মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আরও শক্তিশালী হচ্ছে ভারতীয় নৌসেনা (Indian Navy)। মঙ্গলবার নৌবাহিনীতে ‘কমিশন’ বা অন্তর্ভুক্ত হলো দেশীয় স্টেলথ গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ‘আইএনএস ইম্ফল’। প্রতিক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রণতরীকে যুক্ত করা হলো। উপস্থিত ছিলেন নৌসেনা প্রধান অ্যাডমিরাল আর হরি কুমার, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে সহ বিশিষ্টজনেরা।
কতটা শক্তিশালী ‘ডি-৬৮’?
‘আইএনএস ইম্ফল’ (INS Imphal) হলো প্রজেক্ট-১৫বি অন্তর্গত নির্মিত চারটি স্টেলথ গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজের মধ্যে তৃতীয়। এই প্রকল্পের প্রথম যুদ্ধজাহাজটি ছিল ‘আইএনএস বিশাখাপত্তনম’, নৌসেনায় কল-সাইন ‘ডি-৬৬’। ফলে, বাকি তিনটিও বিশাখাপত্তনম শ্রেণির রণতরী। নৌসেনায় ইম্ফলের কল-সাইন হচ্ছে ‘ডি-৬৮’। দ্বিতীয় জাহাজটি ছিল ‘আইএনএস মরমুগাও’, কল-সাইন ‘ডি-৬৭’। শেষ তথা চতুর্থ জাহাজটির নাম রাখা হবে ‘আইএনএস সুরাট’, কল-সাইন ‘ডি-৬৯’। গত বছরের মে মাসে তাকে প্রথমবার জলে ভাসানো হয়েছে।
Speaking at the Commissioning Ceremony of ‘INS Imphal’ in Mumbai.
— Rajnath Singh (@rajnathsingh) December 26, 2023
https://t.co/iO0HVRBWNZ
‘আইএনএস ইম্ফল’-এর ওজন প্রায় ৭৪০০ টন। ১৬৪ মিটার দৈর্ঘ্যের এই যুদ্ধজাহাজ সর্বাধুনিক মারণাস্ত্র ও সেন্সরে সজ্জিত। এটিই হতে চলেছে এখনও পর্যন্ত নৌসেনার সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে আধুনিক ডেস্ট্রয়ার। এতে একদিকে যেমন রয়েছে ব্রহ্মোসের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বাধুনিক সংস্করণ, তেমনই রয়েছে মাঝারি পাল্লার অত্যাধুনিক ‘বারাক-৮’ ভূমি থেকে আকাশ মিসাইল থেকে শুরু করে জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও সাবমেরিন-বিধ্বংসী টর্পিডোর বিপুল বৈচিত্র্যপূর্ণ সম্ভার। এতে রয়েছে একটি ৭৬ মিমি সুপার র্যাপিড মাউন্টেড মেইন নেভাল গান এবং চারটি একে-৬৩০ ৩০ মিমি গান— যা কম দূরত্বে আকাশপথে হামলা করা শত্রুর যে কোনও বিমান, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্রকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম। এই জাহাজের সর্বোচ্চ গতি হবে ৩০ নট বা ঘণ্টায় ৫৬ কিমি।
স্বয়ংক্রিয়শীলতা এবং স্টেলথ বৈশিষ্ট্য
এমনিতে, ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির জাহাজের মারণক্ষমতা মারাত্মক। তবে নৌসেনার (Indian Navy) তরফে জানানো হয়েছে, ‘আইএনএস ইম্ফল’ (INS Imphal) সাবমেরিন-ধ্বংসে বিশেষভাবে পারদর্শী। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘আরবিইউ-৬০০০’ সাবমেরিন-বিধ্বংসী রকেট লঞ্চার, ৫৩৩ মিমি টর্পিডো লঞ্চার এবং অ্যান্টি-সাবমেরিন হেলিকপ্টারের দৌলতে এটি ভয়ঙ্কর ঘাতক হিসেবে পরিণত। এছাড়া, যে কোনও ধরনের পরমাণু, জৈব ও রাসায়নিক হামলা থেকে বাঁচার ক্ষমতা রয়েছে এই জাহাজের। ‘আইএনএস ইম্ফল’-এর স্বয়ংক্রিয়শীলতা এবং স্টেলথ (শত্রু রেডারে অদৃশ্য থাকার ক্ষমতা) বৈশিষ্ট্য একে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে।
সর্বাধুনিক রেডার সিস্টেম মোতায়েন
বন্দর ও সমুদ্রে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ট্রায়ালের পর গত ২০ অক্টোবর, ভারতীয় নৌসেনার হাতে পাকাপাকিভাবে তুলে দেওয়া হয়েছিল এই অত্যাধুনিক রণতরীকে (INS Imphal)। গতমাসেই এই জাহাজ থেকে দূরপাল্লার ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। কমিশন না হওয়া কোনও জাহাজ থেকে সেই প্রথম কোনও ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা হয়েছিল। এই জাহাজে অন্যতম শক্তি হলো এর রেডার সিস্টেম। এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে আধুনিক ও সবচেয়ে শক্তিশালী রেডার বসানো হয়েছে এই যুদ্ধজাহাজে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহরের নামে প্রথম রণতরী
প্রসঙ্গত, এই প্রথম দেশের উত্তর-পূর্বাংশের কোনও শহরের নামে যুদ্ধজাহাজের নামকরণ (INS Imphal) করা হলো। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জাহাজের নাম-ফলকের উন্মোচন করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। এর থেকেই প্রমাণিত যে, জাতীয় সুরক্ষার ক্ষেত্র এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছে মোদি সরকার। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে এই নামকরণে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। কমিশনিং হওয়ার পর, নৌসেনার (Indian Navy) পশ্চিম কমান্ডের অন্তর্গত মোতায়েন থাকবে ‘আইএনএস ইম্ফল’।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours