Targeting Minority: কীভাবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন চলছে, তা নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন-অশান্ত বাংলাদেশ: টার্গেট হিন্দু। আজ সপ্তম পর্ব।
ঢাকার তাঁতিবাজারে দুর্গাপুজোতে হামলার সংগৃহীত চিত্র।
হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার পর থেকেই অশান্ত বাংলাদেশ। মন্দির ভাঙচুর, আগুন, মারধর, খুন-সবেতেই টার্গেট সংখ্যালঘু হিন্দু। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ইউনূসের কঙ্কালসার চেহারাটা এখন গোটা বিশ্বের কাছে পরিষ্কার। ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর গোটা বিশ্ব জেনে গিয়েছে, কী ভয়াবহ এবং আতঙ্কের পরিবেশ সেখানে। শুধু কি সাধারণ নিরীহ হিন্দু বা হিন্দুদের মন্দির? না, বেছে বেছে কাঠগড়ায় তুলে চরম শাস্তি দেওয়া হয়েছে আওয়ামি লিগপন্থী জনপ্রতিনিধি, পুলিশ অফিসার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পদস্থ কর্তাদেরও। কীভাবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন চলছে, কীভাবে একের পর এক সরকারি অফিসার বা জনপ্রতিনিধির ওপর শাস্তির খাঁড়া নেমে আসছে, তা নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ সপ্তম পর্ব।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ২০২৪ সালটা বাংলাদেশের (Bangladesh Crisis) হিন্দুদের জন্য ছিল অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের সময়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে পূর্ব পাকিস্তান-পশ্চিম পাকিস্তান দুই ইসলাম প্রধান দেশই হিন্দু স্বার্থকে (Targeting Minority) সুরক্ষিত রাখেনি। শত্রু সম্পত্তি আইন থেকে শুরু করে গায়ের জোরে হিন্দু নিধন যজ্ঞ চালানো হয়েছে। ধর্মের নামে দেশ ভাগের চূড়ান্ত মাশুল দিতে হয়েছিল একমাত্র পূর্ববঙ্গের হিন্দু বাঙালিদের। ওদেশে সরকার ব্যবস্থায় যেই থাকুক না কেন, স্বাধীন জয় বাংলায় হিন্দুদের ভোট কোনও সময়েই ভোটব্যাঙ্কের রাজনৈতিক চাবিকাঠিতে রূপান্তরিত হয়নি। উল্টো দিকে স্বাধীন ভারতে মুসলমানরা বিশেষ 'তোষণ নীতি' নিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। সংখ্যালঘু শব্দটা উভয় দেশের জন্য আলাদা আলদা মানে। গত ৫ অগাস্ট হাসিনাকে বিতাড়িত করার পর থেকেই হিন্দু মন্দির, মূর্তি, বাড়ি-ঘর ধ্বংস-সহ এককথায় সনাতনীদের জনজীবন নরকে পরিণত করা হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির কট্টর মুসলমানদের দিকে।
হিন্দু বাঙালির (Targeting Minority) বড় পুজো হল দুর্গাপুজো। অপর দিকে ইসলামে মূর্তি পুজো হারাম। বাংলাদেশে (Bangladesh Crisis) তাই এক মৌলানা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, “মূর্তি আমি গড়তে আসি নাই, মূর্তি ভাঙতে এসেছি, আমি না পারলে আমার ছেলে ভাঙবে, ছেলে না পারলে তার ছেলে ভাঙবে, ইনশাল্লাহ এক দিন ভাঙবই।” এই অভিপ্রায়কে বাস্তবায়ন করছে মহম্মদ ইউনূস প্রশাসন, এমনটাই বলছেন ভুক্তভোগীরা। চট্টগ্রামে দুর্গাপুজার মন্দিরে জামাত শিবিরের নেতারা জোর করে ঢুকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের গান করেন। স্পষ্ট উদ্দেশ্য, আগামী দিনে পুজো তথা মূর্তি পুজো বন্ধ করে সবাইকে মসজিদে নামাজই পড়তে হবে। 'ঢাকা ট্রাইবুন'-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট জানিয়েছে গত ৫ অগাস্ট থেকে ২০ অগাস্টের মধ্যে ৪৩টি মন্দির ভাঙা হয়েছে। আবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে মোট ৬৯টি মন্দির ভাঙা হয়েছে। একই ভাবে সংবাদ মাধ্যম ‘প্রথম আলো’ এই সময়ে ২২টি মন্দির ভাঙার কথা জানিয়েছে।
