ভারতে রয়েছে জল সংরক্ষণের অভাব
water_crisis
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জল কষ্ট (Bangaluru water Crisis) রয়েছে এমন দেশগুলির তালিকায় শীর্ষে ঠাঁই ভারতের (India)। সম্প্রতি নীতি আয়োগের (Niti Ayog) রিপোর্টের এই সত্যতা স্বীকার করেছে কেন্দ্র। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২০% মানুষ বাস করে এদেশে অথচ সারা বিশ্বের মাত্র ৪ শতাংশ পানীয় জলের স্রোত রয়েছে ভারতে। দেশে যথেচ্ছ পরিকল্পনাহীন নগরায়নের ফলে বহু শহরে জলস্তর চিন্তাজনক ভাবে কমে গিয়েছে। দেশের প্রায় সমস্ত রাজ্যে হু হু করে বাড়ছে জনসংখ্যা (Population Explosion)। ফলে যত দিন যাচ্ছে মূল্যবান হয়ে উঠছে জীবনের অপর নাম জল। আগে রাজস্থানের (Rajsthan) বিভিন্ন শহর ও দিল্লি (Delhi), মুম্বাইয়ের (Mumbai) মত শহরে জলের হাহাকার ছিল। এখন সম্প্রতি সেই তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেঙ্গালুরুর মত শহর।
জল শক্তি মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে জনপ্রতি পানীয় জলের প্রাপ্যতা ৭৫ শতাংশ কমেছে। স্বাধীনতার সময় জনপ্রতি পানীয় জল প্রাপ্যতা ৬০৪২ কিউবিক মিটার ছিল। ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪৮৬ কিউবিক মিটারে। শুধু পানীয় জলের ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি হয়েছে এমনটা নয়। ব্যবহারযোগ্য অপরিশোধিত জলও কমেছে সারা দেশ জুড়ে। দেশের নানান প্রান্তে নদী ও জলাধারে জলস্তর চিন্তাজনক ভাবে কমেছে। ভারতে টানা তিন বছর খরার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বর্ষার পরিমাণ দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই কমেছে। করোনা কাল থেকেই বৃষ্টি কমেছে ভারতের পশ্চিম, মধ্য, উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণাত্যের কিছু অঞ্চলে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি কেন্দ্রীয় জল কমিশনের তরফে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তাতে জানানো হয়েছে শেষ পাঁচ বছরের মধ্যে এই মার্চ মাসে বিভিন্ন নদীবাঁধে ও জলাধারে যে পরিমাণ জল ছিল তা শেষ পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন স্তরে ছিল। এর জন্য এল-নিনো এফেক্টকে দায়ী করা হয়েছে। গত বছর বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম ছিল। ২০১৮ সালের পর বর্ষার পরিমাণ গত বছর রেকর্ড কম বর্ষা হয়েছিল।
জলবায়ু পরিবর্তন (Weather Change) ও জনবিস্ফোরণ ভারতের জন্য দ্বিমুখী যুদ্ধ। চলতিবছর তাপমাত্রা ভয়ানকভাবে বেড়েছে। অন্যদিকে কমেছে জলস্তর। শুধু নদীর বা জলাধার জল নয় ভূগর্ভস্থ জলও কমেছে। বেড়েছে ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক ও অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিকের পরিমাণ। বহু জায়গায় অপ্রত্যাশিত বর্ষার ফলে বন্যা হয়েছে। বিশেষ করে হিমালয়ের কোলে অবস্থিত বহু শহর এই সমস্যায় ভুগছে। মৌসম ভবনের পূর্বানুমান ছাড়াই হঠাৎ হঠাৎ করে অনেক জায়গায় মেঘ ফেটে বর্ষা হচ্ছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতবর্ষে ২০২৫ সাল নাগাদ ২৪ কোটি মানুষ অসম্ভব জলকষ্টের সম্মুখীন হবেন।
আরও খবর: বৃষ্টিতে ভিজবে শহর, পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতরের
জানা গিয়েছে, দেশের বিভিন্ন নগরে পানীয় জলের ৪৮% প্রয়োজন মেটে ভূগর্ভস্থ জল থেকে। ভূগর্ভস্থ জলের স্তর প্রতি বছর কমে যাচ্ছে। বহু শহরে এখন ভূগর্ভস্থ জলের ভান্ডার নেই বললেই চলে। বাধ্য হয়ে পুরসভা আশপাশের নদী থেকে জল নিয়ে এসে তা শোধন করে বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এরই মাঝে চিন্তা বাড়াচ্ছে কয়েকটি রাজ্যের মাঝে নদীর জলবণ্টন সমস্যা। যেমন কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্যে রয়েছে কাবেরী (Cauvery water dispute) নদী জল নিয়ে চুক্তি সংক্রান্ত সমস্যা। অন্যদিকে গোয়া (Goa) ও কর্নাটকের (Karnataka) মধ্যে মহাদয়ী নদী নিয়ে ঝামেলা লেগেই রয়েছে।
সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতবর্ষের বিভিন্ন শহরাঞ্চলের ৪০ শতাংশ মানুষের কাছে সরাসরি জলের কল (Tap water) নেই তারা এর জন্য আশপাশের বাড়ি ও সরকারি ব্যবস্থার উপরে নির্ভরশীল। এই শহর গুলিতে নদী, খাল ও পুকুর জলপানের অযোগ্য হয়েছে বহু আগেই। বিশেষজ্ঞরা দাবি করে এসেছেন ভারতবর্ষের শহরগুলিতে জলকষ্টের জন্য বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিকল্পনার অভাব। প্রতিবছর যে পরিমাণ বর্ষা হয় সেই জল নর্দমার মাধ্যমে প্রথমে নদী ও নদীর মাধ্যমে সাগরে মিশে যায়। পাহাড়ি অঞ্চলে জল সংরক্ষণ করার চল রয়েছে। কিন্তু সমতলের শহরে জল সংরক্ষণের অভাব রয়েছে। যদি সঠিক পরিকল্পনা করে বর্ষার জল ভূগর্ভে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে জলকষ্ট কয়েক বছরের মধ্যেই কমে যাবে। এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে ভারতবর্ষের শহরগুলিতে আগের তুলনায় খাল ও পুকুরের সংখ্যা কমে গিয়েছে। ফলে আগে যে পরিমাণ বর্ষার জল খাল কিংবা পুকুরের মাধ্যমে ফিরে যেত মাটির নীচে, বর্তমানে তা আর হচ্ছে না। বর্ষার জল ভূগর্ভে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্র সরকার স্তরে নীতিমালা নির্ধারণের প্রয়োজন আছে এবং নির্ধারিত নীতি পৌরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কার্যকর করলেই দেশের জল কষ্টের সমস্যা আগামী কয়েক বছরে কমে যাবে।
সেন্টার অফ ইকোলজিক্যাল সাইন্সের কো-অর্ডিনেটর ডঃ টি ভি রামচন্দ্র বেঙ্গালুরুর (Bengaluru water Crisis) জল কষ্ট সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, “বেঙ্গালুরুতে কংক্রিট এলাকা ১০৭৮ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে মাত্র কয়েক দশকে। ফলে ৮৮ শতাংশ সবুজ এলাকা নষ্ট হয়েছে। ৭৯ শতাংশ জলাশয় বুঝিয়ে ফেলা হয়েছে। ১৯৭৩ থেকে ২০২৩-এর মাঝে ৫০ বছরে যেভাবে অপরিকল্পিত নগরায়ন হয়েছে তাতে প্রশাসনের পরিপক্বতা ও সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কয়েক দশকে পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জল যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। তার ফলে শহরে আর কয়েক বছর পর পানীয় জলের স্রোত বলে আর কিছু থাকবে না।”
শুধুমাত্র বেঙ্গালুরু(Bengaluru water Crisis) নয়, লখনউ, ভাটিণ্ডা, জয়পুর ও পাটনার মত শহরেও জলের সমস্যায় ভুগছে মানুষ। পাটনার পাশেই গঙ্গা নদী থাকা সত্ত্বেও জলের সমস্যা রয়েছে। ভারতে সমস্যার সমাধান রয়েছে। কিন্তু সবই খাতায়-কলমে। পরিকিল্পিত নগরায়ন, প্রয়োজনীয় সবুজায়ন ও বর্ষার জল সংরক্ষণ করার জন্য যা পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তা স্থানীয় সরকার তরফে নেওয়া হচ্ছে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
Tags:
bengaluru water crisis
water scarcity
Drought conditions
Water shortage solutions
Sustainable water management
Water conservation techniques
Access to clean water
Global water crisis
Water stress
Water security
Water-saving tips
Water management strategies
Impact of climate change on water resources
Water crisis statistics
Water crisis causes
Water crisis effects on environment
Community water solutions
Rainwater harvesting
Desalination technologies
Groundwater depletion
Water infrastructure development