Waqf Amendment Bill: ওয়াকফ সম্পত্তি এবার হবে দুর্নীতিমুক্ত, কেন্দ্রের পদক্ষেপে কী কী রয়েছে?
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মুসলিম ধর্মে যে কোনও স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তিকে ওয়াকফ (Waqf Act) বলা হয়, যদি তা দলিলের মাধ্যমে আল্লাহর নামে করে দেওয়া হয়। ওয়াকফের নিয়ম অনুযায়ী সেই সম্পত্তি সেবামূলক কাজে ব্যবহার করা হয়। এই সম্পত্তি কখনও ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করা যায় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবর, মসজিদের সম্পত্তি, গরিব মানুষের আশ্রয় দেওয়ার জন্য সম্পত্তি-এসবই ওয়াকফের (Waqf Act) মাধ্যমে করা যায়।
ওয়াকফ সম্পত্তি কেন্দ্রীয়ভাবে দেখভাল করে ওয়াকফ বোর্ড। নির্দিষ্ট ওয়াকফ সম্পত্তির ক্ষেত্রে যাঁরা দায়িত্বে থাকেন তাঁদের বলা হয় মুতাওয়ালি। বর্তমানে যে ওয়াকফ আইন রয়েছে ১৯৯৫ সালের, তারই সংশোধনী বিল সংসদে পেশ করেছে মোদি সরকার। গত বৃহস্পতিবার এই বিলটি (Waqf Amendment Bill) সংসদে পেশ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। এই বিলের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে ওয়াকফ বোর্ডের ওপর নজরদারি বাড়ানো এবং তার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা। এর পাশাপাশি ওয়াকফ সম্পত্তিকে (Waqf Amendment Bill) দুর্নীতিমুক্ত করা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো। কারণ অনেক ক্ষেত্রে উদাহরণ সামনে এসেছে যে ওয়াকফ সম্পত্তিকে অপব্যবহার করা হয়। বিরোধীরা এ নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়কে ভুল বোঝাচ্ছে এবং তারা বলছে যে মোদি সরকারের আনা এই সংশোধনী আসলে সঠিক নয়। কিন্তু আসলে মোদি সরকারের আনা এই বিল পাশ হলে ওয়াকফ সম্পত্তির ক্ষেত্রে বিপুল স্বচ্ছতা আসবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমাদের প্রতিবেদনে জানব ওয়াকফ বিলের ৫টি ইতিবাচক দিক।
মোদি সরকার ওয়াকফ সম্পত্তির জন্য চালু করবে একটি কেন্দ্রীয় পোর্টাল। এই পোর্টালের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তিকে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। সেই সম্পত্তির সম্পূর্ণ আর্থিক লেনদেনও জানাতে হবে ওই পোর্টালে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলেই দুর্নীতি কমবে। অপব্যবহার হবে না ওয়াকফ সম্পত্তির। আসলে নয়া যে বিল সংসদে পেশ করা হয়েছে তার উদ্দেশ্যই হল ওয়াকফ বোর্ড যে সমস্ত সমস্যার মোকাবিলা করছে সেগুলোর স্থায়ী সমাধান করা। এছাড়া, ওয়াকফ সম্পত্তিকে দুর্নীতি ও অপব্যবহারের হাত থেকে রক্ষা করা। কিন্তু বিরোধীরা শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এবং সংখ্যালঘু তোষণের কারণে রাজনীতি করছেন বলে মনে করছে কোনও কোনও মহল। তবে এই সমস্ত বাধা সত্ত্বেও মোদি সরকার একেবারেই দায়বদ্ধ ওয়াকফ সম্পত্তিকে (Waqf Act) রক্ষা করার বিষয়ে।
