World Hindu Federation: বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা নিশ্চিহ্ন হলে কতটা প্রভাব পড়বে ভারত, তা জানালেন বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের কর্তা...
হিন্দু নির্যাতনের ছবি। বাংলাদেশ।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অশান্তি অব্যাহত বাংলাদেশে (Bangladesh Crisis)। আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে চলছে হামলা। তবে ‘সোনার বাংলা’য় ডামাডোলের বাজারে যা তামাম বিশ্বের নজর কেড়েছে, তা হল হিন্দুদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্য মাত্র ৮ শতাংশ হিন্দু। এই হিন্দুরা আবার আওয়ামি লিগের সমর্থক।
তাই দেশে সামান্যতম অশান্তি শুরু হলেই টার্গেট করা হয় হিন্দুদের (World Hindu Federation)। মারধর করে ভিটে মাটি ছাড়া করে কেড়ে নেওয়া হয় জমি-জিরেত। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সেই ট্র্যাডিশনে ভাঁটা পড়েনি। সংরক্ষণকে কেন্দ্র করে পক্ষকালের কিছু আগে যে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছে বাংলাদেশ, অগাস্টের ৭ তারিখেও তা অব্যাহত। আন্দোলনের চাপে প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। বস্তুত, তার পরেই দেশে অরাজক পরিস্থিতি উঠেছে চরমে। অবশ্য হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছিল তার আগেও। হাসিনার জমানায়ও যে বাংলাদেশি মুসলমানদের একটা অংশ ‘ভদ্রলোক’ হয়ে গিয়েছিল, তা নয় (এই অংশটাই মানুষের বাড়িঘর লুট করে। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ‘বঙ্গভবন’ থেকে লুট করে নিয়ে যায় কম্পিউটার, রাজহাঁস, ছাগল মায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর অন্তর্বাসও)। হিন্দুদের ওপর অত্যাচার তখনও হয়েছে। আর অশান্তির ঢেউ আছড়ে পড়ায় শুরু হয়েছে হিন্দুমেধ যজ্ঞ।
এই হিন্দু নিধন যজ্ঞের প্রতিবাদ করেছে ইজরায়েল। বিক্ষিপ্তভাবে হলেও প্রতিবাদ করছে হাতে গোণা কয়েকটি সংগঠনও। (আশ্চর্যজনকভাবে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবাংলার বুদ্ধিজীবীরা।) তার পরেও চলছে বাংলাদেশকে হিন্দুহীন করার উদগ্র চেষ্টা। বাংলাদেশ হিন্দুহীন হলে আদতে বিপদে পড়বে ভারতই। অন্তত এমনই মনে করেন ‘ওয়ার্ল্ড হিন্দু ফেডারেশনে’র সাধারণ সম্পাদক দীপন মিত্র। সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থা দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে।” তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে জনৈক হারাধন রায়, কাজল রায়, মৃণালকান্তি চ্যাটার্জির কথা। নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে এই তিনজনকে। আরও এক হিন্দুর দেহ উদ্ধার হয়েছে। তবে তাঁর পরিচয় জানা যায়নি।
আরও অনেক হিন্দু খুনের খবরও জানান দীপন। তিনি জানান, ৫১টি হিন্দু মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। হিন্দুদের ২৪০টি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। হিন্দুদের রক্ষা করতে বাংলাদেশ সেনা ও পুলিশ কি কিছু করছে? তিনি বলেন, “বাংলাদশে হিন্দু রয়েছেন প্রায় আড়াই কোটি। তাঁরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।” দীপন বলেন (Bangladesh Crisis), “শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার সময় সেনাপ্রধান বলেছিলেন যে তিনি দায়িত্ব নেবেন। এবং এখানে শান্তি বজায় রাখবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও পুলিশ বা সেনাবাহিনী হিন্দুদের সমর্থন করছে না। আমরা হিন্দুরা এখনও আক্রমণের শিকার হচ্ছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমরা সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশের বাহিনীর কাছ থেকে কোনও সাহায্য পাইনি।” তিনি বলেন, “কয়েকটি মিডিয়া আউটলেট ছাড়া তাদের বেশিরভাগই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে কভার করছে না। অনেক পরিবার এও ভয় পাচ্ছে যে, তারা যদি হিন্দুদের ওপর হামলার খবর পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানায় তাহলে তাদের ওপর হামলা হবে।” মিডিয়া কেন খবর চেপে যাচ্ছে, তারও ব্যাখ্যা দেন দীপন (World Hindu Federation)। বলেন, “এই মুহূর্তে যদি মিডিয়া গ্রুপগুলি হিন্দুদের ওপর হামলা ও হিন্দু সম্পত্তি ও মন্দির ভাঙচুরের সঠিক সংখ্যা দেখায়, তবে তাদের চাঁদমারি করা হবে।” বাংলাদেশি হিন্দুদের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে, তা যে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে, তা নয় বলেও দাবি করেন ওয়ার্ল্ড হিন্দু ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন: অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ, ভারতের উদ্বেগের একাধিক কারণ
