img

Follow us on

Friday, Sep 20, 2024

Emergency: ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কালো দিন!

ফিরে দেখা, ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থার সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলি!

img

প্রতীকী ছবি

  2023-06-25 13:37:21

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক:  ২৫ জুন ১৯৭৫, কংগ্রেস শাসনের স্বৈরতান্ত্রিকতার চরম নজির সেদিন দেখেছিলেন ভারতবাসী। দেশে জরুরি অবস্থা (Emergency) জারি করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, যা চলেছিল ২১ মার্চ, ১৯৭৭ পর্যন্ত। অভিযোগ, এই সময়ে গোটা দেশকে কার্যত কারাগারে পরিণত করেছিল কংগ্রেস সরকার। গণতন্ত্র এবং মানুষের মৌলিক অধিকার দুটোই সেদিন কেড়ে নেয় গান্ধী পরিবারের শাসন। সরকার চাইলে যে কোনও ব্যক্তিকে যতদিন খুশি জেলে ভরে রাখতে পারত। সব থেকে বড় কথা, কোনও রকমের শুনানি ছাড়াই কয়েক হাজার সরকার বিরোধী ব্যক্তি জেলে ছিলেন। তাঁদের জামিনের আবেদন করার অধিকারও ছিল না। সংবাদপত্রগুলির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। তালিকায় ছিল ৩,৮০১ সংবাদপত্র। আরও অভিযোগ, দেশে যখন এই কালো অধ্যায় চলছে, বিরোধী সমস্ত নেতা যখন জেলের ভিতর, তখনই এক প্রকার গায়ের জোরে ১৯৭৬ সালে ৪২তম সংবিধান সংশোধনী এনে প্রস্তাবনায় জোড়া হয় 'সেকুলার' শব্দ। বন্ধ হয় দেশে সমস্ত ধরনের নির্বাচন। 
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সম্প্রতি ব্রিটেনে গিয়ে বলেছেন, “মোদি জমানায় দেশে গণতন্ত্র নেই।” অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, জরুরি অবস্থার সময় যাঁর পূর্বসূরীরা লোকতন্ত্রকে জেলের ভিতরে রেখেছিলেন, তাঁর মুখে গণতন্ত্র বিপন্নতার কথা মানায় কি? এবার জরুরি অবস্থার প্রেক্ষাপট, ঘটনাক্রম, গণতন্ত্র হরণ নিয়ে এই প্রতিবেদনে আলোকপাত করা হল।

জরুরি অবস্থা (Emergency) ঘোষণার কথা জানতো না মন্ত্রিসভাও!

রাত তখন ৩ টে হবে। দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধীর বাসভবনে উপস্থিত তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি দেবকান্ত বড়ুয়া, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় এবং প্রধানমন্ত্রী নিজে। ইতিমধ্যে ২৫ জুন মধ্যরাতে জরুরি অবস্থা জারি হয়ে গিয়েছে। সই করেছেন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ। ওই রাতেই গ্রেফতার করা হয় লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণকে। সূর্য ওঠার আগেই দেশের প্রথমসারির সংবাদপত্রগুলির অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় সরকার।
ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা ঘোষণার কথা মন্ত্রিসভাও জানত না। ২৬ জুন সকাল ৬টার ক্যাবিনেট মিটিংয়ে উপস্থিত ১৫ জনেরও বেশি মন্ত্রী প্রথমবারের জন্য জানতে পারলেন, জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে দেশে। তৎকালীন বিশিষ্ট সাংবাদিক ইন্দ্র মলহোত্রা ক্যাবিনেটে উপস্থিত সকল মন্ত্রীদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন। সাংবাদিকের অভিমত, “মন্ত্রীরা সেদিনের ক্যাবিনেট মিটিংয়ে অসম্ভব রকমের আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন।” এরপরই আকাশবাণীর বেতার ভাষণে জরুরি অবস্থা জারির কথা ঘোষণা করেন ইন্দিরা গান্ধী। ক্যাবিনেট মিটিংয়ের পরেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সকল অধ্যাপকদের তালিকা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল হাসানের কাছে চেয়ে নেন সঞ্জয় গান্ধী। অন্যদিকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ইন্দ্রকুমার গুজরালকে নির্দেশ দেন ইন্দিরা, সমস্ত সংবাদপত্রের খবর আগে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে আসবে! তারপর কোন খবর ছাপা হবে তা সরকার ঠিক করবে।

কেমন ছিল জরুরি অবস্থার দিনগুলি?

