Attacks on Hindus: শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারী চিন্ময়কৃষ্ণ গ্রেফতার, অথচ মন্দিরে হামলাকারীদের ধরতে পারছে না ইউনূস সরকার, তোপ ব্রিটিশ সাংসদের...
ব্রিটিশ সাংসদ গার্ডিনার (উপরে) ও প্রীতি প্যাটেল (নীচে) ডানদিকে ব্রিটিশ সংসদ (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের (Bangladesh) হিন্দুদের ওপর ক্রমাগত নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবার মুখ খুললেন ব্রিটেনের সাংসদ প্রীতি প্যাটেল এবং ব্যারি গার্ডিনার। ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে গার্ডিনারের মন্তব্য যে, বাংলাদেশের (Bangladesh) পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে তা ‘ছুরির ধারে’র ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবারই বসেছিল ব্রিটেনের সংসদ অধিবেশন। সেখানেই বক্তব্য রাখেন গার্ডিনার। নিজের বক্তব্যে তিনি জানান, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারী চিন্ময়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ সরকার, অথচ মন্দিরে যারা হামলা করছে তাদের ধরতে পারছে না ইউনূস প্রশাসন।
গার্ডিনার নিজের বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘যখন বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুরা, তখনই তাঁদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মতো অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তাঁদের জামিন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কিন্তু মন্দিরগুলিতে যারা হামলা করছে, তাদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি ইউনূস সরকার।’’ এর পাশাপাশি বাংলাদেশের শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি জোরদার সওয়াল করেন ব্রিটিশ সংসদে। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের (Bangladesh) পরিস্থিতি ছুরির ধারের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।’’
ব্রেইন্ড ওয়েস্টের এমপি তথা লেবার পার্টির নেতা ব্যারি গার্ডিনার ব্রিটেনের বিদেশ মন্ত্রককে অনুরোধ জানান যে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চলমান হামলার ওপর বিবৃতি দিতে। এরই জবাবে ব্রিটেনের কমনওয়েলথ বিষয়ক বিদেশসচিব ক্যাথরিন ওয়েস্ট আশ্বস্ত করেন যে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে ইতিমধ্যে বিষয়টি (সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা) জানানো হয়েছে। ক্যাথরিন আরও বলেন, ‘‘তারা (বাংলাদেশ সরকার) জানিয়েছে যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমর্থনেই তারা চলবে।’’ ক্যাথরিন ওয়েস্ট নিজের বক্তব্যে বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনূসের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আমরা সম্পূর্ণভাবে আলোচনা করেছি এবং যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল বাংলাদেশি হিন্দুদের সুরক্ষা। কারণ ব্রিটিশ সরকার সবসময় মনে করে, ধর্মীয় স্বাধীনতা অধিকার প্রত্যেকের থাকা উচিত।’’ নিজের বক্তব্যে ক্যাথরিন ওয়েস্ট আরও বলেন, ‘‘ওই বৈঠকের সময়ে আমাকে ইউনূস সরকার আশ্বস্ত করেছিল, বাংলাদেশের (Bangladesh) অন্যতম প্রধান উৎসব, দুর্গাপুজোর আগে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যা সমস্যা হয়েছে তা মিটিয়ে নেওয়া হবে। আমরা তখন খুশি হয়েছিলাম ও লক্ষ্য করেছিলাম যে মণ্ডপ এবং হিন্দু মন্দিরগুলোতে সুরক্ষার জন্য বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা ছিল।’’
অন্যদিকে, ব্রিটিশ সংসদে বক্তব্যের সময় লেবার পার্টির নেতা গার্ডিনার হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন, ‘‘একজন হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন ইসকনের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘ইসকন হল হিন্দু ধর্মের একটি বিশ্বব্যাপী প্ল্যাটফর্ম। আমাদের দেশেও অনেক ইসকনের ভক্ত রয়েছেন। আমার নির্বাচনী এলাকা উত্তর পশ্চিম মন্ডলের আশেপাশেও দেখা যায়।’’
তিনি (গার্ডিনার ) আরও বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারের উচিত সেদেশে আইনের শাসনকে প্রতিষ্ঠা করা এবং শান্তি-শৃঙ্খলাকে ফিরিয়ে আনা। আমরা এখন যা দেখছি তাতে বোঝা যাচ্ছে যে সেখানকার হিংসা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে।’’ অন্যদিকে, কনজারভেটিভ পার্টির এমপি প্রীতি প্যাটেলের উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং গার্ডিনারের বক্তব্যকে সমর্থন করে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে হিংসা আরও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আমরা এখন তা লক্ষ্য করছি। আমরা দেখছি বাংলাদেশের মানুষজন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।’’ একইসঙ্গে প্রীতি প্যাটেল ব্রিটিশ সরকারের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের জীবন রক্ষার অধিকার, হিংসা প্রতিরোধ— এ সমস্ত বিষয় নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের কী আলোচনা হয়েছে তার বিবরণ মন্ত্রী কি দেবেন?’’
এর জবাবে ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অবস্থিত আমাদের হাইকমিশন অত্যন্ত সক্রিয় রয়েছে এবং প্রতিটি ঘটনার উপরে গুরুত্বপূর্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিশ্বের যে কোন প্রান্তে যখনই ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় বিশ্বাস চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে, আমরা সেখানে সেই সমস্ত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অধিকারের পক্ষে সওয়াল করব।’’
প্রসঙ্গত, আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে ছিল চিন্ময় প্রভুর মামলার শুনানি। সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভুর (Chinmoy Krishna Das) হয়ে সওয়াল করার কথা ছিল আইনজীবী রমেন রায়ের। কিন্তু তাঁর ওপর নৃশংস হামলা চালায় মৌলবাদীরা। বর্তমানে, সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালের আইসিইউতে রমেন রায়। ফলে, আশঙ্কা ছিলই যে, আজ, মঙ্গলবার চিন্ময়ের হয়ে আদালতে সওয়াল কে করবেন? সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। প্রাণের ভয়ে কোনও আইনজীবী হিন্দু সন্ন্যাসীর হয়ে আদালতে সওয়াল করলেন না। এর ফলে পিছিয়ে গেল সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিন মামলা। মঙ্গলবার আদালত কী রায় দেয়, সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন বিশ্বজুড়ে হিন্দুরা। কিন্তু এদিন কোনও আইনজীবী উপস্থিত না হওয়ায়, পিছিয়ে গেল সেই মামলা। আপাতত ১ মাস জেলেই থাকতে হবে (Bangladesh) সনাতনী সন্ন্যাসীকে। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী বছরের ২ জানুয়ারি।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।