Medical College: জেলার মেডিক্যাল কলেজ কী শুধুই বিজ্ঞাপন? এসএসকেএমের নতুন রেকর্ডে নয়া বিতর্ক

যখন জেলায় মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে, তখন জ্বর, হাঁপানি, স্ত্রীরোগের চিকিৎসার জন্য গ্রাম থেকে বা মফস্বল থেকে সাধারণ মানুষকে কেন কলকাতার হাসপাতালে আসতে হচ্ছে?
1650487905_new-project-1
1650487905_new-project-1

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল: হাসপাতালের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে সরকারি ওয়েবসাইট, সর্বত্র নয়া রেকর্ডের বিজ্ঞাপনে ব্যস্ত রাজ্য সরকার। আর নিজেদের দেওয়া বিজ্ঞাপনেই তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। রাজ্যের চিকিৎসক মহল জানাচ্ছে, এই নয়া রেকর্ড বাংলার স্বাস্থ্য পরিষেবার রুগ্ন হাল ছাড়া আর কিছুই নয়। জেলা সফরে গেলেই নতুন মেডিক্যাল কলেজ তৈরির কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কোচবিহার, হুগলি, কিংবা মেদিনীপুর, যেখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যান, একটা নতুন মেডিক্যাল কলেজ তৈরির কথা ঘোষণা করেন। আপাতত রাজ্যের প্রত্যেক জেলাতেই বেশ কয়েকটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল আর মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। কিন্তু রাজ্যের প্রথম সারির সরকারি হাসপাতালের নয়া রেকর্ড, সেই সমস্ত জেলা হাসপাতালের অস্তিত্বকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

সম্প্রতি এসএসকেএম হাসপাতালে একদিনে আউটডোরে রোগী হয়েছিল ১৭ হাজার। স্বাধীনতার পরে এ এক রেকর্ড। এমনি দাবি করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য ভবনও এই দাবির স্বীকৃতি দিয়ে জানিয়েছে, রোগী পরিষেবায় নয়া নজির গড়েছে এসএসকেএম (SSKM)। কিন্তু, এসএসকেএমের এই রেকর্ড আসলে এ রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার ভগ্ন দশাকেই সামনে নিয়ে এলো বলে মনে করছেন রাজ্যের চিকিৎসক মহল। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এসএসকেএমের মতো সুপার স্পেশ্যালিটি মেডিক্যাল কলেজ, আসলে তৃতীয় স্তরের হাসপাতাল। অত্যন্ত জটিল রোগ ছাড়া এই হাসপাতালে রোগী আসার প্রয়োজন হওয়া উচিত নয়। এটাই আদর্শ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিন্তু এ রাজ্যের পরিস্থিতি উল্টো।

আরও পড়ুন: এবার ভারতীয় মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারির মালিকও আম্বানি? জানুন কত টাকায় হচ্ছে হস্তান্তর 

কেন এমন বলছেন? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যে কোনও রোগী তাঁর সমস্যা নিয়ে প্রথমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাবেন। যা গ্রামে গ্রামে থাকা উচিত। তারপরে সদর হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল। সেখানেও রোগ নিরাময় না হলে, জেলার মেডিক্যাল কলেজে রোগীকে পাঠানো হবে। যদি রোগ অত্যন্ত জটিল হয়, তখন সেই রোগীকে এসএসকেএমের মতো হাসপাতালে রেফার করা হবে। যেমন, স্নায়ুর অত্যন্ত জটিল অস্ত্রোপচার কিংবা হৃদরোগ, কিডনি প্রতিস্থাপন বা লিভারের জটিল অস্ত্রোপচারের মতো সমস্যার সমাধান ছাড়া এই ধরনের হাসপাতালে আসার প্রয়োজন নেই। যখন রাজ্যের জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে, তখন জ্বর, হাঁপানি, স্ত্রীরোগের চিকিৎসার জন্য গ্রাম থেকে বা মফস্বল থেকে সাধারণ মানুষকে কেন কলকাতার হাসপাতালে আসতে হচ্ছে? এখানেই বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, তাহলে কি জেলার মেডিক্যাল কলেজে বা জেলার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না?

এসএসকেএম হাসপাতালের কর্মরত ইন্টার্নদের একাংশ জানাচ্ছেন, আউটডোরে যে রোগীরা দেখান, তাদের তিন বার লাইন দিতে হয়। সাধারণত ভোর তিনটে থেকে লাইন হয়। প্রথমে আউটডোরের টিকিট কাটার লাইন, তারপরে চিকিৎসককে দেখানোর আলাদা লাইন। তারপরে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে আরেকটি লাইন। অর্থাৎ, পরিষেবা পাওয়ার জন্য কার্যত রোগীর হয়রানির শেষ থাকে না। জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রশ্ন, এত রোগীকে একদিনে দেখতে হলে চিকিৎসকেরাও কতখানি মনোযোগ দিয়ে দেখতে পারেন, সে নিয়েও প্রশ্ন থাকছে।

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এক অধ্যাপক-চিকিৎসক বলেন, "হিসাব করে দেখেছি ১৩ সেকেন্ডের বেশি সময় একজন রোগীকে দিতে পারছি না। তার সব কথা শোনার সময় হচ্ছে না। এতে রেকর্ড হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু রোগী পরিষেবার মান তলানিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলার হাসপাতালে ঠিকমতো পরিকাঠামো থাকলে এই ভিড় কখনওই হবে না। রোগী পরিষেবাও ভালো হবে। " মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) যে সমস্ত সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল উদ্বোধন করেছিলেন, দীর্ঘদিন অভিযোগ, সেখানে পরিকাঠামো নেই। পরিকাঠামোর অভাবে একাধিক বিভাগ বন্ধ হয়ে আছে। ফলে, জেলা থেকে মানুষ বাধ্য হয়ে কলকাতার হাসপাতালে যান। এমনকি আরামবাগ, কোচবিহার, পূর্ব মেদিনীপুরে সম্প্রতি যে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করেছেন, সেখানেও কোনও পরিকাঠামো নেই বলে অভিযোগ। রেডিওথেরাপি বিভাগের এক অধ্যাপক-চিকিৎসক জানান, গত ১২ বছর তিনি কলেজে পড়াতে পারেননি। কারণ, তাঁকে যে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে বদলি করা হয়েছে, সেখানে রেডিও থেরাপির ক্লাস নেওয়ার মতো উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। এদিকে ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে দীর্ঘ লাইন থাকে কলকাতার সরকারি হাসপাতালে। অনেকে চিকিৎসার সুযোগও পান না।

রাজ্যের চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় কোনও রকম পরিকল্পনা নেই। বিজ্ঞাপনের জৌলুসে হারিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির খবর। তাই জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধন হলেও সাধারণ মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না। দিনের পর দিন সামান্য অসুখেও চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এদিকে ঝাঁ চকচকে বিল্ডিং গড়ে উঠছে। কিন্তু রোগী পরিষেবা তলানিতে গিয়ে ঠেকছে।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles