এই ঝড় নিম্নচাপের কেন্দ্রের চারপাশে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে সঞ্চালিত হয়।
গরম জল বরফে পরিণত। বিপর্যস্ত জনজীবন।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আমেরিকার টেক্সাস থেকে কানাডার কিউবেক পর্যন্ত প্রায় ৩,২০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তুষারঝড়ের দাপট চলছে। এই শীতের মরসুমে বিদ্যুৎ ছাড়াই কাটাচ্ছে কানাডার অন্টারিও, ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে নিউফাউন্ডল্যান্ড। ‘বম্ব সাইক্লোনের’ কবলে পড়েছেন আমেরিকায় অন্তত ২০ কোটি বাসিন্দা। বড়দিনের আগে থেকেই ‘বম্ব সাইক্লোনের’ দাপটে জবুথবু মার্কিন মুলুর। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে কানাডাতেও। জো বাইডেনের দেশে এই তুষার ঝড়ের ফলে অন্তত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলছে প্রবল তুষারপাতও। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। বহু জায়গায় তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে হিমাঙ্ক থেকে ৪৮ ডিগ্রি নীচে।
ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়ই বম্ব সাইক্লোন। বম্ব সাইক্লোন হল এমন একটি সাইক্লোন যেখানে ভূপৃষ্ঠের সংলগ্ন বাতাস তাড়াতাড়ি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। যার ফলে ব্যারোমেট্রিক চাপ কমতে শুরু করে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে কমপক্ষে ২৪ মিলিবারের ব্যারোমেট্রিক চাপে আকস্মিক হ্রাস ঘটায়। বায়ু এরপর কুণ্ডলীকৃত হয়ে ঝড়ের রূপে ঘূর্ণি তৈরি করে। ঝড়ের কেন্দ্রভাগে বায়ুর চাপ কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টার জন্য প্রতি ঘণ্টায় ১ মিলিবার হারে হ্রাস পেলে তাকে ‘বম্ব সাইক্লোন’ বলা যায়। সাধারণত স্বাভাবিক অবস্থায় বায়ুর চাপ প্রায় ১,০১০ মিলিবার থাকে। তবে আমেরিকা জুড়ে এই ঝড়ের যে দাপট চলছে, তাতে বায়ুর চাপ ১,০০৩ থেকে ৯৬৮ মিলিবার পর্যন্ত হ্রাস পাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।
এই ঝড়ে চাপের তারতম্যের সঙ্গে বোমা বিস্ফোরণের সময়ের চাপের তারতম্যকে তুলনা করে ঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে বম্ব সাইক্লোন। এছাড়া ঝড়ের শক্তি ও বোমার শক্তিকে ঘিরেও এই নামকরণ। ১৯৮০ সালের একটি গবেষণাপত্রে এই শব্দ দু’টি প্রথম বার ব্যবহার করেছিলেন আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-র আবহাওয়াবিদ ফ্রেডরিক স্যান্ডার্স এবং জন আর গ্যায়াকুম। ঘূর্ণিঝড়ের মরসুমে ঝড়ের তীব্রতা বোঝাতে তাঁরা এই নামকরণ করেছিলেন।
আরও পড়ুন: বিপর্যস্ত আমেরিকার একাংশ! ৮ ফুট বরফের স্তরে ঢাকা বহু শহর, বম্ব সাইক্লোনে মৃত ৩৪
ঘূর্ণিঝড়ের তুলনায় ‘বম্ব সাইক্লোন’ হওয়ার জন্য সমুদ্রের জলের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন ড্যানিয়েল। তবে এগুলি স্থলভাগের পাশাপাশি সমুদ্রের উপরেও দেখা দিতে পারে। মূলত শরতের শেষে এবং বসন্তের শুরুতে সবচেয়ে বেশি ‘বম্ব সাইক্লোনের’ দেখা মেলে। ওই সময় হিমশীতল আটলান্টিকের বাতাসের উপর উষ্ণ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বায়ু ঝাঁপিয়ে পড়ে এই ঝড়ের সৃষ্টি করে। সাধারণত, ঠান্ডা এবং শুষ্ক বায়ু উত্তর দিক থেকে নীচে নামে উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু গ্রীষ্মমণ্ডল থেকে উপরে উঠে আসে। এই দুই বিপরীতমুখী বাতাসের সংঘর্ষে ‘বম্ব সাইক্লোন’ তৈরি হয়। এই ঝড় নিম্নচাপের কেন্দ্রের চারপাশে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে সঞ্চালিত হয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।