Targeting Minority: কীভাবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন চলছে, তা নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন-অশান্ত বাংলাদেশ: টার্গেট হিন্দু। আজ পঞ্চম পর্ব।
অশান্ত বাংলাদেশে শান্তি ফেরাতে সব ধর্মের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করলেও বাস্তবে কিছু করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। ফাইল চিত্র
হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার পর থেকেই অশান্ত বাংলাদেশ। মন্দির ভাঙচুর, আগুন, মারধর, খুন-সবেতেই টার্গেট সংখ্যালঘু হিন্দু। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ইউনূসের কঙ্কালসার চেহারাটা এখন গোটা বিশ্বের কাছে পরিষ্কার। ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর গোটা বিশ্ব জেনে গিয়েছে, কী ভয়াবহ এবং আতঙ্কের পরিবেশ সেখানে। শুধু কি সাধারণ নিরীহ হিন্দু বা হিন্দুদের মন্দির? না, বেছে বেছে কাঠগড়ায় তুলে চরম শাস্তি দেওয়া হয়েছে আওয়ামি লিগপন্থী জনপ্রতিনিধি, পুলিশ অফিসার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পদস্থ কর্তাদেরও। কীভাবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন চলছে, কীভাবে একের পর এক সরকারি অফিসার বা জনপ্রতিনিধির ওপর শাস্তির খাঁড়া নেমে আসছে, তা নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ পঞ্চম পর্ব।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মুক্তিযুদ্ধের সময় অবর্ণনীয় অত্যাচার সংঘটিত হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টানদের ওপরও। ১৯৬৪ সালেই কাশ্মীরের মসজিদ থেকে পবিত্র স্মারক চুরির গুজবে সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা এবং লাখ-লাখ মানুষকে ঘরছাড়া করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে মেরুদণ্ড ধরে নিয়ে যখন ভূমিষ্ঠ হল নতুন দেশ, তখন ধর্মনির্বিশেষে সকলের সমানাধিকারের প্রত্যাশা জাগ্রত হয়েছিল মানুষের হৃদয়ে। বছরের পর বছর অনেক বিচ্যুতির শিকার হয়েছে সেই প্রত্যাশা, তবে একেবারে মরে যায়নি। কিন্তু এই মুহূর্তে বাংলাদেশের (Bangladesh Crisis) পরিস্থিতি অনেক বেশি ভয়াবহ। যার শিকার শুধু হিন্দুরা এমন নয়, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-আহমদিয়ারাও।
আহমদিয়া মুসলিম কমিউনিটি বাংলাদেশে ব্যাপক সহিংসতার শিকার হয়েছে। পঞ্চগড়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঢাকা, নীলফামারী, রাজশাহী ও শেরপুরে হামলার খবর পাওয়া গিয়েছে। বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৬ অগাস্ট এক হামলায় অন্তত ২০ জন আহমদিয়া মুসলিম আহত হয়েছে, মসজিদ ও বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে।
খ্রিস্টান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও (Bangladesh Crisis) একাধিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের মতে, নাটোর, দিনাজপুরের ইভাঞ্জেলিকাল হলিনেস চার্চ, নারায়ণগঞ্জের মাদানপুরের খ্রিস্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের কালেকশন বুথ, বরিশালের গৌরনদী, খুলনা, ময়মনসিংহের হলুয়াঘাট এবং পার্বতীপুরে একাধিক চার্চে আক্রমণ হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের মিশনে মাদার মেরির মূর্তিও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
২০২৪ সালের ৬ অগাস্ট চট্টগ্রামের মাশদিয়া গ্রামে বৌদ্ধ শ্মশানজমি দখল করার চেষ্টা করা হয়। পাহারতালি মহামুনি বৌদ্ধ গ্রামে হামলা চালানো হয়। আদিবাসী জনগণের ওপরও ব্যাপক অত্যাচার চালানো হয়েছে। দিনাজপুর, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ১৮টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, চুরি করা হয়েছে সম্পদ। চট্টগ্রামের দিঘিনালা এলাকায় সংঘর্ষে এক যুবক-সহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৬৪ জন আহত হয়েছে। দিঘিনালায় পাহাড়ি উপজাতিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা জাতিগত সহিংসতার গভীরতা ও ব্যাপকতাকে প্রতিফলিত করে।
এই ঢেউ, যেটি হিন্দু, আহমদিয়া, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং আদিবাসী জনগণের প্রতি আক্রমণসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করেছে, বাংলাদেশে (Bangladesh Crisis) একটি ধারাবাহিক বৈষম্য এবং সহিংসতার চিত্র তুলে ধরেছে। বাড়িঘর, উপাসনালয় এবং সাংস্কৃতিক প্রতীকগুলিকে ধ্বংস করা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি এবং নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করেছে, যা দেশের ধর্মীয় বহুত্ববাদ ও মানবাধিকার প্রতিশ্রুতির প্রতি উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। হাসিনা সরকারের পতনের সময় থেকেই লাগাতার হিংসা ও আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে তাঁদের। খুন, ধর্ষণ, লুট-বাদ যাচ্ছে না কিছুই! এমনটাই দাবি 'বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ'-এর। নিজেদের দাবি ও অভিযোগের স্বপক্ষে রীতিমতো পরিসংখ্যান পেশ করেছে তারা। খুলনা জেলায় সবথেকে বেশি হিংসার শিকার হয়েছেন সংখ্য়ালঘুরা। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলাকালীন ধর্ষিতা হয়েছেন অসংখ্য সংখ্যালঘু মহিলা। আক্রান্তদের মধ্যে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সের সংখ্যালঘু বাংলাদেশিরাই রয়েছেন। সরাসরি শিকার না হলেও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন আরও অন্তত ২ কোটি সংখ্যালঘু বাংলাদেশি।
আরও পড়ুন: জল্পনার অবসান! বাংলাদেশ নির্বাচন কবে, দেশবাসীকে জানিয়ে দিলেন ইউনূস
রাজনৈতিক পালাবদলের পর প্রথম দু’সপ্তাহেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ চলছিল। এখন তার প্রাবল্য আরও বেড়েছে। উল্লেখ্য, প্রতিটি আক্রমণের ক্ষেত্রেই অছিলা দেওয়া হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক অবস্থানের। যেন আওয়ামি লিগকে সমর্থন করলেই কাউকে খুন করে ফেলা যায়। তবে, এই যুক্তিও খাটেনি। বাংলাদেশ (Bangladesh Crisis) হিন্দু মহাজোট অনুযায়ী, ১৩২টি হিন্দু পরিবার যারা রাজনীতির সঙ্গে কোনওভাবেই যুক্ত ছিল না, তাদেরও হিংসার শিকার হতে হয়েছে। যা ছিল মূলত সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ কিংবা সংখ্যালঘুদের মালিকানাধীন সম্পত্তি দখল করার প্রচেষ্টা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।