Janmasthami: ১৯৬৪ সালের ২৯ অগাস্ট জন্মাষ্টমী তিথিতে মুম্বইয়ে সঙ্ঘের সরসঙ্ঘচালক গুরুজি গোলওয়ালকের উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ভিএইচপি
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দেশ-বিদেশের কোটি কোটি হিন্দুর আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (VHP)। অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি আন্দোলনের নেতৃত্বদানের মাধ্যমে আপামর হিন্দু সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পেরেছে এই সংগঠন। আজ জন্মাষ্টমীর পুণ্য তিথিতেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করা হয়। ১৯৬৪ সালের ২৯ অগাস্ট তিথি ছিল জন্মাষ্টমীর (Janmasthami)। সেই দিনই মুম্বইতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক মাধবরাও সদাশিবরাও গোলওয়ালকরের প্রেরণায় প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (VHP)।
বর্তমানে এই সংগঠন ভারত ছাড়াও বিদেশেও কাজ করছে হিন্দু সমাজকে সংগঠিত করার জন্য। জানা যায়, ৫০টিরও বেশি দেশে রয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শাখা (VHP)। রাম মন্দির আন্দোলনে বিপুল সফলতা লাভ করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। এরপর থেকেই এই সংগঠন গোহত্যা, জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণ, লাভ জিহাদ- এই সমস্ত ইস্যু নিয়ে সরব হয়। হিন্দু সমাজের মধ্যে জাগরণ তৈরি করতে আন্দোলনও গড়ে তোলা হয়। জানা গিয়েছে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এখনও পর্যন্ত ৬৩ লাখ হিন্দুকে ধর্মান্তকরণের হাত থেকে রক্ষা করেছে এবং সনাতন ধর্ম ছেড়ে যাঁরা অন্য ধর্মে চলে গিয়েছিলেন সেই রকম ৯ লাখ ব্যক্তিকে তাঁরা হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে এনেছেন।
১৯৬৪ সালের ২৯ অগাস্ট মুম্বইয়ে অবস্থিত স্বামী চিন্ময়ানন্দ মহারাজের আশ্রমে একটি বৈঠকের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। জানা যায়, ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন স্বামী চিন্ময়ানন্দ, স্বামী তুকডোজি মহারাজ, শিখ নেতা মাস্টার তারা সিং, জৈন নেতা সুশীল মুনি, গীতা প্রেসের হনুমান প্রসাদ পোদ্দার এবং শ্রী গুরুজি (দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক)। জানা যায়, ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন ৪০ থেকে ৪৫ জন প্রতিনিধিও।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (VHP) প্রথম বড় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালের কুম্ভ মেলাতে। সংগঠনের পুরনো নেতারা বলেন, সে বছর কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল জানুয়ারি মাসের ২২ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত। জানা যায়, ওই সম্মেলনে ২৫ হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছিলেন। শুধু ভারত থেকেই নয়, অন্যান্য ১২টি দেশ থেকেও প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। যাঁদের মধ্যে তিনশোর বেশি খ্যাতনামা সন্ন্যাসীও ছিলেন। ওই সম্মেলনের মাধ্যমেই 'ঘর ওয়াপসি' ভাবনাও গ্রহণ করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। অর্থাৎ হিন্দু ধর্ম ছেড়ে যাঁরা অন্য ধর্মে গিয়েছেন, তাঁদেরকে পুনরায় সনাতনে ফিরিয়ে নিয়ে আসার যে প্রক্রিয়া, তা গ্রহণ করা হয় ১৯৬৬ সালেই। এর পাশাপাশি ধর্মান্তকরণ রোধের বিরুদ্ধেও ওই সম্মেলনে সরব হন সাধুসন্তরা। ১৯৬৬ সালের ওই সম্মেলনেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাদের নীতিবাক্য স্থির করে, 'ধর্ম রক্ষতি রক্ষিতঃ'। প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্র থেকে নেওয়া এই সংস্কৃত শ্লোকের অর্থ হল, ধর্মকে যিনি রক্ষা করেন, ধর্ম তাঁকে রক্ষা করে।
চলতি বছরে জন্মাষ্টমীতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (VHP) ৬০ বছরে পা দিল। এই সময়ের মধ্যে অসংখ্য সফল আন্দোলন তারা দেশ জুড়ে গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে। হিন্দু সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই সংগঠনের অবদান উল্লেখযোগ্য। হিন্দু ধর্মের জাতিভেদ প্রথা রোধ করার জন্যও অনেক আন্দোলনই করেছে বা এখনও করছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসে কর্নাটকের উদুপিতে বসে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ধর্ম সংসদ এবং সেখানেই প্রস্তাব নেওয়া হয়, ‘হিন্দবঃ সোদরা সর্বে, ন হিন্দু পতিত ভবেত মম দীক্ষা হিন্দু রক্ষা, মম মন্ত্র সমানতা’- এই মন্ত্রের। অর্থাৎ, সব হিন্দু আমার ভাই, কোনও হিন্দু কখনও পতিত হতে পারে না। হিন্দুকে রক্ষা করাই আমার ধর্ম, সমানতাই আমার মন্ত্র। ওই ধর্ম সংসদে জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে সবাইকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। হিন্দু সমাজে সমতা রক্ষা করার কথা বলা হয়।
১৯৮২ সালেই অশোক সিঙ্ঘল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতৃত্বে আসেন। তাঁর নেতৃত্বে সংগঠন সারা দেশ জুড়ে বিস্তার লাভ করতে থাকে। ১৯৮৩ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ একতা যাত্রা করে, যার লক্ষ্য ছিল গোটা হিন্দু সমাজকে একত্রিত করা। দেশের হাজার হাজার গ্রামে পৌঁছাতে সক্ষম হয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। প্রায় ৬ কোটি হিন্দু প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন এই কর্মসূচিতে।
১৯৮৪ সালের এপ্রিল মাসে নয়াদিল্লিতে ধর্ম সংসদের আয়োজন করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং সেখানে ১২৫টি সম্প্রদায় থেকে বিভিন্ন সাধুরা অংশগ্রহণ করেন। ওই বছরেরই ৮ অক্টোবর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রাম মন্দির আন্দোলনের ঘোষণা করে এবং সেদিনই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যুব সংগঠন বজরঙ দল স্থাপিত হয়। বর্তমানে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এক মহীরুহে পরিণত হয়েছে। এক লাখেরও বেশি প্রকল্প চলছে সারা দেশ জুড়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নামে। যার মধ্যে ৭০ হাজারেরও বেশি রয়েছে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ২,০০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১,৮০০-এর বেশি স্বাস্থ্য পরিসেবা এবং দেড় হাজারেরও বেশি আত্মনির্ভর কেন্দ্র চলছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।