Pralay Missile: প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্রকে ঠেকানো মুশকিল হবে শত্রু সেনাদের।
প্রলয় মিসাইল
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারত-চিন সীমান্তে অরুণাচলে চিনা সেনার আগ্রাসনের মোকাবিলা করেছে ভারতীয় জওয়ানরা। ফলে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে সেখানেও। এমনই পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাকে ১২০টি ‘প্রলয়’ কোয়াসি-ব্যালিস্টিক বা আধা-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (Pralay Missile) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওই সব মিসাইল মোতায়েন করা হবে ভারত-চিন ও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই ১২০টি ট্যাকটিকাল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কেনার অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। তাই খুব শীঘ্রই ভূমি থেকে ভূমি আঘাতে সক্ষম প্রলয় ক্ষেপণাস্ত্র আসতে চলেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, 'প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ১২০টি প্রলয় মিসাইল (Pralay Missile) কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওইসব মিসাইল ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন করা হবে।' সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রলয় ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১৫০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার, অর্থাৎ, ১৫০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এটি। এই মিসাইলের বিশেষত্ব হল এটিকে অন্য কোনও মিসাইল দিয়ে খুব সহজে ধ্বংস করা যায় না। শুধু তাই নয়, একবার উৎক্ষেপণ করার পরও এর গতিপথ পরিবর্তন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আকাশেই বদলে ফেলা যায় টার্গেট। প্রলয়কে যাতে ট্র্যাক করা না যায়, তার জন্য বিশেষ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এই মিসাইলে। ডিআরডিও নির্মিত এই প্রযুক্তির নাম ‘র্যাডোম’। সেনা সূত্রে খবর, ঘণ্টায় প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার বেগে উড়ে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে প্রলয় নামক স্বল্পপাল্লার এই কোয়াসি-ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (Pralay Missile)।
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে এক বা একাধিক পর্যায়ের রকেটের মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর, ক্ষেপণাস্ত্রটি অর্জিত গতির ওপর ভর করে খিলানের মতো ওপর দিকে আরও কিছুটা ওঠে। তারপর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দৌলতে প্রবল গতিতে অন্য একটি জায়গায় আছড়ে পড়ে। ঠিক যেমন কোনও একটি পাথরকে আড়াআড়িভাবে শূন্যে ছুড়ে দিলে, তা অন্য একটি জায়গায় গিয়ে পড়বে। অর্থাৎ, যত উঁচুতে ছোড়া হবে, পাথরটি ততদূর গিয়ে পড়বে। ঠিক একইভাবে কাজ করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ফ্রি-ফল হওয়ায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কখনই নামার সময় গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে না। উদাহরণ স্বরূপ - অগ্নি, পৃথ্বী ক্ষেপণাস্ত্র।
অন্যদিকে, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র অধিক উচ্চতায় যায় না। কিছুটা উচ্চতায় পৌঁছে তা ভূমি বা সমতল বরাবর এগোতে থাকে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানে। শব্দের চেয়ে অধিক গতিতে উড়তে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র। সবচেয়ে বড় কথা, প্রয়োজন অনুযায়ী, নিজের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। ফলত, শত্রুর কোনও কিছু বোঝার আগেই এই ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে সক্ষম। উদাহরণ স্বরূপ - ব্রহ্মোস।
প্রলয় (Pralay Missile) হল কোয়াসি-ব্যালিস্টিক। অর্থাৎ, এটি পুরোপুরি ব্যালিস্টিক নয়। আবার পুরোপুরি ক্রুজ নয়। বলা যেতে পারে, এটি একটি হাইব্রিড ক্ষেপণাস্ত্র। প্রলয় কম গতিপথ বজায় রাখে। এটি ওপরে ওঠার সময় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতোই আচরণ করে। তবে, নীচে নামার সময় ম্যানুভার করে। অর্থাৎ, গতিপথ পরিবর্তন করতে সক্ষম।
চিনের হাতে থাকা ‘ডং ফেং ১২’-র তুলনায় এর গতিবেগ কিছুটা বেশি। কিন্তু প্রলয়কে চিনের এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও রাশিয়ার ‘ইস্কান্দার’ ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এটি চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
'প্রলয়' (Pralay Missile) ও 'ব্রহ্মোস' সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল নিয়ে পৃথক ‘রকেট ফোর্স’ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশের প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (CDS) প্রয়াত জেনারেল বিপিন রাওয়াত। ২০১৫ সালেই প্রলয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রজেক্ট অনুমোদন পেয়েছিল। এরপর এই মিসাইল তৈরি হলেও এটি আরও শক্তিশালী করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সূত্রের খবর, বিপিন রাওয়াতই প্রথম দেশের একটি কৌশলগত ‘রকেট ফোর্স’ গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট হয়েছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ‘রকেট ফোর্স’-এর আওতায় থাকবে প্রথাগত ক্ষেপণাস্ত্র, যেমন প্রলয়, ব্রহ্মোস, পিনাকা ইত্যাদি। অন্যদিকে, পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো থাকবে স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডের অধীনে। সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার প্রথম পদক্ষেপ করল কেন্দ্র।
২০২১ সালের ডিসেম্বরেও দুবার এটির পরীক্ষা করা হয়। প্রতিবারই প্রলয় মিসাইলের নিক্ষেপ সফল হয়েছে। ফলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্রকে ঠেকানো মুশকিল হবে শত্রু সেনাদের। উল্লেখ্য, প্রলয় মিসাইল তৈরি করেছে ডিআরডিও। এটিকে আরও শক্তিশালী করে তোলা হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে এটির পাল্লাও। আর এটিকে প্রথমে ভারতীয় বায়ুসেনা ও পরে তা সেনাবাহিনীকে দেওয়া হবে বলে খবর।