Targeting Minority: কীভাবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন চলছে, তা নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন-অশান্ত বাংলাদেশ: টার্গেট হিন্দু। আজ একাদশ পর্ব।
হিন্দু সন্ন্যায়ী চিন্ময়প্রভু (ফাইল ছবি)
হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার পর থেকেই অশান্ত বাংলাদেশ। মন্দির ভাঙচুর, আগুন, মারধর, খুন-সবেতেই টার্গেট সংখ্যালঘু হিন্দু। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ইউনূসের কঙ্কালসার চেহারাটা এখন গোটা বিশ্বের কাছে পরিষ্কার। ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর গোটা বিশ্ব জেনে গিয়েছে, কী ভয়াবহ এবং আতঙ্কের পরিবেশ সেখানে। শুধু কি সাধারণ নিরীহ হিন্দু বা হিন্দুদের মন্দির? না, বেছে বেছে কাঠগড়ায় তুলে চরম শাস্তি দেওয়া হয়েছে আওয়ামি লিগপন্থী জনপ্রতিনিধি, পুলিশ অফিসার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পদস্থ কর্তাদেরও। কীভাবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন চলছে, কীভাবে একের পর এক সরকারি অফিসার বা জনপ্রতিনিধির ওপর শাস্তির খাঁড়া নেমে আসছে, তা নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ একাদশ পর্ব।
অশান্ত বাংলাদেশ: টার্গেট হিন্দু-১১
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার হতেই বাংলাদেশ জুড়ে (Bangladesh Crisis 11) ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। হিন্দু সমাজের সদস্যরা দলে দলে রাস্তায় নামতে থাকেন এবং চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবি তোলেন। শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারত সহ বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে ইসকন সন্ন্যাসীর মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নামেন সনাতনীরা। বাংলাদেশের মধ্যে বিক্ষোভ দেখা যায় চট্টগ্রামে। এর পাশাপাশি, ঢাকা, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী- এসমস্ত জায়গাতেও হিন্দু সমাজের মানুষেরা রাস্তায় নামেন এবং ইসকন সন্ন্যাসীর মুক্তির দাবি তোলেন। অনেক জায়গায় হিন্দু সমাজের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের পুলিশের সঙ্গে হিন্দু সমাজের ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। গ্রেফতারির পরে চিন্ময়প্রভুকে কারাগারে ওষুধ দিতে দেওয়া হয়নি পুলিশের তরফে, এমনটাই অভিযোগ সেসময় সামনে আসে বাংলাদেশের একাধিক হিন্দু সংগঠনের তরফে। ধৃত হিন্দু নেতাকে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে হেনস্থা করার অভিযোগও ওঠে।
চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করার (Bangladesh Crisis 11) পরেই বাংলাদেশের ইসকনের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানানো হয় এবং এ ধরনের হিন্দু বিরোধী (Targeting Minority) কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়। ওই বিবৃতিতে ইসকন জানায়, তারা একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। তাই সেই ধর্মীয় সংগঠনের একজন সন্ন্যাসীর মৌলিক অধিকার রয়েছে শান্তি ও সম্প্রীতিতে বাঁচার অধিকার।
২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেফতার করা হয় চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে, তারপর থেকে (Targeting Minority) এখনও পর্যন্ত (প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) জেলেই রয়েছেন চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। ২৬ নভেম্বর তাঁকে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের আদালতে তোলা হয়। সেদিন তাঁর মামলার শুনানিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে কোর্ট চত্বরে। এই সংঘর্ষের সময় একদল আইনজীবীর সঙ্গে হিন্দু সমাজের সংঘর্ষ শুরু হলে, তার মাঝে পড়ে মৃত্যু হয় সাইফুল ইসলাম নামের এক আইনজীবীর। আইনজীবীর মৃত্যুর খবর সামনে আসতেই নানা রকমের মতামত উঠে আসে। একটি সূত্র দাবি করে, ইসকন সমর্থকদের (Bangladesh Crisis 11) বাঁচাতে গিয়েই মরতে হয় সাইফুলকে। এখনও পর্যন্ত সাইফুলের মৃত্যু তদন্ত সাপেক্ষ।
তবে বাংলাদেশের ইউনূস সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত একাধিক মিডিয়া খবর করেছে যে সাইফুল ইসলাম হল একজন পাবলিক প্রসিকিউটার এবং সে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে ডিফেন্ড করতে সেখানে যায়নি। যদিও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের একজন প্রতিনিধি সুমন রায় দাবি করেছেন যে সাইফুলকে হিন্দু ভেবেই হত্যা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সেদিনকার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অজস্র হিন্দু জখম হন। বাংলাদেশের স্থানীয় সংবাদ পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্ট অনুযায়ী (Bangladesh Crisis 11), চট্টগ্রাম আদালতে সেদিন শ্রীবাস দাস ছোটন, সুজিত ঘোষ, উৎপল- এই নামের হিন্দুরা গুরুতর ভাবে জখম হন। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৬ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন ২৬ নভেম্বর। বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসীকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। হিন্দু সন্ন্যাসীর হয়ে সওয়াল করেন ৫১ জন আইনজীবী।
সাইফুলের মৃত্যু হতেই ইউনুস সরকার তড়িঘড়ি বিবৃতি জারি করে। তারা জানায়, যারাই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদেরকে চরমতম শাস্তি দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী দাবি করেন, সাইফুলের খুনিদের খুনের ঘটনায় অনেকেই যুক্ত হয়ে আছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার দফতরের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম দাবি করেন,যাঁরা এই খুনের ঘটনায় যুক্ত বা জড়িত আছেন, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে তিনি বলেন যে ওই হিন্দু সন্ন্যাসী বাংলাদেশ সম্প্রীতির পরিবেশকে নষ্ট করতে চাইছেন এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন তিনি।
এরপরেই বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সেনা নামানো হয়। এই সেনা নামার পরেই চট্টগ্রামের একাধিক অঞ্চলে তারা তল্লাশি অভিযান চালাতে থাকে। তল্লাশির নামে হিন্দুদের ওপর আবারও অত্যাচার নেমে আসে এবং চট্টগ্রাম থেকে ৩০ হিন্দুকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশের সেনা। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় আইনজীবী খুনের।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।