দুর্গাপুজোর আগে থেকেই পুজো করতে গেলে ৫-৬ লাখ করে পুজো কমিটিগুলিকে চাঁদা দেওয়ার ফতোয়া জারি করে জামাত এবং বিএনপির নেতার। একই ভাবে ঢাকার (Bangladesh Crisis) উত্তরাতে দুর্গাপুজো করতে দেওয়া হবে না বলে বিশাল মিছিল বের করেছিল স্থানীয় মৌলবিরা। মিছিলে স্পষ্ট বলা হয়, পুজো করলে উদ্যোক্তাদের বাড়িতে হামলা করা হবে। পুজোর আগেই চট্টগ্রাম, রংপুর, নেত্রকোনা, বরিশাল, কুমিল্লা, ঢাকা, খুলনা, বগুড়ায় প্রচুর নির্মীয়মান দুর্গামূর্তি এবং মন্দির ভেঙে দেওয়া হয়। এলাকায় এলাকায় হিন্দুরা (Targeting Minority) রাত জেগে জেহাদিদের কবল থেকে মন্দির রক্ষা করতে পাহারায় নামতে বাধ্য হন। সামাজিক মাধ্যমে এই ছবি প্রচুর দেখা গিয়েছিল। মন্দির ভাঙার অপরাধে কুঁড়িগ্রামের রাজারহাট এলাকায় আনসার বাহিনীর এক সদস্য মহম্মদ নিজামুদ্দিন নামক এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু তারপর তদন্তের গতিপ্রকৃতি আর প্রকাশ্যে আসেনি।
দুর্গাপুজোর মহাঅষ্টমীর দিনে ঢাকার তাঁতিবাজার (Bangladesh Crisis) এলাকার এক দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলে অঞ্জলি দেওয়ার সময় পেট্রোল বোমার বিস্ফোরণ ঘটনায় জেহাদিরা। পুজোকে আরও কোণঠাসা করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে ফতোয়া দেন, “মন্দিরে ঢাক, ঢোল, কাঁসর বাজানো যাবে না, এমনকী বিসর্জনে বাদ্যযন্ত্র বাজানো যাবে না।” কিশোরগঞ্জের গোপীনাথ জিউর আখড়ায় দুর্গাপুজোতে হামলা করেছিল দুষ্কৃতীরা। নেত্রকোনা, কেন্দুয়া, ফেনির পার্বতীপুর, দিনাজপুর এলাকায় দুর্গামূর্তি, কালীমূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, পীরগঞ্জ উপজেলা, শরীয়তপুর সদর সহ একাধিক জায়গায় ব্যাপক ভাবে হিন্দু (Targeting Minority) আস্থার ধর্মকেন্দ্রগুলিকে সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করে কট্টর মৌলবাদীরা। এই অত্যাচার থেকে বাদ যায়নি রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম এবং ইসকনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলিও।
সাতক্ষীরা (Bangladesh Crisis) কালীমন্দিরে দুষ্কৃতীরা চালায় ব্যাপক লুটপাট। শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী মন্দিরের মায়ের জন্য একটি সোনার গয়না দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সেই গয়নাকে চুরি করানো হয়। এখনও ইউনূস প্রশাসন তা উদ্ধার করতে ব্যর্থ। একই ভাবে লাগাতার আক্রমণ করা হয় বগুড়ার অন্যতম শক্তিপীঠ ভবানীপুর মন্দির, বরিশালের শ্যামপুর দেউরি বাড়ি সর্বজনীন দুর্গাপূজা মন্দির, রাজবাড়ির সজানকাণ্ডা জেলার মন্দিরে। পাবনায় মূর্তি ভাঙা হয়, পালপাড়া শক্তিপীঠ, বাঘেরহাটের মোল্লারকুল পাশ্চিমপাড়া দুর্গাপূজা মন্দিরের প্রতিমা ভাঙা হয়। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি মূর্তি ভাঙা হয়। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে জানা গিয়েছিল, এই সময় ফরিদপুর থেকে বাপি হাসান নামে এক ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরিতাপের কথা সেনাশাসন, অন্তর্বর্তী সরকার এবং মহম্মদ ইউনূস হিন্দু সুরক্ষা নিয়ে মুখে কুলুপ।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।