Krishna Yadav: পরিবার নিয়ে পথে বসা কৃষ্ণা যাদবের এখন রোজগার কত জানেন?
কৃষ্ণা যাদবের আচারের দোকান (বাঁদিকে), আচর তৈরির কাজে ব্যস্ত কৃষ্ণা যাদব (ডানদিকে)(সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শত প্রতিকূলতাকে জয় করেও এভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়। তার জ্বলন্ত প্রমাণ উত্তর প্রদেশের গৃহবধূ কৃষ্ণা যাদব। স্বচ্ছল পরিবারে আচমকা নেমে এসেছিল ছিল চরম দারিদ্রতা। স্বামী, তিন সন্তানকে নিয়ে সেই দারিদ্রতা কাটাতেই তিনি ছুটে এসেছিলেন দিল্লি। দিনরাত এক করে কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনিই নজির গড়েছেন। তাঁর হাতের জাদুতেই গড়ে উঠেছে কোটি টাকার সাম্রাজ্য। তাঁর জীবনকাহিনী অনুপ্ররণা (Success Story) যোগাচ্ছে শত শত নারীকে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের দৌলতপুরের ছোট্ট গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন কৃষ্ণাদেবী। তিনি (Krishna Yadav) কখনও স্কুলে যাননি। বিয়ের পর তিনি (Success Story) বুলন্দশহরে চলে যান। তাঁর স্বামী একজন ট্রাফিক পুলিশ অফিসার ছিলেন। কোনও কারণে তাঁর চাকরি চলে যায়। স্বামী কাজ হারানোর পর পরিবারের সকলে ভয়ানক পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। পরে, যানবাহনের ব্যবসা শুরু করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, তাতেও প্রচুর লোকসান হয়েছিল। পরিস্থিতি এমন হয়, তাঁদের দুটি বাড়ি বিক্রি করতে হয়েছিল। একেবারে পরিবার নিয়ে পথে এসে বসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় কৃষ্ণা যাদবের।
আরও পড়ুন: ইতিহাসের সামনে লক্ষ্য, ভারতের প্রথম পুরুষ শাটলার হিসেবে অলিম্পিক্সের সেমিফাইনালে
মাত্র ৫০০ টাকা নিয়ে উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর থেকে তিনি পাড়ি দেন দিল্লি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী ও তিন সন্তান। এত বড় শহরে কোথায় চাকরি পাবেন, কী করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি। তাছাড়া তাঁর পুঁথিগত ডিগ্রি না থাকার জন্য কোনও কাজ মিলছিল না। এরপর খানপুরের রেভলালা গ্রামে একজনের জমিতে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। জমির এক পাশে ঘর তৈরি করে তাঁরা সপরিবারে থাকতেন। কিন্তু, চাষ করে তাঁরা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছিলেন না। টিভিতে একটি অনুষ্ঠান দেখে অনুপ্রাণিত (Success Story) হয়ে ২০০১ সালে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। পরে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। ৩০০০ টাকা খরচ করে প্রায় ৫ কেজি লঙ্কার, আমের আচার বানিয়ে ফেলেন তিনি। রাস্তায় টেবিল পেতে সেই আচার বিক্রি করে ২,২৫০ টাকা লাভও হয় তাঁর। পরে, বিভিন্ন মেলায় আচার বিক্রি করে ভালো টাকা উপার্জন করেন তিনি। এরপর ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। স্বামী-স্ত্রী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুরু করেন এই ব্যবসা। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই জমে ওঠে ব্যবসা। পরের কয়েক বছরে তাঁর আচারের চাহিদা বেড়ে যায়। এখন তাঁর বার্ষিক টার্নওভার ৫ কোটি টাকা।
'শ্রী কৃষ্ণ পিকলস' নামে একটি কোম্পানি চালু করেন। এই ব্র্যান্ডের নামে রমরমিয়ে চলতে থাকে ব্যবসা। তবে, কেবলমাত্র আচার নয়, মোরব্বা ও চাটনির ব্যবসাও শুরু করেন তিনি। বর্তমানে বেড়েই চলেছে এই ব্র্যান্ডের বিভিন্ন জিনিসের চাহিদা। বর্তমানে প্রায় কোটি টাকার সাম্রাজ্য তৈরি ফেলেছেন কৃষ্ণা যাদব। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত থেকে বৈচিত্র্যময় কৃষির জন্য মর্যাদাপূর্ণ এন জি রাঙ্গা কৃষক পুরস্কার নেন তিনি। ২০১৬ সালে তিনি (Success Story) জিতে নেন মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক কর্তৃক নারী শক্তি পুরস্কার। এই সমস্ত পুরস্কার পেয়েও তিনি থেমে থাকেননি। বরং, দিনের পর দিন তিনি তাঁর ব্যবসার সাম্রাজ্য ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছেন।
ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই প্রসঙ্গে কৃষ্ণা যাদব (Krishna Yadav) বলেন, আমাদের আর্থিক সঙ্কটের জন্য এটি একটি ছোট পদক্ষেপ ছিল। আমি কখনই ভাবিনি যে আমি এতদূর আসতে পারব। আমার স্বামী এবং বড় ছেলে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। আর অন্য দুই সন্তান উচ্চশিক্ষার জন্য পড়াশুনা করছে। এখন আমার কাছে গাড়ি, বাংলো রয়েছে। ছোটবেলায় আমি টেলিভিশনে মুখ দেখানোর খুব ইচ্ছা ছিল। সেই স্বপ্ন আমার ব্যবসার মাধ্যমে সত্যি হয়েছে। তবে, এই সাফল্যের জন্য ধারাবাহিক কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।