GDP: ভারতবর্ষের জিডিপির ২.৩২ শতাংশই আসে মন্দির অর্থনীতি থেকে
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ধর্মচর্চা, আধ্যাত্মিকতা, মানতপুরণ, দেবতার উদ্দেশ্যে পূজা নিবেদন- এসব কিছুর কেন্দ্র হল মন্দির (Temple Economics)। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতবর্ষে মন্দিরের সংখ্যা নেহাত কম নয়, প্রায় কুড়ি লক্ষ। এগুলির মধ্যে এমন অনেক মন্দির রয়েছে যেগুলি বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই গড়ে সেখানে হাজার হাজার ভক্তরা ভিড় করেন। চলতি বছরেই উদ্বোধন হয়েছে রাম মন্দিরের। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, প্রতিদিন গড়ে এক লাখেরও বেশি তীর্থযাত্রীর পা পড়েছে রাম মন্দির চত্বরে। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে মন্দিরকে কলা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সামাজিকতা এবং বাণিজ্যের কেন্দ্র বলে মনে করা হয়। বৈচিত্রের দেশ আমাদের ভারতবর্ষ। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পা দিলেই নজরে পড়ে আলাদা প্রথা, কাস্টম, রীতি। সেই সমস্ত অঞ্চলভিত্তিক রীতির ওপরেই গড়ে ওঠে মন্দির। জীবনে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধির কামনায় প্রার্থনা করেন ভক্তরা। জীবনে চলার পথে বাধা যাতে ভগবান দূর করেন সে প্রার্থনাও করেন তাঁরা। এক ভক্তের সঙ্গে অপর ভক্তের মনের ভাব বিনিময়ের স্থানও হল মন্দির। মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে পর্যটনও। মন্দিরকেন্দ্রিক অর্থ ব্যবস্থা টানে এলাকার অর্থনীতিকেও (Temple Economics)। হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ভিড়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয় হোটেলগুলিও। তীর্থযাত্রীদের থাকা-খাওয়া সমস্ত কিছুর বন্দোবস্ত হয় সেখানে। এর পাশাপাশি ভক্তদের যেকোনও প্রয়োজনীয়তা মেটায় ছোটখাটো দোকানগুলিও। ফুল, তেল, প্রদীপ, সিঁদুর ছবি বিক্রি হয় স্থানীয় দোকান থেকে।
মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্টন স্টেইন ভারতবর্ষের মন্দির অর্থনীতির ওপর গবেষণা করেন। ১৯৬০ সালে তিনি একটি রিপোর্টও জমা দেন এ নিয়ে। তাঁর 'দ্য ইকোনমিক ফাংশন অফ মেডিভিয়াল সাউথ ইন্ডিয়ান টেম্পেল'- শীর্ষক লেখা প্রকাশিত হয়েছিল এশিয়ান স্টাডিসে। সাম্প্রতিককালে একটি তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। 'ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিসে'র দেওয়া ওই তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ৫৫ শতাংশ হিন্দু যাঁরা বিভিন্ন মন্দিরে তীর্থযাত্রী হিসেবে পরিভ্রমণ করেন, তাঁরা সাধারণভাবে মধ্যমানের অথবা ছোট হোটেলে থাকেন। যেকোনও ধরনের ধর্মীয় যাত্রাতে (Temple Economics) গড়ে প্রতিদিন মাথাপিছু খরচ হয় ২,৭১৭ টাকা। যেখানে অন্যান্য যে কোনও সামাজিক যাত্রায় মাথাপিছু খরচ হয় ১,১১৮ টাকা। শিক্ষামূলক ভ্রমণে মাথা পিছু খরচ হয় ২,২৮৬ টাকা। এখানেই বোঝা যাচ্ছে ধর্মীয় যাত্রার অর্থনীতি ঠিক কতখানি এগিয়ে।
রিপোর্ট বলছে, প্রতিবছর এভাবেই ৪.৭৪ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয় শুধুমাত্র ধর্মীয় যাত্রার কারণে। ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিসের ওই ডেটাতে আরও বলা হচ্ছে, ভারতবর্ষের মন্দির অর্থনীতির (Temple Economics) পরিমাণ হল ৩.০২ লক্ষ কোটি টাকা অর্থাৎ ভারতবর্ষের জিডিপির (GDP) ২.৩২ শতাংশই আসে মন্দির অর্থনীতি থেকে। ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, এদেশের পর্যটনের ৮৭% হলেন দেশের নাগরিক। অন্যদিকে ১৩ শতাংশ বিদেশি নাগরিক। সরকারের প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দেশের মধ্যে মাত্র ছ'টি বড় মন্দিরের আয় বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশিরভাগই দিল্লি-আগ্রা-বারাণসী-জয়পুরকেন্দ্রিক। অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতের মাদুরাই, মহাবলীপুরম, তিরুপতিতে মন্দির দর্শন করেছেন ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৯ কোটি বিদেশি নাগরিক। বর্তমানে তাই মন্দির অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে জিডিপিতে (GDP)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।