গর্ভধারণকারীর ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যমূলক শব্দ নয়, জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত...
প্রতীকী চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অন্তঃসত্ত্বাকে তার লিঙ্গ পরিচয় দিয়ে সম্বোধিত করতে নারাজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত সর্বোচ্চ আদালত (Supreme Court)। আদালতের মতে অন্তঃসত্ত্বা কেবলমাত্র লিঙ্গ পরিচয়ে মহিলারাই হতে পারেন এমন নয় বরং পুরুষ, মহিলা, রূপান্তরকামী বা অন্যান্য লিঙ্গের যে কেউই হতে পারেন। গত সপ্তাহে গর্ভপাতের একটি মামলার শুনানি শেষে রায়ের (Supreme Court Judgement) ফুটনোটে এমনটাই জানিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি (CJI of India) ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি মনোজ মিশ্র ও বিচারপতি জেবি পাদ্রিওয়ালার বেঞ্চ। এই মন্তব্যকে কার্যত ঐতিহাসিক বলে মনে করছেন লিঙ্গ সাম্য অধিকার রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা।
প্রসঙ্গত দেশের সর্বোচ্চ আদালতে ১৪ বছরের এক কিশোরীর যৌন হেনস্থার ফলে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার মামলার শুনানি চলছিল। এর আগে মামলাটি বম্বে হাইকোর্টে থাকাকালীন মেডিক্যাল বোর্ড জানিয়েছিল হাইকোর্টের অনুমতি থাকলে কিশোরীর গর্ভপাত করানো যেতে পারে। বম্বে হাইকোর্টে যখন মামলাটি উঠে তখন কিশোরী ২৭ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। ভারতের মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি আইনে প্রাণঘাতী ঝুঁকি না থাকলে ২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ বলে স্বীকৃতি রয়েছে। তবে তার বেশি হয়ে গেলে বিচারবিভাগের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়।
কিন্তু বম্বে হাইকোর্ট কিছু ডাক্তারি অভিমত দেখে গর্ভপাতের সম্মতি দিতে অস্বীকার করে। ফলে এই মামলা গড়ায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। পুনরায় মেডিক্যাল বোর্ডকে পরীক্ষা করতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। কিশোরীর শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখে মেডিক্যাল বোর্ড জানায় ওই কিশোরী গর্ভপাতে সক্ষম। সুপ্রিম কোর্ট কাল বিলম্ব না করে গর্ভপাতের সম্মতি দেয় (Supreme Court Judgement)। ততদিনে কিশোরী রীতিমত ৩০ সপ্তাহের বেশি গর্ভবতী। তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিন্তায় ছিল পরিবার পরিজনেরা। আদালতকে পরিবারটি জানায় এই অবস্থায় সে গর্ভপাত করাতে চাইছে না। সে চায় সন্তানের জন্ম দিয়ে শিশুটিকে দত্তক নিতে। গর্ভজাত শিশুর সঙ্গে আবেগে জড়িয়ে পড়েছিল কিশোরী মা। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং কিশোরীর মানসিক অবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে বিষয়টি বুঝতে পেরে সুপ্রিম কোর্ট সম্মতি প্রত্যাহার করে করে নেয়।
এই মামলার শুনানিতে কিশোরীকে ‘ব্যক্তি’ বলে সম্বোধন করার পক্ষে সহমত হন বিচারকরা। রায়ের (Supreme Court Judgement) ফুটনোটে তাঁরা লেখেন, “আমরা গর্ভবতী ‘ব্যক্তি’ শব্দ ব্যবহার করেছি এবং মহিলা লিঙ্গ পরিচিতির বাইরে নন-বাইনারি ব্যক্তি বা রূপান্তরকামী পুরুষ বা অন্য লিঙ্গ পরিচয় যে কেউই গর্ভবতী হতে পারেন বলে স্বীকৃতি দিয়েছি। প্রসঙ্গত এই মামলায় ২১ পাতার রায় দেন বিচারকরা। এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা। কারণ গর্ভধারণের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যমূলক শব্দ না ব্যবহার করার পক্ষেই রায় এসেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের তরফে। এমনকি রায়ের ফুটনোটে বিচারপতিরা লিখেছেন যে, তাঁদের বিচার দেশের গণপরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সসদ্যদের (Founding Parents) মতামতকে প্রতিফলিত করে। তাঁরা এক্ষেত্রে ‘ফাউন্ডিং ফাদার্স’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। যা যথেষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।