Prison Poll Vote: ভারতে বন্দিরা ভোট দিতে পারেন না কেন, জানেন?...
প্রতীকী ছবি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: তাঁরা বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক একটি দেশের নাগরিক। প্রত্যাশিতভাবেই তাঁদের ভোটাধিকার থাকা উচিত। তবে ভোটে দাঁড়াতে পারলেও, ভোট দেওয়ার অধিকার তাঁদের নেই। কারণ তাঁরা বন্দি। গারদে থেকেও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন তাঁরা, তবে নিজের ভোটটা নিজেকেই দিতে পারবেন না। অন্য কাউকেও নয়। কারণ তাঁদের ভোটাধিকারই নেই। হ্যাঁ, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের নিয়ম এটাই (RP Act 1951)।
দীর্ঘদিন এই আইন এদেশে থাকলেও, চর্চায় এসেছে সম্প্রতি। কারণ, গত সপ্তাহেই খালিস্তানপন্থী জঙ্গি জেলবন্দি অমৃতপাল সিং লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান বলে ঘোষণা করেছেন। ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’-সুপ্রিমো পাঞ্জাবের খাদুর সাহিব কেন্দ্র থেকে লড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। এই কেন্দ্রে নির্বাচন হওয়ার কথা পয়লা জুন, শেষ দফায়। যদিও তাঁর প্রচারের সুযোগ সীমিত। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকারও রয়েছে তাঁর। যতক্ষণ না কোনও ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হন, ততক্ষণ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার তাঁর রয়েছে। তবে আসন্ন নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না তিনি। দেশের অন্যান্য বন্দিরাও তা পারবেন না। কেন? প্রশ্ন হল সেটাই। আসুন জেনে নেওয়া যাক, অমৃতপাল প্রার্থী হতে পারলেও, কেন প্রয়োগ করতে পারবেন না ভোটাধিকার।
বর্তমানে অসমের ডিব্রুগড়ের জেলে বন্দি রয়েছেন অমৃতপাল। ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে গারদের আড়ালে রয়েছেন অমৃতপাল। জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। খাদুর সাহিব কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন তিনি। অমৃতসরের এক থানায় সমর্থকদের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন অমৃতপাল। থানার সামনে দাঁড়িয়ে সঙ্গী লভপ্রীত সিং তুফানকে মুক্তি দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন অমৃতপাল। পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়েছিলেন। তার পর থেকেই পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বেড়িচ্ছিলেন তিনি। শেষমেশ পাঞ্জাবের মোগা জেলার রোডে গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’-র প্রধানকে (RP Act 1951)। পাঠানো হয় ডিব্রুগড়ের জেলে।
এক সময় অমৃতপাল জানিয়েছিলেন, ভারতীয় সংবিধানে বিশ্বাস নেই তাঁর। সেই অমৃতপালই মত বদলে প্রার্থী হয়েছেন। এগিয়ে চলেছেন গণতান্ত্রিক রাজনীতির দিকে। তবে প্রার্থী হতে পারলেও, ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অধিকার তাঁর নেই। কারণ নিয়ম অনুযায়ী, অপরাধী কিংবা অভিযুক্তরা জেলে বসে ভোটে লড়তে পারেন। কিন্তু বিচারাধীন বন্দি বা দোষীরা গারদের আড়ালে থাকাকালীন ভোট দিতে পারেন না। যাঁরা দোষী সাব্যস্ত হননি, তাঁরাও ভোট দিতে পারেন না। অমৃতপাল যেহেতু দোষী সাব্যস্ত হননি, তাই নির্বাচনে প্রার্থী হতে তাঁর কোনও অসুবিধা নেই। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার ছ’বছর পর ভোটে লড়তে পারেন।
১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের (RP Act 1951) ৬২ (৫) ধারায় বলা হয়েছে, পুলিশের আইনি হেফাজতে বা কোনও জেলে থাকলে সেই ব্যক্তি ভোট দিতে পারবেন না। অর্থাৎ জেলবন্দি থাকলে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা গেলেও, ভোট দিতে পারবেন না। ২০১৯ সালে প্রবীণ চৌধুরী বনাম নির্বাচন কমিশনের মামলায় দিল্লি হাইকোর্ট আবার রায় দিতে গিয়ে জানায়, বন্দিদের ভোটাধিকার নেই। অবশ্য জেলবন্দিরা তাঁদের প্রতিনিধিদের সাহায্যে জেলে বসেই মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। বন্দি অবস্থায় নির্বাচনে জিতলে, শপথ নেওয়ার জন্য অভিযুক্তকে ছুটিও দেওয়া হবে। এতদসত্ত্বেও ভোট দানের অধিকার তাঁদের নেই (RP Act 1951)।
২০১১ সালে পাবলিক ইনটারেস্ট ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা আদালতে আবেদন করে জানায়, যাঁদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ গঠন করা হয়েছে অথবা যাঁদের ক্রিমিনাল হিস্ট্রি নিয়ে মিথ্যা হলফনামা জমা দেওয়া হয়েছে, তাদেরও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত রাখতে হবে। এর প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতি সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, কেবলমাত্র সংসদেই বদলানো হতে পারে আরপি অ্যাক্ট (RP Act 1951)।
আরও পড়ুুন: "টাকায় কি হয়? ভাত হয়, ডাল হয়, থাকবার জায়গা হয়–এই পর্যন্ত, ভগবানলাভ হয়
২০১৬ সালে আইনজীবী তথা বিজেপির ভূতপূর্ব মুখপাত্র অশ্বিনীকুমার উপাধ্যায়ও একটি পিটিশন দায়ের করেন। সেখানেও বলা হয়, যাঁরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাঁদেরও নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হোক। এই মামলা এখনও চলছে সুপ্রিম কোর্টে। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, যেসব সাংসদ এবং বিধায়কদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার বিচার শেষ হতে দেরি হচ্ছে, সেক্ষেত্রে শীর্ষ আদালত দেশের সব হাইকোর্টের বিচারপতিদের সুয়ো মোটো কেস ফাইলের নির্দেশ দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের শিরোনাম, “ইন রি: ডেজিগনেটেড কোর্টস ফর এমপিস/এমএলএস”। এই নির্দেশিকায় হাইকোর্টগুলিকে এই সব মামলা নিষ্পত্তির জন্য ‘এক্সপিডিয়াস অ্যান্ড এফেকটিভ’ ডিরেকশন ইস্যু করতে বলা হয়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে আদালতে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল, তাতে জানা গিয়েছে এখনও পর্যন্ত পেন্ডিং রয়ে গিয়েছে ৪ হাজার ৪৭২টি মামলা।
আরপি অ্যাক্টের ৬২ (RP Act 1951) নম্বর ধারায় ভোটাধিকার সম্পর্কে এক গুচ্ছ নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি যদি জেলে বন্দি থাকেন, তাহলে তিনি কোনও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সে যদি তাঁর কারাদণ্ড হয় কিংবা ট্রান্সপোর্টেশন হয় অথবা তিনি পুলিশের ল’ফুল কাস্টডিতে থাকেন (RP Act 1951)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।