২৮ বছর ধরে তখন দেশ শাসন করছিল কংগ্রেস। কংগ্রেস বললে ভুল হবে। গান্ধী-নেহরু পরিবারের বাবা ও মেয়ের হাতেই ছিল ক্ষমতা। ভারতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য নাম জর্জ ফার্নান্ডেজ। জরুরি অবস্থায় তাঁকে গ্রেফতার করে ইন্দিরা সরকার। হাতে পায়ে শিকল বাঁধা হয় জর্জ সমেত তাঁর ২৪ সহযোগীকে। সেই অবস্থায় তাঁদের রাস্তা দিয়ে হাঁটানো হত। পরিসংখ্যান বলছে, সেসময় মোট রাজনৈতিক গ্রেফতারির সংখ্যা ১,১০,৮০৬। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের কোমরে দড়ি পরিয়ে পুলিশ জিপের সঙ্গে বেঁধে রাস্তায় হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হত। আর থানার লক আপে পুলিশি অত্যাচার! জরুরি অবস্থায় কেরলের কালিকট ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র রাজেনের মৃত্যু ঘটে পুলিশ হেফাজতে। অকথ্য অত্যাচার করা তাঁর উপর উপর। সদ্য ২০ পার হওয়া ছাত্রের জীবন সেদিন কেড়ে নেয় ইন্দিরা সরকার। তারপর দেহ লোপাট করে ফেলে পুলিশ। শোনা যায়, এরপর থেকেই রাজেনের মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এমন অজস্র ঘটনা ঘটতে থাকে দেশে। বেঁচে থাকার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। সেটাই তখন ছিল কংগ্রেস সরকারের কুক্ষিগত। অন্যদিকে বিহারের ১৬ বছরের কিশোর দিলীপ শর্মা। যাকে ১১ মাস ধরে বন্দি রাখে ইন্দিরা সরকার। অপরাধ তো একটাই ইন্দিরার স্বৈরতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা। সেসময় জনসঙ্ঘ এবং আরএসএস-এর বহু প্রচারক কার্যকর্তা গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন।

১২ জুন ১৯৭৫, কেন ক্ষমতা হারানোর ভয় পেলেন ইন্দিরা?

১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি কেন্দ্র থেকে জয়ী হন ইন্দিরা গান্ধী। বিপক্ষ প্রার্থী ছিলেন সংযুক্ত সোশ্যালিস্ট পার্টির রাজনারায়ণ। এই ভোটে ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে কারচুপি করে জেতার অভিযোগ আনেন রাজনারায়ণ। সোশ্যালিস্ট পার্টির এই নেতা দ্বারস্থ হন এলাহাবাদ হাইকোর্টের। তাঁর দায়ের করা মামলায় রাজনারায়ণ ইন্দিরার বিরুদ্ধে ৬ টি অভিযোগ আনেন। রাজনারায়ণের অভিযোগগুলি ছিল
১) ভোটে ইন্দিরা গান্ধী অসাংবিধানিকভাবে ভারত সরকারের এক আধিকারিক  যশপাল কাপুরকে নির্বাচনী এজেন্ট করেন। কাপুরের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেননি, তারপরেও তাঁকে নির্বাচনী এজেন্ট করেন ইন্দিরা।

২) রায়বেরিলি থেকে ভোট লড়ার জন্য ইন্দিরা গান্ধী, স্বামী অদ্বৈতানন্দ নামের একজনকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দেন, যাতে রাজনারায়ণের ভোট কাটা যায়। 

৩) নির্বাচনী প্রচারে ইন্দিরা গান্ধী বায়ুসেনার বিমানগুলির যথেষ্ট অপব্যবহার করেন।

৪) ভোটে জিততে এলাহাবাদের পুলিশ সুপার এবং জেলা শাসকের সাহায্য নেন ইন্দিরা, যা বেআইনি।

৫) ভোটারদের প্রভাবিত করতে ইন্দিরা গান্ধী আগের রাতে কম্বল এবং মদ বিলি করেন।

৬) নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া খরচের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ বিলি করেন ইন্দিরা।

১২ জুন ১৯৭৫ সালে এই মামলার রায় দেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি জগমোহনলাল সিনহা। ইন্দিরার বিরুদ্ধে সরকারি ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচন জেতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ইন্দিরা গান্ধীর সাংসদ পদ তো খারিজ হয়, পাশাপাশি ওই রায়ে ৬ বছর পর্যন্ত তিনি কোনও ভোটে লড়তে পারবেন না বলেও জানিয়ে দেন বিচারপতি সিনহা। এই অবস্থায় তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তেই হতো। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ইন্দিরা তখন দিশাহারা, দ্বারস্থ হলেন সুপ্রিম কোর্টের। ২৩ জুন, ১৯৭৫ সালে মামলা দায়ের হল সুপ্রিম কোর্টে। ২৪ জুন বিচারপতি আইয়ার নির্দেশ দিলেন, যতক্ষণ না চূড়ান্ত রায় আসছে, ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন। তবে সাংসদ হিসেবে কাজ চালাতে পারবেন না। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর বিরোধীরা বলতে শুরু করেন, “চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত ইন্দিরা প্রধানমন্ত্রী থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।” অন্যদিকে ইন্দিরার পদত্যাগের দাবিতে তখন দেশজুড়ে প্রবল আন্দোলন শুরু করেন জয়প্রকাশ নারায়ণ। ক্ষমতা হারানোর ভয় তাড়া করে কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রীকে। সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার ১ দিন পরেই জারি হয় জরুরি অবস্থা।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

bangla news

Bengali news

emergency


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর