Bangladesh Army: কীভাবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন চলছে, তা নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন-অশান্ত বাংলাদেশ: টার্গেট হিন্দু। আজ চতুর্থ পর্ব।
বাংলাদেশি হিন্দুদের রক্ষা করার আর্জি। ফাইল চিত্র
হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার পর থেকেই অশান্ত বাংলাদেশ। মন্দির ভাঙচুর, আগুন, মারধর, খুন-সবেতেই টার্গেট সংখ্যালঘু হিন্দু। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ইউনূসের কঙ্কালসার চেহারাটা এখন গোটা বিশ্বের কাছে পরিষ্কার। ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর গোটা বিশ্ব জেনে গিয়েছে, কী ভয়াবহ এবং আতঙ্কের পরিবেশ সেখানে। শুধু কি সাধারণ নিরীহ হিন্দু বা হিন্দুদের মন্দির? না, বেছে বেছে কাঠগড়ায় তুলে চরম শাস্তি দেওয়া হয়েছে আওয়ামি লিগপন্থী জনপ্রতিনিধি, পুলিশ অফিসার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পদস্থ কর্তাদেরও। কীভাবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন চলছে, কীভাবে একের পর এক সরকারি অফিসার বা জনপ্রতিনিধির ওপর শাস্তির খাঁড়া নেমে আসছে, তা নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ চতুর্থ পর্ব।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশের (Bangladesh Crisis) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়ন ও সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যায়। চট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিগত দিনে হিন্দুদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে সেনার বিরুদ্ধেও। চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে গিয়ে বাংলাদেশ সেনা সেই দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। এর আগে চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালিয়ে অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছিল সেনার বিরুদ্ধে।
ইসকন নিয়ে এক মুসলিম ব্যবসায়ীর সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media) পোস্ট ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে বাংলাদেশের (Bangladesh) বন্দরনগর চট্টগ্রাম (Chattogram)! প্রতিবাদে সরব হন সেখানকার সংখ্যালঘুরা। এই বিক্ষোভ কড়া হাতে দমন করার নামে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ এলাকায় গিয়ে সংখ্যালঘুদের মারধর করে বলে অভিযোগ। ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পদ্মাপারের সংখ্যালঘুরা। ওই সময়ে অন্তত ৪৯ জন ইসকন অনুসারীকে গ্রেফতার করা হয় এবং ৬০০ জনের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়। চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে হিন্দু ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেশি। অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে সেখানে সেনা নামিয়ে চলে অকথ্য অত্যচার। লুট করা হয় বহু হিন্দুর দোকান। বাধা দিতে গেলেই নিয়ে যাওয়া হয় হাজতে।
এছাড়া, ফরিদপুরে হৃদয় পাল নামে এক ব্যক্তির লিঞ্চিংয়ের ভিডিও প্রকাশিত হয়, যেখানে বাংলাদেশি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণ করতে দেখা গিয়েছে। এসব ঘটনা নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের মনোভাব স্পষ্ট করে বলেই অনেকের অভিযোগ। যা গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে (Bangladesh Crisis) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুর্বলতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশে (Bangladesh Crisis) এক অতি উত্তেজিত বর্ণবাদী মানসিকতা তৈরি হয়েছে, যেখানে কোনও পার্থক্য ছাড়াই সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি একক "বাংলাদেশি পরিচয়" প্রচারের কথা বলা হচ্ছে। যদিও এটি প্রাথমিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখালেও, এর ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে গিয়েছে, কারণ তারা মনে করে যে, তাদের ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয় সংখ্যাগরিষ্ঠদের নির্ধারিত কাঠামোর মধ্যে মুছে যাবে। একটি একক পরিচয় চাপিয়ে দেওয়ার ফলে দেশটির সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য ব্যহত হতে পারে বলেও মত অনেকের।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশের (Bangladesh Crisis) বিভিন্ন অঞ্চলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, যা প্রায় সপ্তাহব্যাপী চলতে থাকে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে যে ৫ অগাস্ট থেকে ২০ অগাস্টের মধ্যে বাংলাদেশের ৫২টি জেলা সহিংসতার শিকার হয়েছে। অন্য একটি হিন্দু সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট জানায়, হাসিনার পদত্যাগের পর ৪৮টি জেলায় ধর্মীয় সহিংসতা বেড়ে যায়। শুধু সংখ্যালঘুরাই নয়, বাংলাদেশে জনপ্রিয় পত্রিকা প্রথম অলো জানিয়েছে যে ৫ অগাস্ট থেকে ২০ অগাস্টের মধ্যে ৪৯টি জেলা সহিংসতার শিকার হয়েছে এবং ১,০৬৮টি হামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, একই সময়ে ২,০১০টি ধর্মীয় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এই সহিংসতার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়। তাদের বাড়ি, মন্দির এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ চালানো হয়েছিল। এই ঘটনা একটি সুসংগঠিত ও পরিকল্পিত সহিংসতার ধারাকে প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন: সংখ্যালঘুদের কারও পদোন্নতি আটকে, কাউকে কমিশনে না রেখে সমানে চলেছে দমন-পীড়ন!
উত্তপ্ত বাংলাদেশে (Bangladesh Crisis) এখনও প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন হিন্দুরা। নির্বিচারে চলছে ধরপাকড়, অত্যাচার। জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর। তাতে সেনার একাংশের সক্রিয় মদত রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সেনার একাংশ যেভাবে ভারত বিরোধিতা করছে তাতে তাদের মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে।
(ক্রমশ...অনিবার্য কারণবশত পঞ্চম পর্ব সোমবার নয়, প্রকাশিত হবে মঙ্গলবার)
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।