বদলে যাচ্ছে অয্যোধ্যা! পুণ্যভূমি ঘুরে সেই চিত্রই তুলে ধরছেন আমাদের প্রতিনিধি
পুণ্য রাম জন্মভূমি অয্যোধ্যা। ছবি-শুভ্র চট্টোপাধ্যায়।
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, অযোধ্যা
২২ জানুয়ারি তো এখনও ঢের দেরি। নয় নয় করে আরও ২৮ টা দিন। কিন্তু সোমবার অযোধ্যায় (Ram Mandir) পা রাখতেই মনে হল, উৎসব শুরুই হয়ে গেছে। পুণ্যভূমির সর্বত্র শুধু ভগবান শ্রীরামচন্দ্র। দোকানে, বাড়ির দেওয়ালে, এমনকী বাড়ির দরজাতেও। বুঝতে অসুবিধা হল না, গোটা অয্যোধ্যা এখন রামচন্দ্রময়। জলে, স্থলে, আকাশে, বাতাসে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে একটাই ধ্বনি, 'জয় শ্রীরাম'। আগের অযোধ্যার সঙ্গে ফারাকও বিস্তর। ২২ জানুয়ারির সেই শুভ মুহূর্তটা যত এগিয়ে আসছে, কর্মব্যস্ততা ততই বাড়ছে। কারণ, প্রশাসনও জানে, ক'টা দিন পরই গোটা বিশ্ব হয়ে উঠবে অযোধ্যামুখী। তাঁদের আকৃষ্ট করতে প্রশাসনের চেষ্টার খামতি নেই।
রামের ঘরে ফেরা (Ram Mandir)
২৮টা দিন অয্যোধ্যাবাসীর কাছে অবশ্য কিছু নয়। অনেকের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা গেল, তাঁদের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। রাস্তাঘাট থেকে পুরাতন বাড়ি, সব জায়গায় চলছে সংস্কার। আমার মতো অযোধ্যায় পা রেখে যে কারও মনে হতেই পারে, হিন্দু সংস্কৃতির ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে অযোধ্যা (Ram Mandir)। বাড়ির দেওয়াল থেকে পার্ক, সর্বত্রই ছাপ সনাতন সংস্কৃতির। দোকানের দরজাতেও লেখা ‘জয় শ্রীরাম’। দেদার বিক্রি হচ্ছে রামচন্দ্র-হনুমানের ছবি আঁকা গৈরিক পতাকা। এ যেন সত্যিই রামের ঘরে ফেরা।
ভগবান রাম যেন সবার (Ram Mandir)
এখানকার মানুষ একটা বিষয় নিয়ে বেজায় খুশি। তা হল, এ শুধু রামের ঘরে ফেরাই নয়, অযোধ্যার (Ram Mandir) অর্থনীতিরও আমূল পরিবর্তন আসছে। রামসীতা-হনুমানের মূর্তি তৈরি করেন জনৈক সন্তোষ শর্মা। তাঁর চোখেমুখে যেন খুশি ঝরে পড়ছে। তাই প্রতিবেদককে অকপটেই বলে দিলেন, ‘‘আগের থেকে বিক্রি বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে।’’ রামনগরীতে ঢোকার মুখে দিব্য কুণ্ড জলাশয় বাঁধানোর কাজ চলছে। দেখলাম, সেটাও প্রায় শেষের দিকে। শ্রমিকরা বললেন, ‘‘গত ১ বছর ধরেই চলছে কাজ। আর কয়েক দিনেই সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।’’ প্রশাসনও নিরাপত্তার নিরিখে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। তাই পথের মোড়ে মোড়ে চোখে পড়ল পুলিশি ব্যারিকেড। বুঝলাম, নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হচ্ছে রামনগরী। অযোধ্যার অলি-গলি-তস্য গলি চষে বেড়িয়ে দেখলাম, কমবেশি সব বাড়ির ছাদেই উড়ছে শ্রীরামের ছবি বসানো পতাকা। কোনও ধনী-দরিদ্র ভাগ নেই। ভগবান রাম যেন সবার হয়ে উঠেছেন।
ফিরে পেয়েছে পুরনো মর্যাদা (Ram Mandir)
২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টে এফিডেফিট দাখিল করে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার জানিয়েছিল, রামের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু অযোধ্যার রাস্তাঘাট, পার্ক, জলাশয়, দোকান, বাড়ির ছাদ সবেতেই দেখা যাচ্ছে রামচন্দ্রকে। সন্ধ্যায় পুণ্যতোয়া সরযূ নদীর ধারে ভক্ত সমাগমই বলে দিচ্ছে আধ্যাত্মিক ভূমির (Ram Mandir) মাহাত্ম্য। জানা গেল, এখানে রোজই চলে সরযূ আরতি। চলতি বছরের দীপাবলি থেকে শুরু হয়েছে অযোধ্যায় লেজার শো। গোটা রামায়ণকে লাইট শো-এর মাধ্যমে প্রতিদিন সরযূ আরতির পরে দেখানো হয়। অযোধ্যা কি বদলে গিয়েছে? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্ন শুনে সরযূ-আরতি সমিতির সভাপতি মহারাজ শশীরকান্ত দাস বললেন, ‘‘আগে তো কেউই অযোধ্যা আসতেন না। দেশ থেকে পর্যটকদের ভিড় সেভাবে দেখাও যেত না। কারণ সবাই ভীত ছিলেন কখন ঝামেলা শুরু হয়ে যাবে! তখন অযোধ্যার প্রতি সবাই ছিলেন একেবারেই উদাস। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। মন্দির নির্মাণ হচ্ছে, যার অবদান, কৃতিত্ব অবশ্যই নরেন্দ্র মোদির। বদলেছে অযোধ্যা। পাঁচশো বছর পরে নগরী ফিরে পেয়েছে পুরনো মর্যাদা।"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।