Minority Police Officers: কীভাবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন চলছে, তা নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন-অশান্ত বাংলাদেশ: টার্গেট হিন্দু। আজ দ্বিতীয় পর্ব।
বাংলাদেশ পুলিশেও নিশানায় সংখ্যালঘুরা। ফাইল ছবি
হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার পর থেকেই অশান্ত বাংলাদেশ। মন্দির ভাঙচুর, আগুন, মারধর, খুন-সবেতেই টার্গেট সংখ্যালঘু হিন্দু। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ইউনূসের কঙ্কালসার চেহারাটা এখন গোটা বিশ্বের কাছে পরিষ্কার। ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর গোটা বিশ্ব জেনে গিয়েছে, কী ভয়াবহ এবং আতঙ্কের পরিবেশ সেখানে। শুধু কি সাধারণ নিরীহ হিন্দু বা হিন্দুদের মন্দির? না, বেছে বেছে কাঠগড়ায় তুলে চরম শাস্তি দেওয়া হয়েছে আওয়ামি লিগপন্থী জনপ্রতিনিধি, পুলিশ অফিসার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পদস্থ কর্তাদেরও। কীভাবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন চলছে, কীভাবে একের পর এক সরকারি অফিসার বা জনপ্রতিনিধির ওপর শাস্তির খাঁড়া নেমে আসছে, তা নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ দ্বিতীয় পর্ব।
অশান্ত বাংলাদেশ: টার্গেট হিন্দু-২
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে সরকার (Bangladesh Crisis) পরিবর্তনের পর কীভাবে মন্ত্রী এবং জনপ্রতিনিধিদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, তার বিশদ বিবরণ আমরা প্রথম পর্বে দিয়েছি। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়, এই পর্বে আমরা দেখব, কীভাবে সংখ্যালঘু পুলিশ কর্মকর্তাদেরও করুণ পরিণতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। দুর্নীতি দমনের নামে অনেককেই আইনি নিপীড়নের মুখোমুখি হতে হয়। একের পর এক অপসারণ করা হয় সংখ্যালঘু পুলিশ অফিসারদের (Minority Police Officers)। যাদের স্বচ্ছ্বতায় কোনওভাবেই দাগ লাগানো যায়নি, তাদেরকে বলপূর্বক অবসরগ্রহণে বাধ্য করা হয়। বেশ কয়েকজন অফিসারকে বদলি করা হয়। আটকে দেওয়া হয় পদোন্নতি। বাদ যায়নি প্রশিক্ষণরত পুলিশ ক্যাডেটরাও।
গত ৩০ অগাস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতে বিপ্লবকুমার সরকার নামে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। ঝিনাইদহে একদা সহকারী পুলিশ সুপার গোপীনাথ কঞ্জিলাল-সহ আরও একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০১৪ ও ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম ছাত্রদল নেতা ইসলাম ও ছাত্রশিবির নেতা ইবনুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। একই মামলায় সংখ্যালঘু পুলিশ কর্মকর্তা ইজ্জাল মিত্রের নামও আনা হয়েছে। এর পাশাপাশি, ১৯ জুলাই অনুষ্ঠিত অ্যান্টি-কোটার আন্দোলনের সময় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শ্যামকুমার পালকে এক ফল বিক্রেতা মিরাজুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডে জড়িত হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। নাজ খাতুন নামে এক মহিলা ২০১৬ সালে তার স্বামীর অপহরণের ঘটনায় সাতজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এই অভিযোগে আব-৫ রেলওয়ে কলোনি ক্যাম্পের পুলিশ ইন্সপেক্টর (এসআই) দেবব্রত মজুমদারকে আটক করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাইদের হত্যাকাণ্ডেও মূল অভিযুক্তদের মধ্যে একজন ছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত। কনস্টেবল সুজনচন্দ্র রায়কে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই দুর্নীতি দমনের নামে একাধিক সংখ্যালঘু পুলিশ অফিসারকে নিশানা করা হয়। বিশেষ করে যারা পূর্বের হাসিনা সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত ছিলেন। ঢাকার দৈনিকেই প্রকাশিত হয় পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা অভিযুক্ত হচ্ছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত। এই তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ ব্যুরোর (পিবিপি) একদা প্রধান বানজ কুমার মজুমদার, অতিরিক্ত আইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, এবং ডিআইজি বিপ্লবকুমার তালুকদার ও জয়দেবকুমার ভদ্রা সহ আরও অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
বেশি সংখ্যক সংখ্যালঘু পুলিশ কর্মকর্তাদের বলপ্রয়োগ করে অবসরগ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়। এই তালিকায় রয়েছেন আইজি কৃষ্ণপদ রায়, আইজি দেবদাস ভট্টাচার্য। এই অবসরগ্রহণের ঘটনা একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টার অংশ, যার মাধ্যমে সংখ্যালঘু কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে পক্ষপাতমূলকভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
অস্থায়ী সরকার পুলিশের প্রশাসনে ব্যাপক স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এখানেও শিকার হন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কর্মকর্তারা। অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে কম প্রভাবশালী পদে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ফলে তাদের কার্যকরী ভূমিকা হ্রাস পেয়েছে। স্থানান্তরিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (DIG) বিপ্লববিজয় তালুকদার এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (DMP) যুগ্ম কমিশনার সুদীপকুমার চক্রবর্তী। ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার লিটনকুমার সাহা, ডিএমপি ঢাকা জেলার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মনাসকুমার পোদ্দার, ঢাকার জামনা পুলিশ স্টেশন ইনচার্জ সিপি কল্পাল বারুয়া, শাহজাহানপুর পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ সিএস উজ্জ্বলকুমার সাহা, মোহাম্মদপুর পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ সিপি দীপকচন্দ্র সাহা, এবং সবুজবাগ পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ সিপি প্রবলয়কুমার সাহা।
অস্থায়ী সরকারের অধীনে পুলিশের পদোন্নতি প্রক্রিয়া আরও একবার সংখ্যালঘু কর্মকর্তাদের প্রতি বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেছে। পুলিশ সুপার এবং ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল পদে অনেকেই পদোন্নতি পেলেও, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে শুধুমাত্র দুজন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। প্রাত্যুশকুমার মজুমদারকে পুলিশ সুপার এবং প্রবলয় চিশিমকে ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়। এই বৈষম্যমূলক পদোন্নতির ঘটনা পুলিশ বাহিনীতে সংখ্যালঘুদের প্রভাব কমানোর জন্য একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ হিসেবে অনেকে দেখছেন।
অস্থায়ী সরকার সম্প্রতি সারদা পুলিশ অ্যাকাডেমির ৪০তম ক্যাডেট ব্যাচের ২৫২ জন ট্রেইনি সাব-ইন্সপেক্টরকে (এসআই) এক মাসের মধ্যে তাদের প্রশিক্ষণ শেষ করার আগেই বরখাস্ত করেছে। সরকারি ভাবে, এসব বরখাস্তকে শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য দেখানো হলেও, এর পিছনে চক্রান্ত রয়েছে বলে দাবি আওয়ামি লিগের। এর মধ্যে ৯০ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
এ তো গেল পুলিশের কথা। বাদ যাননি প্রশাসনের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তারাও। তাঁদের ওপরও নানা ভাবে আইনি পথে ঘুরিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। পরের তৃতীয় পর্বে তা নিয়েই আমরা বিশদে আলোচলা করব। (......ক্রমশ )
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।