তিনি বলেন, “বাংলাদেশি উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো ছাড়াও সে দেশে অশান্তির নেপথ্যে রয়েছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের হাত। তাই পরিস্থিতি এখনই স্বাভাবিক হবে না। কবে হবে, তাও বলা মুশকিল।” দীপন বলেন, “আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ করছি এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে। কিন্তু এখনও ভারত সরকারের তরফে কোনও সাহায্য আমরা পাইনি।” তিনি বলেন, “আমরা বিশেষত হিন্দু সংখ্যালঘুরা ভারত সরকারের কাছে সাহায্যে আশাও করেছি। আমাদের রক্ষা করতে পদক্ষেপ করা হোক বলে আমরা তাদের কাছে আবেদনও করেছি।”
ভারতের এক পড়শি দেশ হিন্দুশূন্য হতে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। তাই বাংলাদেশও হিন্দুহীন হলে, আদতে ক্ষতি ভারতেরই, মনে করেন দীপন। বলেন, “আফগানিস্তান সম্পূর্ণ হিন্দু মুক্ত হচ্ছে। পাকিস্তানে মাত্র কয়েক লাখ হিন্দু অবশিষ্ট আছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও আড়াই কোটি হিন্দু রয়েছে। এই অবস্থায় ভারত কোনও উদ্যোগ না নিলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর বাংলাদেশ সম্পূর্ণ হিন্দুমুক্ত হবে। আর তখন বাংলাদেশ হিন্দুমুক্ত ও ইসলামিক উগ্রপন্থীদের দেশে পরিণত হলে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত। এবং আরও বেশি করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে।” তিনি বলেন, “আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি হিন্দু রয়েছে বাংলাদেশে। সেই হিন্দুও যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে ভারতের সামনে অপেক্ষা করছে বড় বিপদ।”
বাংলাদেশে মন্দির বাঁচাতে মুসলমানরা মানবশৃঙ্খল তৈরি করছে বলে যে খবর দেখানো হচ্ছে কিংবা ভাইরাল হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে দীপন বলেন, “এটা ভয়ঙ্কর।” তাঁর মতে, এভাবে কেবল হিন্দুদের ওপর আক্রমণকে ছোট করা হচ্ছে না, বিভ্রান্তির সৃষ্টিও করা হচ্ছে। বাম-উদারপন্থীদেরও নিশানা করেছেন দীপন। বলেন, “বিশ্বে যখন এরকম কোনও ঘটনা ঘটে, তখন বামপন্থী দল ও তাদের সমর্থকরা চিৎকার করে কাঁদে। কিন্তু এখানে প্রতিবেশী বাংলাদেশে যেখানে হিন্দুরা নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছেন, তখন এই মানুষগুলোই হয় নীরবতা অবলম্বন করছেন, নয়তো ঘটনাটিকে ছোট করে দেখছেন।” তিনি বলেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক যে ভারতে বাম-উদারপন্থীরা বাংলাদেশে ঘটে চলা হিন্দু-বিরোধী হিংসাকে ছোট করে দেখছে। মুসলমানরা মানববন্ধন গঠন করছেন মন্দির বাঁচাতে – এসব মিথ্যা দাবি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। বামপন্থী এবং ইসলামপন্থী সহানুভূতিশীলরা মনুসলমানদের এই আক্রমণকে কেবল ছোট করছে না, বিশ্ব জনমতকে বিভ্রান্তও করছে।”
দীপন বলেন, পশ্চিমবঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেকড়ও ছিল বাংলাদেশে (Bangladesh Crisis)। সেই শেকড়কে তাঁরা ভুলেছেন।” তিনি বলেন, “অনেক হিন্দু বামপন্থী মুসলমানদের হাতে নিপীড়িত হওয়ার ভয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছে।” দীপন বলেন, “ইসলামপন্থীরা সব সময়ই হামলা-মামলা করে।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত হলে এখানে বামপন্থী ও তাদের মতাদর্শ থাকবে না।” তাঁর আক্ষেপ, “প্যালেস্তাইন ও মুসলমানদের জন্য সবাই আছে, সবাই চিৎকার করছে। কিন্তু হিন্দুদের পাশে কেউ নেই।”
এদিকে, ৮ অগাস্ট, বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন মহম্মদ ইউনূস। তিনি সবাইকে শান্তি বজায় রাখতে বলেছেন। সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার বন্ধের আবেদন করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার পর বাংলাদেশে অরাজকতায় দাঁড়ি পড়ে কিনা, এখন সেটাই দেখার (Bangladesh Crisis)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।