PM Modi: ‘‘বাংলাদেশে গণহত্যার হাত থেকে চাকমাদের বাঁচান’’, মোদির কাছে আবেদন উত্তর-পূর্বের জনজাতিদের
পার্বত্য বাংলাদেশে অমুসলিমদের উপর অত্যাচার। সংগৃহীত চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে সেনা এবং মুসলিম কট্টরপন্থীরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাকমাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। গণহত্যার শিকার হচ্ছে পার্বত্য বাংলাদেশের আদি বাসিন্দারা। এমনই অভিযোগ তুলল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জনজাতি সংগঠন। অবিলম্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়েছে তারা। শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই স্মারকলিপি পাঠানো হয়। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ভায়াবহ। সেনাবাহিনীর অত্যাচারের প্রতিবাদে সেখানে শনিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন। সেনার গুলিতে বৃহস্পতিবার সেখানে তিনজন পাহাড়িয়াবাসী মারা যায়। তারপরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।
সূত্রের খবর, বুধবার খাগড়াছড়ি নোয়াপাড়া এলাকায় মহম্মদ মামুন নামে এক দুষ্কৃতী মোটরসাইকেল চুরি করে পালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। আহত অবস্থায় ধরা পড়ার পরে তাঁকে মারধর করা হয়। পরে তিনি হাসপাতালে মারা যান। স্থানীয় দিঘিনালা সরকারি কলেজের বিএনপি এবং জামাতে ইসলামির সমর্থক ছাত্ররা অভিযোগ তোলে মানুনকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। এরই জেরে ঝামেলা শুরু হয়। অভিযোগ, কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে গিয়ে খাগড়াছড়ি শহরের বোয়ালপাড়া বাজার, লারমা স্কোয়ারের মতো এলাকায় অমুসলিম আদিবাসীদের বাড়িঘর, দোকান, ধর্মস্থান ভেঙে আগুন ধরানো হয়। পিটিয়ে মারা হয় কয়েক জনকে।
আদিবাসীদের অভিযোগ, হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই বাইরে থেকে এসে বসতি গড়া লোকেরা চাকমাদের উপরে হামলা, জমি দখল এবং দেশছাড়ার জন্য হুমকি দিতে শুরু করেছে। হামলাকারীদের প্রত্যক্ষ মদত দিচ্ছে বাংলাদেশ সেনা। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা, খাগড়াছড়ি, বান্দারবন এবং রাঙামাটিতে আদি বাসিন্দা চাকমা এবং অন্যান্য জনজাতি গোষ্ঠীর উপর গত ৭২ ঘণ্টা ঘরে ধারাবাহিক হামলা চলছে। খুন হয়েছেন অন্তত ১০ জন অমুসলিম। পোড়ানো হয়েছে চাকমা, কুকি, ব্রু এবং অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের হাজারেরও বেশি বাড়িঘর, ধর্মস্থান, দোকান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সেনা, বিজিবি এবং র্যাব বাহিনীও বিচ্ছিন্নতাবাদী দমনের অছিলায় অমুসলিমদের উপর নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। চট্টগ্রামের সমতল এলাকাতেও বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিস্টানদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি সামলাতে সেনা মোতায়েন করা হলেও তাতে অমুসলিম জনজাতিদের মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। পরিকল্পিত ভাবে অন্তর্বর্তী সরকার হিংসা ছড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনবিন্যাসের চরিত্র বদলে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ।
শুক্রবার চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি-সহ বিভিন্ন এলাকার সমাবেশ করে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের ডাক দিয়েছে পাহাড়ে বসবাসকারী চাকমা-সহ বিভিন্ন অমুসলিম জনজাতি সংগঠনগুলি। তাঁদের ‘আদিবাসী’ তকমা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সক্রিয় হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ‘মার্চ ফর আইডেন্টিটি’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে পাহাড়ি অমুসলিমরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকার সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। কিন্তু তাতে সমস্যা বাড়বে বলেই মত সাধারণ বাসিন্দাদের।
আশির দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনবিন্যাস বদলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে প্রায় ৫০ হাজার সমতলের মানুষকে পাহাড়ে বসতি গড়ে দেওয়া হয়। ‘সেটলার’ নামে পরিচিত সেই জনগোষ্ঠী আজ সংখ্যায় বহুগুণ বেড়ে চাকমা ও অন্য জনজাতিদের অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। আর সেখান থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত। নতুন সরকারের আমলে তাঁদের ‘আদিবাসী’ পরিচয়ও মুছে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে চাকমা সংগঠনগুলির অভিযোগ। কয়েকশো বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর বাস। ভারত এবং মায়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের অঞ্চলগুলি নিয়ে কুকি স্বশাসিত অঞ্চলের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরেই লড়াই চালাচ্ছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। সম্প্রতি কুকি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনের নামে নতুন করে অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনা এবং র্যাব। জঙ্গি দমন অভিযানের নামে সাধারণ কুকিদের উপর অত্যাচারের অভিযোগও উঠেছে।
আরও পড়ুন: কীভাবে হিজবুল্লার বিরুদ্ধে পেজার অপারেশনের ছক কষেছিল মোসাদ?
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে অমুসলিমদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে ত্রিপুরার শিল্প-বাণিজ্য ও কারামন্ত্রী সান্তনা চাকমা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদির হস্তক্ষেপ দাবি করে জানিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবনে হিংসায় মোট ৪০ জন জনজাতি বা পাহাড়ের আদি বাসিন্দা নিহত হয়েছেন। ১০০ বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, ভারতে জনজাতিদের একাধিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপ দাবি করেছে। চাকমা ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সুহাস চাকমা, ভারতের জাতীয় তফশিলি উপজাতি কমিশনের সদস্য নিরুপম চাকমা এবং মিজোরামের বিধায়ক রশিক মোহন চাকমা প্রধানমমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে চট্টগ্রামে চাকমাদের উপর মুসলিমদের নির্যাতনের প্রতিবাদে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।