Donald Trump: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসকনের রথযাত্রার সূচনায় বড় ভূমিকা ছিল ট্রাম্পের!...
ট্রাম্প জেতায় উদ্বেগে ইউনূস (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ব্যাপক আক্রমণের ঘটনা ঘটতে থাকে। এমন অবস্থায় প্রতিবাদ জানাতে দিকে দিকে শুরু হয় বিক্ষোভ সমাবেশ। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিপুল জনসমাগম হয়। সেই জনজোয়ার নজর কাড়ে গোটা বিশ্বের। এই দুই সমাবেশেই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল ইসকন। এরপরে ইসকনের ওপর বাংলাদেশ সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে, এমন খবর রটে যায়। জল্পনার অবশ্য বিশেষ কিছু কারণও ছিল। বাংলাদেশে বর্তমানে ইউনূস সরকারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে জামাত-বিএনপির এবং হেফাজতে-ইসসামের হাতে। সেই মৌলবাদীরা সম্প্রতি ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে। চট্টগ্রামে বিপুল জনসমাগমের পরেই এক মৌলবাদী সমাজ মাধ্যমে ইসকন (ISKCON) বিরোধী পোস্ট করে। সংস্থাকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়। যার ফলে অশান্ত হয় চট্টগ্রাম। এই ঘটনায় ৫৮২ জনকে আটক করে পুলিশ। প্রশাসনের তরফ থেকেও বলা হয়, ধৃতরা প্রত্যেকেই ইসকনের সদস্য। অনেকে বলতে থাকেন, আসলে প্রশাসন অশান্তি ছড়ানোর জন্য মৌলবাদীদের বদলে ইসকনকে দায়ী করছে মূলত দুটি কারণে- প্রথমতঃ বাংলাদেশের প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে মৌলবাদীদের হাতে এবং দ্বিতীয়তঃ সে কারণেই ইসকনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মৌলবাদীদের খুশি করতে চায় বাংলাদেশের প্রশাসন। তার পরেই যেন খেলা ঘুরতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট (Donald Trump) নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যখন তিনি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন, তখনই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন। তাই ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই উদ্বেগে রয়েছে বাংলাদেশের ইউনূস সরকার। এমন অবস্থায় ওয়াকিবহাল মনে করছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ইসকনের (ISKCON) বিরুদ্ধে কোনওরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অন্ততপক্ষে আর নিতে পারবে না।
বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনূসের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অনেকের ধারণা, ইউনূসকে বাংলাদেশে ক্ষমতার মসনেদ বসাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল ডেমোক্র্যাটরা। ২০২৪ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ইউনূস আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস জিতবেন। ইউনূস ভেবেছিলেন, ডেমোক্র্যাট রাষ্ট্রপতির অধীনে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থাকে সেক্ষেত্রে তাঁর সোনায় সোহাগা হবে। বাংলাদেশে ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর যে ধরনের নির্যাতন চলছে, সে নিয়ে মার্কিন প্রশাসন কোনও কথা বলবে না। একইসঙ্গে কট্টরপন্থী ইসলামিক মৌলবাদীদের সঙ্গে ইউনূসের যোগকেও উপেক্ষা করে চলবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাই আশা ছিল কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হবেন। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প বিপুল ভোটে জয়ী হতেই সে আশা ভেঙে যায়। বাংলাদেশে ধর্মীয়ভাবে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৩১ অক্টোবরই নিজের এক্স হ্যান্ডেলে, এর প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। ট্রাম্পের ওই পোস্টে ইউনূস ও তাঁর কট্টর মৌলবাদী ইসলামপন্থী বন্ধুরা খুবই অস্বস্তিতে পড়ে যান। নিজের পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘‘হিন্দু খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে বর্বর অত্যাচার হচ্ছে বাংলাদেশে, তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বাংলাদেশ বর্তমানে উপদ্রুত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।’’
