Muslim Population: অসমে মুসলিম জনবিস্ফোরণ, নেপথ্য কারণ কী জানেন?...
অসমে দ্রুত বাড়ছে মুসলমান জনসংখ্যা। ফাইল ছবি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দেশের উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির সিংহভাগই মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত। অসমকেও (Assam) সিংহভাগ দেশবাসী সেরকমই একটি রাজ্য হিসেবে চেনেন। তবে তাঁদের ধারণা ভুল। এক সময় অসম উপজাতি অধ্যুষিত (Muslim Population) একটি রাজ্য হলেও, বর্তমানে আর তা নয়। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে হু হু করে বাড়ছে মুসলমান জনসংখ্যার গ্রাফ। ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ। আগামী তিন দশকের মধ্যে অসম মুসলমানরাই হয়ে পড়বেন সংখ্যাগুরু। অসমের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কিছু দিন আগেই বলেছিলেন, “দু’দশকের মধ্যেই অসমে হিন্দু-মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় সমান সমান হয়ে যাবে।”
জানা গিয়েছে, মুসলমান জনসংখ্যার এই ‘হাইপে’র নেপথ্যে রয়েছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা। গত শতাব্দীতে দলে দলে বাংলাদেশি মুসলমান ঢুকেছে এ দেশে। তাই এ রাজ্যে তাদের জনসংখ্যাই বাড়ছে হু হু করে। প্রতিটি জনগণনায়ই দেখা যাচ্ছে, অসমে কমছে অসমিয়া ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা। দ্রুত কমছে তারা। এই জায়গাটা দখল করছে বাংলাভাষী মুসলমানরা। প্রতিটি দশকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তাদের সংখ্যা। যাঁরা বামপন্থী ঘরানার, তাঁরা বলবেন এর কারণ অনুপ্রবেশ নয়। তবে বাস্তব বলছে অন্য কথা (Assam)। জানা গিয়েছে, এ দেশে যত অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশ থেকে ঢোকে, তার সিংহভাগই ঢোকে অসম দিয়ে।
আরও পড়ুন: লাভ জিহাদ বন্ধে কঠোর আইন আনছে যোগী সরকার, কী আছে বিলে জানেন?
অসমে যে ক্রমেই মুসলমান জনবিস্ফোরণ আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়েছে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। দিন কয়েক আগে তিনি বলেছিলেন, “এই মুহূর্তে অসমের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই মুসলিম। ২০৪১ সালে মুসলিম প্রধান রাজ্য হয়ে উঠবে অসম। এটাই বাস্তব। কেউ থামাতে পারবে না।” তিনি বলেছিলেন, “১০ বছরে ১৬ শতাংশ করে হিন্দু জনসংখ্যা বাড়ছে এ রাজ্যে। আমাদের সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে জনসংখ্যা কমানোর পদক্ষেপও নিয়েছে।” তিনি বলেন, “মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে কংগ্রেসের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রাহুল গান্ধী যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্র্যান্ড অ্যাস্বাসাডর হন, তাহলে তা সম্ভব হবে। কারণ এই ধর্মের মানুষ কেবল তাঁর কথা শোনে।” অসমের মতোই অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ঘেঁষা রাজ্য ঝাড়খণ্ডেরও। বাংলা হয়ে সেখানেও ঢুকছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা। উপজাতি সম্প্রদায়ের তরুণীদের বিয়ে করে দখল করছে জমি-জিরেত। যার জেরে ঝাড়খণ্ডেও বদলে যাচ্ছে ডেমোগ্রাফি। মাটি হারাচ্ছেন উপজাতির লোকজন। ঘাঁটি গাড়ছে বাংলাদেশি মুসলমানরা। সেই ঝাড়খণ্ডের মাটিতেই দাঁড়িয়ে অসমের ভয়ঙ্কর ছবিটা তুলে ধরেছেন হিমন্ত।
মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ মেলে গত কয়েকটি সেনসাসের রিপোর্ট দেখলেই। ২০১১ সালে অসমে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ১,৯১,৮০,৭৫৯। মুসলমান ছিল ১.০৬,৭৯,৩৪৫। ২০২১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা ২,১২,৬৯,৫৪৩। মুসলমান জনসংখ্যা ১,৩৮,৩৯,৩৬৩। ২০৩১ সালে এটা হতে পারে হিন্দু ২,৩৫,৮৫,৭৬৯। মুসলমান হতে পারে ২,৭৯,৩৪,৪৩১। ২০৪১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা হতে পারে ২,৬১,৫৪,২৯০। মুসলমান জনসংখ্যা হবে ২,৩২,৪১,২২২। ২০৫১ সালে এটাই হবে হিন্দু ২,৯০,০২,৪৯২। মুসলমান ৩,০১,১৮৩০৮। ১৯৫১ সালে ১৬ শতাংশ জনসংখ্যা বেড়ে অসমে হিন্দু জনসংখ্যা হবে ২ কোটি ৯০ লাখ। এই সময় ৩০ শতাংশ মুসলমান বেড়ে হবে ৩ কোটি। যার অর্থ, এ রাজ্যে মুসলমানরাই (Assam) হবে সংখ্যাগুরু। মুসলমানদের এই জনসংখ্যার (Muslim Population) একটা বড় অংশই অনুপ্রবেশকারী। যার জেরে ক্রমেই বিপন্ন হচ্ছে অসমিয়া ভাষা। গত কয়েক দশকে এর আকার হয়েছে ভয়ঙ্কর।
অসমের দুটি অংশ। দক্ষিণাংশটি পরিচিত বরাক ভ্যালি নামে। এখানে হিন্দু রয়েছেন ১২ লাখ। ব্রহ্মপুত্র ভ্যালিতে রয়েছে প্রায় ২৮ লাখ বাঙালি। ২০১১ সালের জনগণনায় দেখা গেল, ৯০ লাখ ২০ হাজার মানুষ নিজেদের বাংলাভাষী বলে দাবি করেছে। যার অর্থ হল, ৫০ লাখ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি, তাদের মাতৃভাষা বাংলা বলে জানিয়েছিলেন জনগণনাকর্মীদের। ১৯৯১ সালে ভাষাভিত্তিক জনগণনায় দেখা গিয়েছিল অসমিয়া ভাষায় কথা বলেন রাজ্যটির ৫৭.৮১ শতাংশ মানুষ। এর পরের দুদশকে দেখা গিয়েছে এই সংখ্যাটা বাড়ে তো নিই, উল্টে কমেছে। হয়েছে ৪৮.৩৭ শতাংশ। ওই সেনসাসেই জানা গিয়েছিল বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা ছিল ২১.৬৭ শতাংশ। ২০১১ সালে সেটাই বেড়ে হয়েছে ২৮.৯৩ শতাংশ।
ভাষা বদলের এই ছবি আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে নামনি অসমের বরপেটা, ধুবড়ি-সহ মুসলমান অধ্যুষিত ৭ জেলায়। ১৯৯১ সালের জনগণনায় দেখা গিয়েছে, ওই সাত জেলায় অসমিয়া ভাষায় কথা বলতেন ৫৩ লাখ ২৯ হাজার ২৯ জন। ২০১১ সালে এটাই বেড়ে হয়েছে ৫৭ লাখ ২০ হাজার ৪৬৬ জন। মাত্র ২০ বছরের ব্যবধানে ওই জেলাগুলিতেই বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১৫.৯৯ শতাংশ। এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, অসমে (Muslim Population) বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে (Assam)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।