সেজে উঠছে অযোধ্যা, রাম মন্দির উদ্বোধনের আগে ঘুরে দেখলেন আমাদের প্রতিনিধি শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, আজ দ্বিতীয় কিস্তি....
অযোধ্যায় চলছে রাম মন্দিরের নির্মাণ কাজ (ছবি সংগৃহীত)
রামনগরী অযোধ্যা-দুই
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, অযোধ্যা থেকে ফিরে: রাম মন্দির (Ram Mandir) চত্বরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল, মহা কর্মযজ্ঞ চলছে। যে দিকেই তাকাই, শুধু হলুদ হেলমেট আর কমলা জ্যাকেট পরা শ্রমিকরা কাজ করে চলেছেন। বড় সাইজের দুটো রোলার তখন উঁচু-নীচু জায়গা সমতল করতে ব্যস্ত। রোলার নিয়ন্ত্রণ করছেন একজন, নির্দেশ দিচ্ছেন অপরজন। বাঁশের তৈরি পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে পুরো মন্দিরের পাশে উলম্বভাবে। তাতেও অজস্র শ্রমিক শেষ মুহূর্তের ছোঁয়া দিচ্ছেন। শুকনো শীতকাল, তাই প্রচুর ধুলো। অনেকের মতো তাই মুখে মাস্ক বেঁধে ফেলতে হল। মন্দিরের ঠিক বাঁদিকেই আমরা দাঁড়িয়ে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ক্যামেরার ফোকাস ততক্ষণে আটকে গিয়েছে নব নির্মিত রাম মন্দিরের দেওয়ালে। গোটা চত্বর ঘুরে দেখাচ্ছেন ‘রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট’-এর সদস্যরা। হাজির রয়েছেন সম্পাদক চম্পত রাই সমেত উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্য়মন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য। মন্দির প্রাঙ্গণে আসার আগেই অবশ্য জানা গিয়েছিল, রাম মন্দির চত্বরে নির্মাণ হবে আরও ৭টি মন্দির (Ram Mandir)। ‘রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট’-এর ভবনেই সেকথা জানিয়েছিলেন ট্রাস্টের সম্পাদক চম্পত রাই। এবার ঘুরিয়ে দেখালেন মন্দিরগুলি ঠিক কোথায় গড়ে উঠবে। পাঠকের মনে এতক্ষণে প্রশ্ন জাগছে, রাম মন্দির চত্বরে আরও ৭টি মন্দির কার কার তৈরি হবে! এর উত্তর সেদিন সাংবাদিক বৈঠকেই জানিয়ে দেয় ‘রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট’। রামচন্দ্রের জীবনে অবদান রয়েছে, এমন ৭ জনের মন্দির তৈরি হচ্ছে প্রাঙ্গণে। তাঁরা হলেন, বাল্মিকী, বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, অগস্ত্য, মাতা শবরী, নিষাদরাজ গোহু, অহল্যা।
যুগ বদলাচ্ছে, বদলেছে দেশ। বাংলার কথা বলতে গেলে, রোজ দুপুরে ভাতঘুমের বদলে বড়রা রামায়ণ পাঠ করতেন এবং ছোটরা তা শুনত। সে অবশ্য অনেক আগের কথা। তারপর রামায়ণ টিভিতে এল। রামানন্দ সাগরের 'শো' দেখতে সাদাকালো টিভির সামনে বসত সবাই। এরপরে অবশ্য কার্টুনে রামায়ণ, ছোটদের রামায়ণ, সিনেমাতে রামায়ণ এসেছে। এবার গোটা রামায়ণ যেন মূর্ত হয়ে উঠবে রাম মন্দির (Ram Mandir) চত্বরেই। মহাকাব্যের স্রষ্টা থেকে বনবাসে বিষ্ণুর অবতারের সঙ্গীরা সকলেই স্থান পেতে চলেছেন রাম মন্দির চত্বরে।
বাল্মিকী: প্রথম জীবনে দস্যু রত্নাকর পরবর্তীকালে বাল্মিকী মুনি হয়ে ওঠেন। রামায়ণ মহাকাব্যের রচনা তিনিই করেছিলেন।
বশিষ্ট: রামের গুরু ছিলেন বশিষ্ঠ।
বিশ্বামিত্র: রামের অপর গুরু ছিলেন বিশ্বামিত্র। ধর্মোপদেশ ছাড়াও সীতার স্বয়ম্ভর সভায় তিনি অযোধ্যার রাজপুত্রকে নিয়ে গিয়েছিলেন।
অগস্ত্য মুনি: রাবণের আসুরিক চরিত্র সম্পর্কে রামকে প্রথম উপদেশ দেন অগস্ত্য মুনি। মুনির পরামর্শ মতোই রাম গোদাবরীর তীরে পঞ্চবটি নির্মাণ করেন।
মাতা শবরী: দক্ষিণ ভারতের অচ্ছুত আদিবাসী এই পৌরাণিক চরিত্রের কুটিরে পৌঁছে রাম ও লক্ষণ জল খান। শবরী মাতার এঁটো ফল খেয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন রামচন্দ্র।
নিষাদরাজ গোহু: বনবাসের সময় রাম-সীতা-লক্ষণকে গঙ্গাপার করেছিলেন নিষাদরাজ গোহু। তিনিও স্থান পাচ্ছেন রাম মন্দিরে।
অহল্যা: রামের উপস্থিতিতে শাপমুক্ত হয়েছিলেন মহর্ষি গৌতমের পত্নী অহল্যা। তাঁর মন্দিরও থাকছে রাম মন্দিরে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।