গিয়েছে, এক্ষেত্রে কাজে ব্যবহার করা হয়েছে 'জাপানি মিয়াওয়াকি' পদ্ধতি। এই প্রযুক্তির সাহায্যে ঘন অরণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। যা অক্সিজেন ব্যাঙ্কের কাজ করবে। যোগী আদিত্যনাথ সরকারের এই প্রয়াসে শুধুমাত্র প্রয়াগরাজে যে সবুজায়ন হয়েছে এমনটাই নয়, এর পাশাপাশি সেখানকার বাতাসও অনেক উন্নত হয়েছে। খুবই ভালো হয়েছে বাতাসের গুণগত মান। এর মাধ্যমে যোগী আদিত্যনাথ সরকার গোটা প্রয়াগরাজে একটি স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে তুলতে পেরেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মহাকুম্ভকে সফল করতে এটি যোগী আদিত্যনাথ সরকারের একটি বড় প্রয়াস।
এ বিষয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতামতও সামনে এসেছে। এমনই একজন হলেন ডক্টর এনবি সিং। যিনি এলাহাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক। উদ্ভিদ বিদ্যা বিষয়ের এই অধ্যাপক সারা প্রয়াগরাজেই পরিচিত। তাঁকে বলা হয় 'গ্রিনারি গুরু' বা 'সবুজ গুরু'। কারণ একাধিক পদক্ষেপ তিনি করেছেন সবুজায়নের ওপর। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতেও অনেক কাজ করেছেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত দূষণ বাড়ছে এবং বেড়ে চলেছে তাপমাত্রা। এর কারণ হচ্ছে বনাঞ্চল ধ্বংস করে শহর গড়া।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক বেশ কয়েক বছর ধরেই তীব্র তাপমাত্রা বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। শুধুমাত্র তাই নয়, এই সময়ে মেরু অঞ্চলের বরফও গলে যেতে শুরু করেছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, এর অন্যতম কারণ হল গাছ কাটা এবং বনাঞ্চল ধ্বংস। তবে এলাহাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ের অধ্যাপক ডঃ এনবি সিং মনে করেন যে 'জাপানি মিয়াওয়াকি' পদ্ধতি প্রযুক্তি হল একটি দুর্দান্ত টেকনিক, যার মাধ্যমে এই সমস্ত সমস্যাগুলির সমাধান করা যায়। তিনি আরও জানিয়েছেন, দ্রুত ঘন অরণ্যের বৃদ্ধি কিভাবে করা যাবে সেই উপায় বাতলে দেয় এই জাপানি টেকনিক। এই পদ্ধতির মাধ্যমে দিন ও রাতে তাপমাত্রার ফারাকও অনেকটাই কমে যায়, বিশেষত গ্রীষ্মকালে। জাপানি প্রযুক্তিতে বনাঞ্চল বৃদ্ধির এই পদ্ধতিতে একটি স্বাস্থ্যকর জীববৈচিত্র গড়ে ওঠে। শুধুমাত্র তাই নয়, এর পাশাপাশি মাটির গুণগত মান অনেকটা বেড়ে যায় এবং তা চাষযোগ্য হয়। একই সঙ্গে বনাঞ্চলগুলি অজস্র প্রাণী ও পাখির বাসভূমিও হয়ে ওঠে। জানা গিয়েছে, কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় যদি বনাঞ্চল থাকে, তাহলে সেখানকার তাপমাত্রা এমনিতেই চার থেকে সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যায়। এর পাশাপাশি 'জাপানি মিয়াওয়াকি' পদ্ধতিতে আরও একাধিক সুবিধা পাওয়া যায় যা পরিবেশের পক্ষে খুবই উপযোগী।
মহাকুম্ভকে (Mahakumbh 2025) পরিবেশবান্ধব গড়ে তুলতে এবং প্রয়াগরাজের বাতাসের গুণগত মানকে বাড়াতে সেখানকার পুরসভা শহরের দশটি স্থানকে বেছে নেয়। এখানে 'জাপানি মিয়াওয়াকি' পদ্ধতির মাধ্যমে মোট ৫৫ হাজার ৮০০ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে বিগত দু'বছর ধরে চারা গাছ রোপন করা হয়। এই গোটা প্রকল্পের তদারকি করেন ইঞ্জিনিয়ার গিরিশ সিং। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চারা গাছ রোপন করেছিলাম প্রয়াগরাজের নৈনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অঞ্চলে। বছর দুই আগে। এই প্রত্যেকটি চারাগাছই বর্তমানে দশ থেকে বারো ফুট লম্বা হয়ে উঠেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নৈনি শিল্পক্ষেত্রের ওই জায়গাতে বর্জ্য পড়ে থাকত। প্রথমে শিল্পের বর্জ্যগুলিকে সেখান থেকে সরানো হয়। তারপরে মাটির গুণগত মান বাড়ানো হয় এবং সেখানে জৈব সার ফেলা হয়। তারপরেই বৃক্ষরোপণ করা হয়।’’ অন্যদিকে আর এক জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আর কে মিশ্রা বলেন, ‘‘এইভাবে বনাঞ্চল বৃদ্ধির ফলে গোটা এলাকাতে তাপমাত্রা অনেকটাই কমে যাবে। কম জায়গার মধ্যে ঘন অরণ্য গড়ে তোলার পদ্ধতি হল জাপানি মিয়াওয়াকি প্রযুক্তি। মহাকুম্ভে যাঁরা আসবেন, তাঁরা এই সবুজায়নের সাক্ষী থাকবেন।’’
