বিবাহস্থল উত্তরাখণ্ডের ত্রিযুগীনারায়ণ মন্দির...
ত্রিযুগীনারায়ণ মন্দির
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: উত্তরাখণ্ডকে দেবভূমি বলা হয়ে থাকে। একাধিক পৌরাণিক কাহিনীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন স্থান। উত্তরাখণ্ডের অন্যতম বিশেষ তীর্থস্থান হল ত্রিযুগীনারায়ণ মন্দির (Triyuginarayan Temple)। রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় অবস্থিত এই মন্দিরকে দেখতে পাওয়া যায় পর্বতের ১,৯৮০ মিটার উচ্চতায়। হিন্দুদের ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী, এই মন্দিরেই সম্পন্ন হয়েছিল শিব পার্বতীর আধ্যাত্মিক বিবাহ। ভক্তদের বিশ্বাস, ত্রিযুগীনারায়ণ মন্দিরের অগ্নিকুণ্ড শিব-পার্বতীর বিবাহের সময় থেকেই জ্বলছে। এই কুণ্ডকে সাক্ষী রেখে বিবাহ সম্পন্ন করেছিলেন শিব এবং পার্বতী। ত্রিযুগীনারায়ণ মন্দিরে অধিষ্ঠান করছেন ভগবান বিষ্ণু। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, তিন যুগ ধরে অবস্থান করছে মন্দির। তাই এমন নামকরণ।
বিবাহ কেন্দ্র ত্রিযুগীনারায়ণ মন্দির (Triyuginarayan Temple)
সাত পাকে বাঁধা পড়া, হিন্দু ধর্মে কোনও চুক্তি নয় বরং তা এক পবিত্র সম্পর্কের শুরু বলে মানা হয়। বর্তমান লিভ-ইন সম্পর্কের যুগে হিন্দু ধর্মের পবিত্র বিবাহ বন্ধন নৈতিক সমাজ গঠনে অনেক বেশি কার্যকরী বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পবিত্র সম্পর্কের শুরু করতে অনেকেই তাই তীর্থস্থানকে বেছে নেন। ত্রিযুগীনারায়ণ মন্দিরে (Triyuginarayan Temple) সব থেকে বেশি বিবাহ সম্পন্ন হয় বলেই জানা যাচ্ছে। প্রতি বছরেই দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষই আসেন এখানে নিজেদের বিবাহ সম্পন্ন করতে। স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, প্রতিবছরে এমন বিবাহের সংখ্যা ত্রিযুগীনারায়ণ মন্দিরে বেড়েই চলেছে।
বর্তমানে ত্রিযুগীনারায়ণ (Triyuginarayan Temple) তীর্থ পুরোহিত কমিটির সভাপতি রয়েছেন সচ্চিদানন্দ পাঁচপুরি। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিনই আমরা অজস্র ফোন কল এবং অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন পাই। যাঁরা এই মন্দিরের মাধ্যমে নিজেদের বিবাহ সম্পন্ন করাতে চান। দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালের মে মাস থেকে ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে পাঁচশো বেশি বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে এই মন্দিরে।’’ ওই পুরোহিত আরও জানিয়েছেন, আড়াইশো জনেরও বেশি মানুষ রেজিস্ট্রি করেছেন ভবিষ্যতে বিবাহ করার জন্য। মন্দিরের পুরোহিত কমিটির সভাপতির মতে, ‘‘আমরা এখনও পর্যন্ত বিদেশ থেকে অসংখ্য ফোন কল পেয়ে যাচ্ছি। বিবাহের আবেদন করছেন ওনারা।’’ ওই মন্দির কমিটির সভাপতি মতে, ‘‘আমরা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছেও আবেদন জানিয়েছি, যাতে দেশের কোনও মানুষ বিদেশে বিবাহ করতে না যান। উত্তরাখণ্ডে এই মন্দিরেই নিজেদের বিবাহ সম্পন্ন করেন।’’
পুরাণ অনুযায়ী, চৈত্র মাসে বিয়ে হয়েছিল শিব-পার্বতীর। এখন চৈত্র মাস চলছে। চারদিকে, বিশেষ করে গ্রামবাংলায় গাজন উৎসব পালিত হচ্ছে। এই উৎসবকে শিব-পার্বতীর বিয়ের উৎসব হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, নিজেদের বিবাহের জন্য এই স্থানকেই বেছেছিলেন শিব-পার্বতী। এখানকার অগ্নিকুণ্ডের আগুন শিব-পার্বতীর বিবাহ সময় জ্বালিয়েছিলেন স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু। এমনটাই বিশ্বাস ভক্তদের। এই অগ্নিকুণ্ডে এখনও পর্যন্ত ভক্তরা এসে নিয়মিতভাবে আহুতি দেন এবং এটাকে পবিত্র কাজ বলে মানা হয়। মনে করা হয়, শিব-পার্বতীর বিবাহে প্রধান পুরোহিতের ভূমিকা পালন করেছিলেন ব্রহ্মা। এছাড়া ভগবান বিষ্ণু বিবাহের যাবতীয় প্রস্তুতির দায়িত্বে ছিলেন। এই মন্দিরের গঠনশৈলীর সঙ্গে কেদারনাথের গঠন শৈলী মিলে যায়। প্রতি বছর কেদারনাথের মতোই অসংখ্য ভক্তের গন্তব্য হয়ে ওঠে এই ত্রিযুগীনারায়ণ (Triyuginarayan Temple) মন্দির। এই মন্দিরে রয়েছে ভগবান বিষ্ণুর দু'ফুটের বড় একটি ছবি। তার পাশে দেখা যায় মা লক্ষ্মী এবং সরস্বতীকেও। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে দেবী পার্বতী ছিলেন হিমালয়ের কন্যা। তিনি ভগবান শিবকে বিয়ে করতে চেয়ে কঠোর তপস্যা করেন। যা উত্তরাখণ্ডের গৌরিকুণ্ডে অবস্থিত বর্তমানে কেদারনাথ ট্রেকিংরুটে এটি পড়ে।
উত্তরাখণ্ডের সরকার ইতিমধ্যেই ত্রিযুগীনারায়ণ (Triyuginarayan Temple) মন্দিরকে কেন্দ্র করেই সমস্ত কিছুর উন্নয়নকে উপর জোর দিচ্ছে। সেখানকার পর্যটন মন্ত্রীর সতপাল মহারাজ জানিয়েছেন, উত্তরাখণ্ডকে বিবাহ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে ইতিমধ্যে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে তাঁদের সরকার। পর্যটকদের টানতে এবং সুবিধার কাজে একাধিক প্রকল্পও শুরু হয়েছে। রাস্তা নির্মাণের জন্য টেন্ডারও ডাকা হয়েছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।