সিএএ বিরোধী আন্দোলনে হঠাৎ করেই মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা এবং কৃষ্ণপুর রেল স্টেশনে ভয়াবহ অগ্নিসংযোগ হয়। বেশ কয়েকটি ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই আন্দোলন থেমে গিয়েছিল কেন?
পিএফআই দফতর থেকে নথি নিয়ে বেরোচ্ছেন গোয়েন্দারা
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দেশজুড়ে পিএফআইয়ের (PFI) বিভিন্ন ঘাঁটিতে এনআইএ-র তল্লাশি অভিযানের পর ফের বাংলা নিয়ে চক্ষু ছানাবড়া তদন্তকারীদের। এনআইএ (NIA) সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) অন্তত এক ডজন নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে পিএফআই-এসডিপিআই (PFI-SDPI) নেতৃত্বের।
তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৯-এর সিএএ (CAA) বিরোধী আন্দোলনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রত্যক্ষভাবে পিআইআইয়ের মদত নিয়েছিল। পরবর্তীকালেও তৃণমূলের মুসলিম নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে পিএফআইয়ের যোগ স্পষ্ট হয়েছে। গত বছর মুর্শিদাবাদে পিএফআইয়ের প্রশিক্ষণে স্থানীয় এক বিধায়ক প্রধান অতিথির পদও গ্রহণ করেছিলেন। মূলত সংগঠনের ক্যাডার নিয়োগ এবং আর্থিক সহায়তার কাজ তৃণমূল নেতারা নিজের নিজের এলাকায় করে চলেছেন বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন। পিএফআই বাংলায় যে ১৭টি শাখা খুলে সংগঠন বাড়াচ্ছিল, সেই সব এলাকায় সংশ্লিষ্ট তৃণমূল নেতাদের মদত ছিল।
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশ, মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলিতে রমরমা পিএফআইয়ের
এনআইএ-র একাংশের দাবি, সিএএ বিরোধী আন্দোলনে হঠাৎ করেই মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা এবং কৃষ্ণপুর রেল স্টেশনে ভয়াবহ অগ্নিসংযোগ হয়। বেশ কয়েকটি ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই আন্দোলন থেমে গিয়েছিল। তাতে পরিকল্পনার ছাপ স্পষ্ট ছিল বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। আসলে তৃণমূল কংগ্রেস নেপথ্যে থেকে পিএফআইকে ব্যবহার করে ওই আন্দোলন সংগঠিত করিয়েছিল, যে সময় তা হাতের বাইরে যেতে শুরু করে, তখন আসরে নেমে সিএএ বিরোধী আন্দোলন থামিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে রামমন্দির (Ram Mandir) সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) রায় নিয়ে দীর্ঘদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata) কোনও বিবৃতি দেননি। ফলে পিএফআই একক শক্তিতে মুর্শিদাবাদে এক-দুটি মৌন মিছিল ছাড়া কিছুই করে উঠতে পারেনি। যদিও তারা হিংসাত্মক আন্দোলনে নামতে চেয়েছিল।
আরও পড়ুন: টার্গেট আরএসএস? সংঘের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি চালাত পিএফআই! চক্রান্ত ফাঁস
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, গিয়াসুদ্দিন মোল্লা, জাকির হোসেন, আহমেদ হাসান ইমরান, নিয়ামত শেখ, আমিরুল ইসলাম, রবিউল আলমের মতো তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে পিএফআই নেতৃত্বের যোগাযোগ রয়েছে। একইভাবে পিএফআই নেতৃত্ব নানা সহায়তা চেয়ে সওকত মোল্লা, ইদ্রিশ আলি, নাদিমুল হক, নুরুল ইসলামের দ্বারস্থ হয়েছে। ফোনে যোগাযোগের পাশাপাশি পিএফআই দফতর থেকে এই সব তৃণমূল নেতাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-দস্তাবেজও মিলেছে।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, জনপ্রতিনিধি বা শাসক দলের নেতাদের কাছে বিভিন্ন ধরনের সংগঠনই পৌঁছানোর চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু পিএফআইয়ের দেশবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে তৃণমূলের নেতারা আদৌ যুক্ত হয়েছিলেন কিনা, তা তদন্ত সাপেক্ষ। সেই তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে শাসক দলের কোনও হিন্দু নেতার সঙ্গে যোগাযোগ না পাওয়া গেলেও কেন বাছাই করা তৃণমূলের মুসলিম নেতাদের সঙ্গেই পিএফআই নেতৃত্ব বার বার ফোনে কথা বলেছেন, দেখা করেছেন তা গোয়েন্দাদের ভাবাচ্ছে। সে সব এখন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে এনআইএ-র একটি সূত্র জানাচ্ছে।