আজ ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বর্তমান সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে...
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ‘‘যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি, বিচারের স্রোতঃপথ ফেলে নাই গ্রাসি’’, নিজের লেখায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই মুক্তচিন্তার কথা তুলে ধরেছিলেন। বাকস্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার প্রকাশ ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত রয়েছে ১৯(১)(এ) ধারায়। প্রতিবছর ৩ মে 'ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে' (World Press Freedom Day) হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনটির তাৎপর্য হিসেবে তুলে ধরা হয় সাংবাদিকতার গুরুত্বকে। বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার প্রকাশ স্বাধীনভাবে হচ্ছে কি না, তা বোঝা যায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাতেই। যেখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বেশি, সেখানেই সত্য উদঘাটিত হয়। অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করার নজির রয়েছে দেশ-বিদেশে। আমাদের দেশের কথা বলতে গেলে, ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থা জারির পরেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছিল। সেসময় সরকার যেমনভাবে চাইতো, সেই খবরই জনগণের সামনে পরিবেশন করা হতো। যার ফলে দেশের মানুষের সামনে সত্য উৎঘাটিত হতে পারত না। সরকারের দমন পীড়ন, অত্যাচার সাধারণ মানুষ কোনওভাবেই জানতে পারতো না।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে ১৯৯৩ সালের ৩ মে 'ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে' হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯১ সালে 'ওয়াইন্ডহুক ঘোষণা'র ফসলই ছিল ১৯৯৩ সালের ৩ মে 'ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডমে'র ঘোষণা। আসলে 'ওয়াইন্ডহোক ডিক্লারেশন'-এর মাধ্যমে আফ্রিকা মহাদেশের সংবাদপত্রগুলিকে যে কোনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখার কথা বলা হয় এবং আফ্রিকা মহাদেশের সংবাদপত্রগুলিকে স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করা হয়। নামিবিয়ার রাজধানী ওয়াইন্ডহোকে ২৯ এপ্রিল থেকে ৩ মে ১৯৯১ পর্যন্ত এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছরে 'ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে' ৩১ বর্ষে পা দিল। এই দিনেই আরও একবার প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে মিডিয়া এথিক্সের কথাও, অর্থাৎ শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে অথবা যে কোন প্রলোভনে খবর করা নয়, যা সত্য তা তুলে ধরা।
- এই দিনে যে কোনও দেশের সরকারকে স্মরণ করানো হয়, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা রক্ষা করার কর্তব্যকে।
- বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমের মৌলিক নীতিগুলিও প্রচার করা হয় এইদিনে।
- এই দিনেই সেই সমস্ত সাংবাদিকদেরকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়, যাঁরা তাঁদের নিজেদের কর্তব্য করতে গিয়ে জীবন আহুতি দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেকোনও সোশ্যালিস্ট এবং কমিউনিস্ট দেশগুলিতে সংবাদপত্রের ওপর সে দেশের সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। যার ফলে সরকারের বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয় সংবাদমাধ্যমকে। গত বছর চিন দেশে বিপুল করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর বাইরে যাতে প্রকাশ না হয় সেজন্য বিধি নিষেধ জারি করেছিল চিনের কমিউনিস্ট সরকার। এমন অজস্র উদাহরণ আন্তর্জাতিক স্তরে রয়েছে। ৩ মে দিনটির তাৎপর্য ঠিক এখানেই। সত্য উদ্ঘাটনে সংবাদমাধ্যমের (World Press Freedom Day) স্বাধীনতা ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা বোঝাতেই আন্তর্জাতিকভাবে আজকের দিনটি পালন করা হয় 'ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে' হিসেবে।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশের ভারসাম্য সংকট কিংবা যে কোনও দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে তা তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমই। বেআইনি খননকার্য, পরিবেশ দূষণ, মানব পাচার, পশু পাচার, বনাঞ্চল ধ্বংস, জলাশয় ভরাট, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি বিষয় সংবাদমাধ্যমের দ্বারাই সাধারণ মানুষের নজরে আসে। সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয় মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং বিশ্ব শান্তির বার্তা। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে স্মার্টফোনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর হাতের মুঠোয় পৃথিবী। যে কোনও প্রান্তে যে কোনও ঘটনা নিমেষে চলে আসে সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে। কিন্তু কোনও ঘটনা তখনই বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে, যখন সাংবাদিকদের স্বাধীনতা থাকে।
- সাংবাদিকদের ওপর কোনওভাবে রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী গোষ্ঠী চাপ দিতে পারবে না।
- বাক স্বাধীনতা এবং মুক্তচিন্তার অধিকারকে নিশ্চিত করা।
- অঞ্চল ভিত্তিক, দেশভিত্তিক, সম্প্রদায়ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমগুলিকে স্বাধীনতা দেওয়া।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।