ট্রাম্পের এমন ট্যুইটবাণ ইউনূসকে হজম করতে হয়। তিনি তখনও আশায় মগ্ন ছিলেন যে কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে বদলে গিয়েছে। ইউনূস সরকার আশঙ্কিত যে কোনও মুহূর্তে নতুন মার্কিন প্রশাসন, বাংলাদেশের হিন্দু সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় নিয়ে ফের সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। ইউনূস নিজেও জানেন, এক্ষেত্রে তাঁর ডেমোক্র্যাট বন্ধুরা কিছুই করতে পারবেন না। স্বরাজ্য পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, এক আওয়ামী লিগের নির্বাসিত নেতা দাবি করেছেন, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় ইউনূস ও তাঁর প্রশাসনকে কঠিন তদন্তের মুখোমুখি হতে হবে। কোনওভাবেই আর কট্টর ইসলামপন্থী মৌলবাদীদের প্রতি নরম হতে পারবে না ইউনূস।’’ আওয়ামী লিগের ওই নেতার আরও দাবি, ‘‘ইউনূস নিজেও জানেন যে ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা যদি হয় তবে সেখানে নজরদারি চালাতে থাকবে ট্রাম্প প্রশাসন এবং তিনি নিজেও মৌলবাদীদের খুশি করার মতো পদক্ষেপ করতে পারবেন না।’’
প্রসঙ্গত, অনেকেই বলছেন যে, ইউনূস প্রশাসন ইসকনের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসকনের প্রচুর প্রভাবশালী ভক্ত রয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছেন শিল্পপতি থেকে বিভিন্ন পেশাদাররা, যাঁরা প্রত্যেকেই রিপাবলিকানদের ঘনিষ্ঠ। এমনকী, খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসকনের সুসম্পর্ক রয়েছে। আবার বেশ কিছু প্রভাবশালী ইসকন ভক্তের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ‘‘ট্রাম্পের সঙ্গে বহু পুরনো এবং দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ইসকনের। মার্কিন মুলুকে ইসকনের রথযাত্রার সূচনার নেপথ্যে বিরাট ভূমিকা ছিল ট্রাম্পের। ইসকনের রথযাত্রার অন্যতম বড় পৃষ্ঠপোষকও ট্রাম্প।
৪৮ বছর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প জগন্নাথের রথ তৈরির জন্য মুফতে জায়গা দিয়েছিলেন। ১৯৭৬ সাল। মার্কিন মুলুকে প্রথমবার রথযাত্র উৎসবের উদ্যোগ চলছে। রথ কোথায় তৈরি করা হবে, তা নিয়ে ইসকনের কর্তারা যখন ধন্দে, তখনই প্রায় ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ট্রাম্প। জানা যায়, ইসকনের কর্তারা নিউইয়র্ক শহরের ধনী ব্যক্তিদের কাছে রথ বনানোর জন্য জায়গা চেয়ে অনুনয়-বিনয় করছেন। কেউ তাঁদের জায়গা দিচ্ছেন না। জায়গার খোঁজে তাঁরা যখন হন্যে হচ্ছেন, তখনই একদিন তাঁরা গেলেন ট্রাম্পের কাছে। সব শুনে তাঁর সেক্রেটারি বললেন, ওঁর সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ জানাতে পারেন। তবে তাতে কাজ হবে না। ইসকনের কর্তারা ট্রাম্পের সেক্রেটারির হাতেই তাঁর জন্য নিয়ে যাওয়া মহাপ্রসাদ তুলে দিয়ে এসেছিলেন। এর কয়েক দিন পরেই এসেছিল ট্রাম্পের সই করা চিঠি। তার পরেই তাঁর একটি ফার্ম হাউসে শুরু হয় রথ তৈরির কাজ। মার্কিন মুলুকে সেই প্রথম গড়ায় রথের চাকা। ফলে, আমেরিকায় এখন ট্রাম্প ক্ষমতায় চলে আসার ফলে, বাংলাদেশে ইউনূস সরকারের ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দুরভিসন্ধি হয়ত সম্ভব হবে না।’’
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।