Hindu: ধর্মীয় সমৃদ্ধি পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে বিশ্ব হিন্দু অর্থনৈতিক মঞ্চ
হিন্দু ধর্মের উন্নতির লক্ষ্যে বিশ্ব হিন্দু অর্থনৈতিক মঞ্চ। ফাইল চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: "ধর্মস্য মূলম অর্থম" – অর্থনৈতিক শক্তিই ধর্ম এবং সামাজিক উন্নতির ভিত্তি। বিশ্ব মঞ্চে আসন দখলের জন্য হিন্দুদের একত্রিত হয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির কথা বলল বিশ্ব হিন্দু অর্থনৈতিক মঞ্চ। সম্প্রতি, মুম্বইয়ে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিল তারা। বিশ্ব হিন্দু অর্থনৈতিক মঞ্চ (WHEF) এই সম্মেলন থেকেই এক রূপান্তরমূলক আন্দোলনের ডাক দেয়। সারা পৃথিবীজুড়ে হিন্দুদের তাদের বিশাল অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্ভাবনা চিনতে এবং ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করে এই সংগঠন। মুম্বইয়ের প্রখ্যাত জিও কনভেনশন সেন্টারে ২০২৪ সালের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এখানে দেখানো হয়, হিন্দুরা একক উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য নিয়ে একত্রিত হলে কী সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
এই সম্মেলনে হিন্দুদের আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক অবদানগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব হিন্দু অর্থনৈতিক মঞ্চ জানায়, ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির বৈশ্বিক হিন্দু সম্প্রদায় তার পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনের প্রতীক। তবে এই অর্থনৈতিক শক্তি এখনও পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়নি। সংগঠনের দাবি, এটি একটি অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকারী শক্তি। এই মঞ্চে হাজার হাজার হিন্দু পেশাজীবী, ব্যবসায়ী নেতা এবং নীতি নির্ধারকরা একত্রিত হয়েছিলেন। হিন্দুদের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করার কথা বলা হয়। এই বিষয়ে একসঙ্গে ধারণা ভাগাভাগি এবং তার ওপর কাজ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। হিন্দুদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নানা পদ্ধতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। মঞ্চটির মূল লক্ষ্য ছিল ভারতকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এমনকি কৃষি প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং প্রতিরক্ষা রফতানি সেক্টরে ভারতকে এক নম্বর জায়গা করে দেওয়াই এই সংগঠনের লক্ষ্য।
শুধু ভারতবর্ষ নয়, একটা সময় হিন্দু ধর্মের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল সকল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে। ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়ার মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলিতে ছিল হিন্দুদের রমরমা। ভারতে পল্লব রাজাদের রাজত্বের সময় থেকে হিন্দুত্বের রমরমা বৃদ্ধি পায়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে যে ১৫ শতকের আগে মালেশিয়ার আদিবাসীরা হয় হিন্দু ছিলেন, নতুবা বৌদ্ধ। ১ হাজার ৭০০ বছর আগে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক পথ ধরে মালেশিয়ায় হিন্দুধর্ম ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় ব্যবসায়ী, পণ্ডিত, পুরোহিতদের মাধ্যমে দেশটিতে হিন্দু ধর্মের প্রসার ঘটেছিল। জানা গিয়েছে, ৭ এবং ১৬ শতকে ইন্দোনেশিয়ায় বেশিরভাগ অঞ্চল হিন্দু রাজারা শাসন করেছিলেন। হিন্দুধর্ম এখনও ইন্দোনেশিয়ার ছয়টি সরকারি ধর্মের মধ্যে একটি। কম্বোডিয়ার মতো দেশটিতেও একসময় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন হিন্দুরা। শিবের উপাসনা করেতেন তাঁরা। ১০০ খ্রিস্টপূর্বে থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ফানান সাম্রাজ্যের সময় কম্বোডিয়ায় হিন্দু ধর্মের বিকাশ ঘটেছিল। ১৫ শতক পর্যন্ত কম্বোডিয়ায় হিন্দু ধর্মের প্রাধান্য ছিল। আফগানিস্তানও ষষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত হিন্দু ও বৌদ্ধ অধ্যুষিত ছিল।
বিশ্বের নানা প্রান্তে হিন্দুদের বিকাশ ঘটলেও ভারতই ছিল হিন্দুত্বের আধার। ভারতের কাছে প্রতিভা, সম্পদ এবং বৈশ্বিক প্রসার রয়েছে যা নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়। তবে, বৃহৎ চিন্তা এবং সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি সামগ্রিক ইচ্ছা প্রয়োজন। হিন্দু সম্প্রদায় যদি তাদের অর্থনৈতিক অবদানকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করে, তবে তা একটি বড় সুযোগ হাতছাড়া করার মতো হবে, বলে বিশ্বাস বিশ্ব হিন্দু অর্থনৈতিক মঞ্চের। সংগঠনের লক্ষ্যই হল হিন্দুদের অর্থনৈতিক শক্তি এবং সামাজিক ঐক্যকে কাজে লাগিয়ে একটি দৃঢ় অবস্থান তৈরি করা।
বিশ্ব হিন্দু অর্থনৈতিক মঞ্চ হিন্দু সম্প্রদায়ের সামাজিক গঠন পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘদিন ধরে হিন্দুরা তাদের সাফল্যগুলি প্রকাশ্যে উদযাপন করতে অস্বস্তি বোধ করেছে। কিন্তু এটা কখনওই কাম্য নয়। হিন্দু ইতিহাস, মূল্যবোধ এবং সাফল্যগুলিকে সম্মান জানানো উচিৎ। ২০২৪ এ বিশেষভাবে দুই হিন্দুর মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেনের ওপর গুরুত্ব দেয় এই সংগঠন। এই পদ্ধতি সম্প্রদায়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সংহতি স্থাপন করতে সাহায্য করবে, বলে মনে করে তারা। সংগঠনের দাবি, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, যা অন্তর্ভুক্তি ও সহযোগিতার মাধ্যমে গড়ে উঠবে, তা সামাজিক ঐক্যকে দৃঢ় করবে এবং বৈশ্বিক মঞ্চে হিন্দু সম্প্রদায়ের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
আরও পড়ুন: আয়করে ছাড় বাড়তে চলেছে! নতুন বছরের বাজেট নিয়ে কী ভাবছে কেন্দ্র?
ভারতীয় বংশোদ্ভূত জনগণের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই দৃষ্টিভঙ্গির একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে উঠে এসেছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এই সম্প্রদায় বহু বছর ধরে বিদেশী অর্থনীতিতে অবদান রেখেছে। তবে, ভারতীয়দের ভূমিকা এখনো পুরোপুরি ব্যবহৃত হয়নি। বিশ্ব হিন্দু অর্থনৈতিক মঞ্চ এই ব্যাপারে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে তারা ভারত এবং বিশ্বের মধ্যে এক সেতুবন্ধন তৈরি করতে সক্ষম হয়। অর্থনৈতিক শক্তি এবং সাংস্কৃতিক গর্ব একে অপরের পরিপূরক। ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি সমৃদ্ধ ভারত গড়ে তোলার পথ কখনও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি দুটিই একত্রিত হয়ে পরিপূর্ণ হতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, হিন্দুরা কি তাদের অর্থনৈতিক শক্তি, সামাজিক মূলধন, এবং সাংস্কৃতিক গর্বকে একত্রিত করে একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি গঠন করতে প্রস্তুত? হিন্দু সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এবং সক্রিয় পদক্ষেপের মাধ্যমেই এই লক্ষ্য পূরণ হতে পারে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।