প্রসঙ্গত, প্রয়াগরাজে মিয়াওয়াকি প্রকল্প (Mahakumbh 2025) শুরু হয় ২০২০-২১ সাল থেকে। ২০২৩-২৪ সালে তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। পরিসংখ্যান বলছে, প্রয়াগরাজের নৈনি শিল্পক্ষেত্রের ৬৩টি স্থানের, ৩৪,২০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে এখনও পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার ৭০০ চারা গাছ রোপন করা হয়েছে। এত বিপুল পরিমাণে চারা গাছ রোপনকে মাইলস্টোন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একটা সময় ছিল যখন এই এলাকায় একটি বর্জ্য এলাকা বলেই পরিচিত ছিল। কারণ এখানে শিল্প বর্জ্যগুলিকে ফেলা হত। কিন্তু বর্তমানে তা পরিবেশবান্ধব এবং সবুজায়নের একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এর সবটাই হয়েছে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের উদ্যোগে।
প্রসঙ্গত, প্রয়াগরাজের সবথেকে বর্জ্য এলাকা ছিল বুসওয়ার এবং সেটিরও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে যোগী আদিত্যনাথের। এর পুরোটাই সম্ভব হয়েছে জাপানি মিয়াওয়াকি প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে। জানা গিয়েছে প্রয়াগরাজের ওই বর্জ্য এলাকায় এখনও পর্যন্ত নয় হাজার বর্গমিটার জুড়ে ২৭টি আলাদা আলাদা জায়গায় ২৭ হাজার চারা গাছ রোপন করা হয়েছে। বর্তমানে ওই স্থান একটি ঘন অরণ্যে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই উদ্যোগ শুধুমাত্র ঘন অরণ্য স্থাপনের জন্য নেওয়া হয়নি। তার পাশাপাশি গ্রীষ্মকালে যাতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি না পায় এবং বাতাস যাতে বিশুদ্ধ থাকে সেজন্যও নেওয়া হয়েছে। এই দুই স্থান ছাড়াও প্রয়াগরাজের আরও ১৩টি জায়গাতে জাপানি প্রযুক্তির সাহায্যে অরণ্য তৈরি করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
'জাপানি মিয়াওয়াকি' প্রকল্পের মাধ্যমে প্রয়াগরাজে শুধুমাত্র ঘন অরণ্যই স্থাপন করা হয়নি। এর মাধ্যমে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ করা আরও সহজ হয়েছে এবং এর পাশাপাশি সেখানকার স্থানীয় লোকজনেরও প্রচুর উপকার হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ঔষধি গাছ, ফলের গাছও রোপন করা হয়েছে। 'জাপানি মিয়াওয়াকি' প্রকল্পের আওতায় যে গাছগুলি রোপন করা হয়েছে, সেগুলি হল আম, মহুয়া, নিম, পিপল, অর্জুন, তুলসী আমলা ইত্যাদি। এর পাশাপাশি গুলমোহর, ব্রাহ্মী রোপন করা হয়েছে। লেবু, বাঁশ ইত্যাদি গাছও রোপন করা হয়েছে।
এবার আমরা জেনে নেব 'জাপানি মিয়াওয়াকি' প্রযুক্তির খুঁটিনাটি ব্যাপার। 'জাপানি মিয়াওয়াকি' প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠাতা হলেন, জাপানের এক উদ্ভিদবিজ্ঞানী। তাঁর নাম আকিরা মিয়াওয়াকি। ১৯৭০ সালে তিনি এই প্রযুক্তির আবিষ্কার করেন। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্প পরিসরে ঘন অরণ্য গড়ে তোলা সম্ভব হয়। খুবই কাছাকাছি গাছগুলিকে রোপন করা হয় এই পদ্ধতিতে। এরফলে খুব দ্রুত তারা বৃদ্ধি পায়। যে কোনও চারাগাছ রোপনের করার পরে সেটি বৃক্ষ হতে যত সময় লাগে, তার দশগুণ তাড়াতাড়িভাবে বাড়ে এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে। এর পাশাপাশি, এই পদ্ধতিতে বাড়ে মাটির গুণগত মান। উন্নত হয় জীববৈচিত্র্য। বনাঞ্চল খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বর্তমান দিনে শহর বাড়ছে। বাড়ছে শিল্প। এরফলে বাড়ছে তাপমাত্রা। এই আবহে পরিবেশের জীববৈচিত্র্যকে সঠিক রাখতে খুবই প্রয়োজন 'জাপানি মিয়াওয়াকি' পদ্ধতি, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রসঙ্গত, প্রয়াগরাজ পুর কমিশনার চন্দ্রমোহন এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা ঘন অরণ্য তৈরি করতে পেরেছি জাপানি প্রযুক্তির সহায়তায়।’’
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।