নতুন বিলের মাধ্যমে তৈরি করা হবে কেন্দ্রীয় ডেটাবেস। কেন্দ্রীয় ডেটাবেসের মাধ্যমে সমস্ত তথ্য এখানে থাকবে। অর্থাৎ সারাদেশে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী এবং গুজরাট থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত যত ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে তা এক জায়গায় ডেটাবেস হিসেবে থাকবে। ওই সম্পত্তি দেখভালের জন্য কোন কোন মুতাওয়ালি নিযুক্ত আছেন, গরিব উন্নয়নের জন্য কী কী কাজ করছে তারা, এর পুরোটাই থাকবে কেন্দ্রীয় ডেটাবেসে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের এমন পদক্ষেপ করা আসলে ওয়াকফের সম্পত্তিগুলিকে দুর্নীতির হাত থেকে বাঁচানোরই প্রয়াস। তাই ওয়াকফের যত সম্পত্তি রয়েছে তা সে স্থাবর বা অস্থাবর হোক, নতুন বিলের মাধ্যমে তা দেখা যাবে কেন্দ্রীয় ডেটাবেসে এবং এক জায়গা থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াকফ সম্পত্তির (Waqf Act) ওপর নজরদারি চালাতে পারবে। দেখা হবে আদৌ কোথাও দুর্নীতি হচ্ছে কিনা।
নতুন এই বিলে জোর দেওয়া হয়েছে ওয়াকফ সম্পত্তিকে যাঁরা দেখভাল করবেন তাঁদের ভূমিকার ওপরেও। এক্ষেত্রে বৈচিত্র আনার প্রয়াস করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যে অমুসলিম সদস্যরাও এবার থেকে সেন্ট্রাল ওয়াকফ কাউন্সিলে থাকতে পারবেন। বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, এরফলে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বৈচিত্র আসবে এবং তা অনেক বেশি স্বচ্ছ হবে। সেখানে মুক্তচিন্তার প্রতিফলন দেখা যাবে। তার কারণ ওয়াকফ সম্পত্তি বিভিন্ন চ্যারিটির কাজেই ব্যবহার করা হয়। কোনও কোনও মহলের মতে, অমুসলিম সদস্যরা ওয়াকফ বোর্ডের নীতি নির্ধারণ কমিটিতে স্থান পেলে সম্পত্তির নজরদারি ও দেখভালের বিষয়ে অনেক বেশি ভারসাম্য রক্ষিত হবে। এর পাশাপাশি ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেনও স্বচ্ছ হবে। এই নতুন ওয়াকফ বিল যে একটি ইতিবাচক ভূমিকা নিতে চলেছে তা স্বীকার করছেন কম বেশি সকলেই।
নতুন ওয়াকফ বিলে মহিলাদের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। ওয়াকফ সম্পত্তি দেখভালের ক্ষেত্রে মোদি সরকার মুসলিম মহিলাদের সেই স্বাধীনতা দিতে চলেছে, যা এর আগে কেবলমাত্র মুসলিম পুরুষরাই পেতেন। অর্থাৎ নতুন বিল লিঙ্গ বৈষম্যকেও মিটিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞদের মহল। এর ফলে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ওয়াকফ বোর্ডে আরও বেশি ভারসাম্য রক্ষিত হবে। ওয়াকফ সম্পত্তির ইতিহাস সাধারণভাবে দুর্নীতি এবং শোষণের ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ব্যক্তিগতভাবেই ওয়াকফ সম্পত্তিকে দখল নেওয়া হয় এবং সেখান থেকে লাভ ব্যক্তিগত কাজেই লাগানো হয়।
প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়েছে ওয়াকফ সম্পত্তিকে যাঁরা দেখভাল করেন, তাঁদেরকে মুতাওয়ালি বলা হয়। অর্থাৎ এক কথায় ওয়াকফ সম্পত্তির ম্যানেজার হন মুতাওয়ালিরা। সাধারণভাবে ওয়াকফ সম্পত্তিতে তাই মুতাওয়ালির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণ, সেবা কাজ, সবকিছুই দেখভাল করেন মুতাওয়ালিরা। ওয়াকফের ধর্মীয় বিষয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানো- এ সমস্ত কিছুতেই হস্তক্ষেপ দেখা যায় তাঁদের। কিন্তু মুতাওয়ালিদের ভূমিকা নিয়েও অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে মুতাওয়ালিদের দুর্নীতিগ্রস্ত হতেও দেখা যায়। সে অর্থে কোনও রকমের সঠিক নির্দেশিকা না থাকার জন্য মুতাওয়ালি নিয়োগে স্বজনপোষণও চলে। নতুন বিলে মুতাওয়ালি নিয়োগেও স্বচ্ছতা আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করছে মোদি সরকার।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।