১৯৮৮ সালে ইয়াসিন মালিক নিয়ন্ত্রণরেখা (LOC) পেরিয়ে পাকিস্তানে যায়। সেখান থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতে ফিরে আসে সে।
ইয়াসিন মালিক।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে কাশ্মীরের (Kashmir) বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিকের (Yasin Malik)। তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করেছিল এনআইএ (NIA)। ইয়াসিনের আইনজীবী যাবজ্জীবনের আবেদন রাখেন। গত ১৯ মে দিল্লির এনআইএ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয় ইয়াসিন।
কে এই মালিক: ১৯৬৬ সালে শ্রীনগরে ঘনজনবসতিপূর্ণ এলাকা মাইসুমায় জন্ম ইয়াসিন মালিকের। তার দাবি ছিল, ১৯৮০ সালে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর (Indian security Forces) সহিংসতা প্রত্যক্ষ করার পর অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল সে। এরপর তালা পার্টি গঠন করে সে, পরে যার নাম হয় ইসলামিক স্টুডেন্টস লিগ৷ ১৯৮৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের ভারত সফরের সময় শ্রীনগরে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচকে ব্যাহত করার চেষ্টা করে মালিক। সেই সময় মালিককে গ্রেফতার করা হয়। চার মাসের জন্য জেলও খাটে মালিক। ১৯৮৮ সালে ইয়াসিন মালিক নিয়ন্ত্রণরেখা (LoC) পেরিয়ে পাকিস্তানে যায়। সেখান থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে আসে সে।
জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের চেয়ারম্যান: পাকিস্তান থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে উপত্যকায় জঙ্গি সংগঠন জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের (JKLF) চেয়ারম্যান হয় মালিক। মূলত কাশ্মীর উপত্যকায় সশস্ত্র জঙ্গিবাদের (armed terrorism) নেতৃত্ব দেয় সে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের (Kashmiri Pandits) বিরুদ্ধে সহিংসতার নেতৃত্বদানকারী প্রাথমিক ব্যক্তিত্বদের একজন মালিক। তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সইদের (Mufti Mohammed Sayeed) কন্যা রুবিয়া সইদকে অপহরণের নেতৃত্বও দেয় ইয়াসিন।
১৯৯০ সালে চারজন সেনা অফিসারকে হত্যার ঘটনায় যুক্ত ছিল সে। ওই বছর অগাস্টে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বন্দি হয় মালিক। ১৯৯৪ সালের মে মাসে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। শর্ত ছিল হিংসা ত্যাগ করে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি অবলম্বন করবে মালিক। ১৯৯৫ সালে উপত্যকায় বিধানসভা নির্বাচনের প্রতিবাদ করে সে। তার দাবি ছিল, গণতন্ত্রের নামে কাশ্মীরিদের উপর নির্বাচন চাপিয়ে দিচ্ছে ভারত সরকার।
আরও পড়ুন: "হত্যার বদলা ফাঁসি", ইয়াসিনের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে সরব প্রয়াত বায়ুসেনা অফিসারের স্ত্রী
২০১৭ সালে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে আর্থিক সাহায্যের মামলা: অভিযোগ, দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল ইয়াসিনের নেতৃত্বাধীন জেকেএলএফ। দেশের সার্বভৌমিকতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা নষ্ট করতে ইন্ধন জোগাচ্ছিল তারা। জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে ওই সংগঠনের। ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতা নষ্ট করতে উপত্যকায় বিচ্ছিন্নতামূলক কাজকর্মে ইন্ধন ছিল তাদের। তাই ২০১৯ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা (separatist leader) ইয়াসিন মালিকের নেতৃত্বাধীন জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ)-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। উপত্যকায় সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগে জেলবন্দি করা হয় মালিককে।
ইয়াসিনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ (UAPA) ধারায় জঙ্গি কার্যকলাপ (terror activitieds), সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা (waging war against government), জঙ্গি সংগঠনের প্রত্যক্ষ সদস্যপদ গ্রহণ-সহ একাধিক মামলা করা হয়েছিল। এনআইএ আদালতে সওয়াল করে, কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রামের নাম করে একটি বিরাট জঙ্গিজাল বুনেছিল ইয়াসিন। বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে, তা জঙ্গি কার্যকলাপে ব্যবহার করছিল দীর্ঘদিন ধরে। গত ১০ মে নিজের দোষ স্বীকার করে নেয় ইয়াসিন। ১৯ মে ইয়াসিনকে দোষী সাব্যস্ত করে এনআইএ-র বিশেষ আদালত।